ওমান উপকূলে ইসরাইলের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ট্যাঙ্কারে হামলা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে উপসাগরীয় অঞ্চল। ওই হামলায় একজন বৃটিশ ও রোমান নাগরিক নিহত হয়েছে। সব আঙ্গুল উঠেছে ইরানের দিকে। এ নিয়ে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ‘ছায়াযুদ্ধ’ শুরু হয়েছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন জোর দিয়ে বলেছে, এই হামলার নেপথ্যে আছে ইরান। ইসরাইল তো সরাসরি বলেই দিয়েছে, তাদের হাতে প্রমাণ আছে। প্রমাণ আছে যে, এই হামলা চালিয়েছে ইরান। এর জবাব কিভাবে দিতে হয়, তা ইসরাইলের জানা আছে।
কিন্তু অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। তারা বলেছে, অভিযোগ ভিত্তিহীন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সময় উপসাগরীয় অঞ্চল প্রায় সময়ই ছিল উত্তপ্ত। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে তিনিই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহাল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন ওই ট্যাঙ্কারে হামলা পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা বলা মুশকিল। যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন হামলার জবাব দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে বলেছে, এর মধ্য দিয়ে ইরান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার এমভি মার্চার স্ট্রিট নামের ট্যাঙ্কারে হামলা হয়। এ ঘটনায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেছেন, তার হাতে প্রমাণ আছে যে, তার দীর্ঘদিনের শত্রু ইরান এর জন্য দায়ী। তিনি সতর্কতা দিয়ে বলেন, কিভাবে ইরানকে আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে বার্তা দিতে হয় তা আমরা জানি।
বিবিসি লিখেছে, ইসরাইল এবং ইরানের মধ্যে এই হামলায় নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। একে দেখা হচ্ছে অঘোষিত ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে। মার্চ মাস থেকে ইসরাইল এবং ইরান পরিচালিত নৌযানের উপর বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। এগুলোকে দেখা হয়েছে ‘ঢিলটি দিলে পাটকেলটি খেতে হবে’ এমন হামলা হিসেবে। তবে এসব হামলায় হতাহতের সংখ্যা ছিল বিরল। পারমাণবিক স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদেরকে টার্গেট করার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ইরান।
রোববার বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, লন্ডন বিশ্বাস করে যে, এমভি মার্চার স্ট্রিটের বিরুদ্ধে এক বা একাধিক ড্রোন ব্যবহার করেছে ইরান। একে তিনি ইচ্ছাকৃত, টার্গেটেড এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। ডমিনিক রাব বলেন, এমন হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে ইরানকে। নৌযানকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে চলাচল করতে দিতে হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, এই হামলা ইরান চালিয়েছে এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ওয়াশিংটন। এর উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। অন্যদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আশা করেন ইরানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি পরিষ্কার বার্তা দেবে যে- তারা মারাত্মক এক ভুল করেছে।
তবে ইরান এসব বিষয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ সাংবাদিকদের বলেছেন, জিয়নবাদী শাসকগোষ্ঠী (ইসরাইল) অনিরাপদ, সন্ত্রাসী এবং সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। ইসরাইলকে এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, যে বা যারাই বীজ বপন করুক, এর এক ঘূর্ণিবার্তা আছে।