× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মেঝেতে পড়েছিলেন রোকেয়া / মিনিটে মিনিটে আসছে রোগী

প্রথম পাতা

মরিয়ম চম্পা
২ আগস্ট ২০২১, সোমবার

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মিনিটে মিনিটে ঢাকার বাইরে থেকে আসছে রোগী। একের পর এক এম্বুলেন্স। কিন্তু হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করতে না পারায় ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। দুপুর পৌনে ১২টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের করোনা ওয়ার্ডে মেঝেতে পড়ে ছিলেন করোনা আক্রান্ত রোকেয়া বেগম। বয়স ৫২ বছর। এসেছেন কুমিল্লা থেকে। মেঝেতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন রোকেয়া।
তাকে দেখার যেন কেউ নেই। সাংবাদিক দেখে সাময়িক সময়ের জন্য রোকেয়াকে দুই আনসার ও হাসপাতালকর্মী মিলে ভেতরে নিয়ে একটি সিঁড়ির নিচে পুনরায় মেঝেতে শুইয়ে দেন। সেখান থেকে তাকে রোগীর স্বজনদের বসার কক্ষের দুই চেয়ারের মাঝে পড়ে থাকতে দেখা যায়। রোকেয়ার স্বজনদের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের এই প্রতিবেদকের। রোকেয়ার ছেলে বলেন, তার মা গত এক সপ্তাহ আগে করোনা আক্রান্ত হন। প্রথমে কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে গতকাল ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। কোভিড ওয়ার্ডে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়। রাজধানীর অন্য হাসপাতালগুলোতে স্বজনদের মাধ্যমে খোঁজখবর করে কোনো সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেলে ওয়ার্ড মাস্টার থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মচারীদের সহায়তায় ভর্তির ব্যবস্থা হয়। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে আমার এক আত্মীয় এসেছেন। মাকে মেঝেতে শুইয়ে রেখে আমরা তার ভর্তির কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম। মায়ের শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোথাও স্থির হয়ে বসে থাকার অবস্থায় তিনি নেই।
ময়মনসিংয়ের ত্রিশাল থেকে করোনা আক্রান্ত বিবি রহিমাকে নিয়ে এসেছেন তার স্বামী এবং ছোট ভাই। হাসপাতালের ভর্তির তথ্য কেন্দ্রে বোনকে ভর্তির জন্য করজোড়ে অনুরোধ করতে দেখা যায় রোগীর বড় ভাই রহিমকে। বিবি রহিমার স্বামীর লিভারে সমস্যা থাকায় খুব বেশি চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। ছোট ভাই রহিম বোন জামাইকে বোনের কাছে বসিয়ে রেখে ভর্তির জন্য পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিলেন। রহিম কান্না করে বলেন, কারো কি একটু দয়া হয় না। আমার বোনটাকে কেউ একটু ভর্তির ব্যবস্থা করে দিন। বোনের অবস্থা ভালো না। সম্প্রতি তার কিডনির অপারেশন হয়েছে। তার ৪ মাস বয়সী একটি শিশু সন্তান রয়েছে। বোনকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তিই করতে পারিনি। অথচ এম্বুলেন্স ভাড়া ২০ হাজার টাকার উপরে চলে গেছে। সঙ্গে আছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। অনেক চেষ্টার পরে বিবি রহিমাকে ভর্তি নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে এসেছেন মো. ছালাম মৃধা। কথা হয় তার সঙ্গে। ছালাম বলেন, তার মা হালিমা বেগমের বয়স ৮৭ বছর। ইতিমধ্যে তিনি ৩ বার ব্রেইনস্ট্রোক করেছে। বর্তমানে তিনি শুয়ে এবং বসে থাকার বাইরে কোনো চলাফেরা করতে পারেন না। তাছাড়া তিনি বাকশক্তি হারিয়েছেন। সারাক্ষণ শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। সম্প্রতি তার নিয়মিত জ্বর ১০০ ডিগ্রির নিচে নামছে না। পরবর্তীতে কোভিড পরীক্ষা করালে ফল পজেটিভ আসে। তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬০ থেকে ৭০ এর মধ্যে ওঠানামা করছে। নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে এখন ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছি। কোভিড সেরে গেলে তাকে পুনরায় নিউরোসাইন্সে ভর্তি করতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক শ’ রোগী আসে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালটিতে দেড়শ’ রোগী এসেছেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকার বাইরের করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাপ সামলাতে আমরা কোভিড ওয়ার্ড ও শয্যা বাড়িয়েছি। অন্য হাসপাতাল রোগীদের ফিরিয়ে দিলেও আমরা সেটা পারিনা। কারণ, ফিরিয়ে দেয়া রোগীরাই শেষ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে আসে শেষ আশ্রয় হিসেবে। রোগীর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সে অনুযায়ী সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর