সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ শুরু হয়েছে। প্রতিবছর ১লা থেকে ৭ই আগস্ট দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ (ডব্লিউবিটিআই) কর্তৃক এ বছর বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘প্রটেক্ট ব্রেস্টফিডিং, এ শেয়ার রেসপনসিবিলিটি।’ সপ্তাহটি সামনে রেখে করোনাকালে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে যেসব কার্যক্রম গ্রহণের কথা বলা হয়েছে তা হলো মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগ করা; শিশুর খাবার ও পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রমের পরিধি ও অর্থের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা; মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য কোম্পানিগুলোর ডিজিটাল বাজারজাতকরণ কৌশল চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করা; ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশ ও মাতৃত্ব সুরক্ষা (ছুটি, বেতন-ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ভাতা প্রদান) নিশ্চিত করা; মাতৃদুগ্ধদানের সুরক্ষা, প্রচার ও সমর্থনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ; স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর কাউন্সেলিং ও মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২১ এর উদ্দেশ্য হলো মায়ের দুধ খাওয়ানোর সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা; মায়ের দুধ খাওয়ানোকে জনস্বাস্থ্য সেবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বোচ্চ সফলতার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা। আইবিএফএএনের তথ্য অনুযায়ী, শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ এবং জন্ডিস, কানপাকা ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণসহ ডায়রিয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়; বয়সের তুলনায় ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়; দীর্ঘস্থায়ী রোগের (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর সপ্তাহটি পালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে।
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচি মাসব্যাপী পালিত হবে।
এদিকে গতকাল বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু-সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। সভাটি সঞ্চালনা করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডাইরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।