× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৮০ লাখ টিকা চায় বিজিএমইএ

শেষের পাতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২ আগস্ট ২০২১, সোমবার

চলমান মহামারি করোনার বিধিনিষেধের মাঝে খোলা রাখা হয়েছে তৈরি পোশাক কারখানা। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির এই সময়ে ঝুঁঁকি নিয়েই কাজ করছেন সম্মুখসারির অর্থনৈতিক যোদ্ধা পোশাক শ্রমিকরা। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রমিকদের টিকার জন্য ৮০ লাখ ডোজ চেয়েছে তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। এদিকে দেশের পোশাক রপ্তানির বড় দুই বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে পোশাক শ্রমিকদের জন্য টিকা এবং অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, পোশাক শিল্পের শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জরুরি ভিত্তিতে করোনার টিকা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিদেশিদের জরুরি ভিত্তিতে করোনার টিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৩০ হাজার ডোজ দেয়া সম্পূর্ণ হয়েছে বলে বিজিএমইএ থেকে জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের ফলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী তৈরি পোশাক শিল্প এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে।
এ শিল্প খাতে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। এ শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারীরাই জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে কারখানায় কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন কারখানায় ও আন্তর্জাতিকমানের অনেক ক্রেতার বিদেশি প্রতিনিধি বৈধভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা রয়েছে। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে কারখানা চালু রেখেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের এবং বিদেশিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এজন্য তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে কর্মরত বিদেশিদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে করোনার টিকা বরাদ্দের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মরত বিদেশিদের টিকার আওতায় আনার জন্য তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে পোশাক শ্রমিকদের জন্য টিকা এবং অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছে বিজিএমইএ। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এবং ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে পাঠানো পৃথক চিঠি দিয়ে এই সহযোগিতা চাওয়া হয়। এছাড়া পোশাক খাতে বাংলাদেশের বড় ক্রেতা যুক্তরাজ্যভিত্তিক মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সারের বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে সে দেশের সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের স্বাক্ষর করা এ চিঠি গত সপ্তাহে রাষ্ট্রদূতদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি লিখেছেন, পোশাক শ্রমিক এবং বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য করোনার টিকা কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চান তারা। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ইতিমধ্যে কিছু টিকা পাওয়া গেছে। এ জন্য দেশটির সরকারের প্রতি বিজিএমইএ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। যদি আরও কিছু পরিমাণে টিকা বরাদ্দ করা সম্ভব হয়, বাংলাদেশ এবং এ দেশের পোশাক খাতের জন্য তা হবে অনেক বড় সহযোগিতা। রক্ষা পাবে লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা। তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান অক্ষুণ্ন থাকবে।
ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত রেঞ্জি তারিঙ্কের কাছে লেখা বিজিএমইএর চিঠিতেও প্রায় একই ভাষা এবং বক্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্র্যান্ড মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সারের বাংলাদেশ কার্যালয়ের কান্ট্রি ম্যানেজার স্বপ্না ভৌমিকের কাছে লেখা চিঠিতে প্রায় অভিন্ন ভাষায় সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সরকারের সহযোগিতায় বিজিএমইএ কিছু কিছু কারখানায় টিকা দেয়া শুরু করেছে। সব কারখানার সব শ্রমিকের জন্যই টিকা নিশ্চিত করতে চান তারা। পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের অফিস, লিয়াজোঁ অফিস ও পোশাকের এক্সেসরিজ খাতেও টিকা নিশ্চিত করতে চান তারা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের টিকা দেয়ার জন্য ৮০ লাখ ডোজ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে বিজিএমইএ। ঈদের আগেই বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে থেকে ৩০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে আবার টিকা প্রদান শুরু হবে বলে জানান তিনি।
বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি এমএ মান্নান কচি বলেন, সরকার বিনা পয়সায় সব শ্রমিককে টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, পোশাক কারখানায় কর্মরত ৪০ লাখ শ্রমিকের পাশাপাশি বায়িং হাউজ ও কারখানার বিদেশি প্রায় সাড়ে ৮০০ কর্মকর্তার তালিকা মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, চলমান বিধিনিষেধে প্রায় সব শ্রম সেক্টর বন্ধ থাকলেও গার্মেন্ট সেক্টর চালু রেখেছে সরকার। সম্প্রতি করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ডেল্টা) বিস্তৃতির ফলে সবচেয়ে হুমকির মুখে পড়েছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। জরুরি ভিত্তিতে তাদের করোনা টিকা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ওদিকে টানা ১২ দিন ছুটির পর গতকাল রোববার রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাসহ সব কারখানা চালু হয়েছে। এদিন কারখানাগুলোতে ৮৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত হয়েছেন বলে মনে করছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ।
নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কিছু কারখানায় ৮২ ভাগ শ্রমিক এসেছেন। আবার কিছু কারখানায় ৯২ শতাংশ শ্রমিক কাজ করেছেন। সব মিলে ৮৫-৯০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কারখানাগুলো কাজ করেছে। তিনি বলেন, এখন কাজের প্রচুর চাপ, আমাদের উৎপাদন দরকার।
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, প্রথমদিন বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানায় ৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তারা কাজ শুরু করেছেন। প্রতিটি কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কাজ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি, তদারকি করছি কারখানাগুলোতে যাতে কোনোভাবেই করোনায় আক্রান্ত না হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর