× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্লিজ, মানুষকে মর্যাদা দিন

মত-মতান্তর

সাজেদুল হক
১ আগস্ট ২০২১, রবিবার

বস্ত্রবালিকা। বহু বছর আগে হুমায়ুন আজাদ ওদের কথা লিখে গেছেন। এরপর সমৃদ্ধির অনেক গল্প তৈরি হয়েছে। কিছু সত্য, কিছু মিথ্যা। কিন্তু এই বস্ত্রবালিকাদের জীবন সম্ভবত খুব একটা বদলায়নি। অর্থনীতির ছাত্র নই। জিডিপির প্রবৃদ্ধির রেকর্ড আর মাথাপিছু আয় বাড়ার খবর দেয়া হয় বছর বছর। এমনকি এই করোনাকালেও নাকি মাথাপিছু আয় বেড়েছে! সে যাই হোক।
এই বস্ত্রবালিকারা, পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আবারও শিরোনাম হয়েছেন। চাট্টিখানি কথাতো আর নয়।
এরআগেও করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেই এমনটা হয়েছিল। রিকশায়, সাইকেলে, পায়ে হেঁটে, নানা ভোগান্তি সহ্য করে পোশাক শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরি বাঁচাতে হবে। চাকরি না থাকলে খাবে কি? তখন নানা সমালোচনা হয়েছিল। এমনকি কেউ কেউ এই পোশাক শ্রমিকদেরও দায়ী করেছিলেন। কিন্তু মালিকরা, যারা এখন শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতারও কেন্দ্রে তাদের কিছু বলার সাধ্য আছে কার!


এবারও যখন সরকারের তরফে বলা হলো, ঈদের পর ৫ই আগস্ট পর্যন্ত পোশাক কারখানাও বন্ধ থাকবে তখনই সংশয় তৈরি হয়েছিল। আসলেই কি বন্ধ থাকবে! মন্ত্রিসভার এক সদস্য আশ্বস্ত করলেন, এবার পোশাক কারখানার মালিকরা কথা দিয়েছেন। যাক মানুষ ভাবলো এবার আর সম্ভবত শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে কাজে যোগ দিতে হবে না।
এমনিতে সময়টা খুবই কঠিন। মৃত্যুর মিছিল চলছে। গ্রাম থেকেও প্রতিনিয়ত খবর আসছে মৃত্যুর। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরছে মানুষ। করোনাকালে জুলাই মাসটা ছিল সবচেয়ে কঠিন। আগস্ট মাস ঘিরেও খুব একটা আশার খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার করণীয় নির্ধারণে মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য এবং সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে বেশ কিছু ভালো সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ করে গ্রামে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই টিকা দেয়ার উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। ওই বৈঠক থেকেই সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, শিল্প কারখানা খুলছে না। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের মেয়াদ হয় স্বল্প। করোনার সময় সবকিছুই যেন চলছে প্রজ্ঞাপনে। শুক্রবার দিনের শেষে খবর পাওয়া যায়, পহেলা আগস্ট থেকে পোশাক কারখানা খোলা। বাস্তব অর্থে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সময় দেয়া হয় একদিন। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধই থাকে। অন্তত পোশাক শ্রমিকদের বহন করে বাস চলবে এমন সিদ্ধান্তও আসেনি। আশঙ্কা তৈরি হয় আবার সেই পায়ে হেঁটে, স্বাস্থ্যবিধি ছুটি দিয়ে শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হবেন। হয়েছে তাই। গতকালের ভোগান্তির খবর দেখেছেন সবাই। রাতে অবশ্য জানানো হয়েছে, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিহন চলবে।
আগেই বলেছি, কিতাবে যাই লেখা থাকুন না কেন জীবন ও জীবিকার সংকট তীব্র। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় শিল্পকারখানা বন্ধ করে রাখতে পারবে এমনটাও হয়তো নয়। পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্তেও যে কারণে খুব বেশি বিরোধিতা নেই। কিন্তু প্রশ্ন, হলো এই শ্রমিকদের ফেরার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত সময় কেন দেওয়া হলো না? এর একটি প্রধান কারণ সম্ভবত, এই শ্রমিকরা আমাদের স্যারদের, মালিকদের চোখে খুব একটা মর্যাদার আসনে নেই। তাদের জীবন যেন একেবারেই মূল্যহীন। অথচ যে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কথা বলা হয় তার অন্যতম প্রধান নায়ক তারা। সেটা যদিওবা নাও হতেন, তারা কি মর্যাদার দাবিদার নন। সমমর্যাদা আর সমঅধিকারের জন্যই কি মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। প্লিজ, শ্রমিকদের, সব মানুষদের মর্যাদা দিন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর