× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে নমুনার অর্ধেকই শনাক্ত

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার

সিলেটে প্রতি দুইজনে একজনের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৬৬। বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট জেলার ৯১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৪৬৪ জনেরই করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত এক সপ্তাহ দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ৪০ থেকে ৪২ শতাংশের মধ্যে। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে; গত তিনদিন ধরে সিলেটের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। দুইদিনের ব্যবধানে ৮ শতাংশ রোগী বেড়েছে সিলেট জেলায়। ঈদের পর শুরু হওয়া ৮ দিনেও শনাক্তের হার কমেনি।
আর শনাক্তের সংখ্যা যতই বাড়ছে হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। তবে- সিলেট বিভাগে গড় শনাক্তের হার সিলেট জেলার চেয়ে কিছুটা কম। গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মোট ১৮৩৩ জনের মধ্যে ৮০২ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। এছাড়া মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি কিংবা নিচে অবস্থান করছে। অপর তিন জেলায়ও শনাক্তের হার নমুনা পরীক্ষার তিনজনে একজন। এদিকে- গতকাল সিলেটে সর্বোচ্চ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এসব রোগী মারা যান। মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলারই ১৪ জন। এছাড়া অপর তিনজন হচ্ছেন মৌলভীবাজারের। আর শনাক্ত ৮০২ জনের মধ্যে ৪৬৪ জন সিলেটের। সুনামগঞ্জে ১২১, হবিগঞ্জে ৫০ ও মৌলভীবাজারে ১৬৬ জন নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেট নগরের চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীর চাপ বেশি থাকার কারণ হচ্ছে জেলা কিংবা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনা চিকিৎসার উপর মানুষের আস্থা না থাকা। এ কারনে তিন জেলার রোগীরাও এসে ভিড় করছেন সিলেটে। ফলে সিলেটের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেশি। দেড় মাস ধরে সিলেটে রোগী বেড়ে যাওয়ার কারনে জেলা কিংবা উপজেলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে সিলেট বিভাগের প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে হলেও করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। ৫-৬ জন করে রোগী ভর্তি রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি জেলা হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেটে যেসব রোগী হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় আসছেন তারা অধিকাংশই গ্রামের রোগী। বাড়িতে থেকে তারা অক্সিজেন নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাদের সিলেটের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এতে দেখা গেছে প্রতিদিন প্রায় ৫০ জনের মতো গ্রামের মুমূর্ষু রোগীর চাপ বাড়ছে সিলেটে। যে হারে রোগী বাড়ছে সেই হারে চিকিৎসা সাপোর্ট নেই। ফলে এতো রোগীর স্থান সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন- সিলেটের পরিস্থিতি খারাপ হোক বা না হোক চিকিৎসা ব্যবস্থা তো গড়ে তুলতে হবে। আমরা বসে নেই। চিকিৎসা পরিধি বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। অন্তত রোগীরা যাতে সেবা পান সেদিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩টি ওয়ার্ড ছাড়াও শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল, খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় যাতে আরো বেশি পরিমাণ করোনা রোগী ভর্তি করা যায় সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। গ্রামের মানুষের চাপ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সামাল দিতে পারলে সিলেটের হাসপাতালগুলোর উপর থেকে চাপ অনেকাংশে কমে যাবে বলে জানান তিনি। এদিকে- সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে রোগীর দীর্ঘ লাইন। বেশি টাকা দিয়ে আইসিইউ কিংবা অক্সিজেন সম্বলিত বেড পাচ্ছেন না করোনা আক্রান্ত রোগীরা। যতই দিন যাচ্ছে রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বেসরকারি হাসপাতাল ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতারা জানিয়েছেন- করোনার চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে হলে অনেক সাপোর্ট লাগে। রাতারাতি এসব সাপোর্ট জোগার করা সম্ভব হয় না। বেশি হারে রোগী ভর্তি করলে ডাক্তার ও নার্স পাওয়া যাবে না। বর্তমানেও ডাক্তাররা নিজের জীবন উজাড় করে দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি অক্সিজেন প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা আছে। পরিধি বাড়ালে এখন আরো বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন। কিন্তু অক্সিজেন সরবরাহ প্রতিষ্ঠান থেকে সেই সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মৃত্যুর হিসাবে গরমিল: সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের মৃত্যুর হিসাব নিয়ে গরমিল রয়ে গেছে। তবে- যেসব রোগীর উপসর্গ সংগ্রহের পর মৃত্যু বরণ করেন তাদের হিসাব পরবর্তীতে লিপিবদ্ধ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যার গরমল লক্ষ্য করা গেছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয় সিলেটে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে- বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৭৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান মতে একই সময়ে মৃত্যুর হিসাব ৬৬৭ জন। এতে দেখা গেছে মৃত্যুর হিসাবের ব্যবধান প্রায় ৭০ জনের মতো। সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেটের হিসাব ঠিকই আছে। ঢাকায় সেটি ভুল রেকর্ড হয়েছে। সেটিকে সংশোধনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর