টোকিওতে চলছে অলিম্পিকের আসর। গোটা বিশ্ববাসীর নজর এখন সেদিকে। কোন দেশের কপালে ক'টা মেডেল জুটলো সেই নিয়ে চলছে বিস্তর লেখালেখি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, এই মেডেলের নেপথ্যের কাহিনী। সেটাই আজ আপনাদের বলবো। আজকাল অনেকেই প্রায় প্রতি বছরই একটা নতুন স্মার্টফোন কিনে থাকেন। তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নতুন ল্যাপটপ, হেডফোন, চার্জার ইত্যাদি কেনার প্রবণতাও। এর ফলে, প্রতি বছরেই পুরনো ফোনগুলো বর্জ্যে পরিণত হয় ও তা আর কখনই ব্যবহার হয় না। সেই ফেলে দেয়া জিনিসই যে কত কাজে লাগতে পারে তা করে দেখিয়েছে জাপান। চলতি বছর টোকিও অলিম্পিক্সের সব মেডেল তৈরি হয়েছে পুনর্ব্যবহৃত দ্রব্য দিয়ে। পুরনো স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের মতো গ্যাজেটসের ভিতরে থাকা ধাতু ব্যবহার করে এই মেডেলগুলো তৈরি করেছে অলিম্পিক কমিটি। অলিম্পিকের মেডেল তৈরির জন্য সেই দেশের সাধারণ মানুষকে পুরনো ইলেকট্রনিক্স দান করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। দেশের মানুষের এমনতর সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন টোকিও অলিম্পিকের মুখপাত্র হিতোমি কামিজাওয়া। কামিজাওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ' ডি ডাবলু' -কে জানিয়েছেন , প্রত্যেক ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটসের মধ্যেই সামান্য পরিমাণে সোনা ও রূপা ব্যবহৃত হয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই পুনর্ব্যবহৃত দ্রব্য ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে চলতি অলিম্পিক্সের মেডেলগুলো।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকের জন্য প্রায় ৫,০০০ ব্রোঞ্জ, রৌপ্য এবং স্বর্ণপদক উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পুনর্ব্যবহৃত উপাদান সংগ্রহ করার জন্য জাপান দুই বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়েছে । এর জন্য একটি ডোনেশন পিক-আপ সাইট স্থাপন করা হয়েছিল। জাপানের ৯০% শহর এবং গ্রামের মানুষ এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে তাদের পুরনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস দান করেন। পুনর্ব্যবহার অভিযান কাজে লাগিয়ে ৭০ পাউন্ড (৩২ কিলোগ্রাম) সোনা, ৭,৭00 পাউন্ড রূপা এবং ৪,৮৫০ পাউন্ড ব্রোঞ্জ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে । এমনিতে রিসাইক্লিং প্রজেক্ট খুব সহজ হলেও, এ ক্ষেত্রে জাপান সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে এই প্রজেক্ট শুরু হয়েছিল। প্রথমে জাপানের ৬০০ টি পুরসভা এই প্রজেক্টে অংশ নিয়েছিল। ২০১৯ সালের মার্চের শেষে সেই সংখ্যাটি ১,৬০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও, মানুষকে বার্তা পৌঁছে দিয়ে স্থানীয়ভাবে বিশেষ প্রচার চালানো হয়েছিল বলেও খবর। এই বিপুল পরিমাণ গ্যাজেট সংগ্রহ করে, তা থেকে বিশেষ ধাতু বের করাও বেশ কষ্টকর কাজ ছিল জানিয়েছেন প্রস্তুতকারকেরা। যদিও জাপানিরাই যে প্রথম অলিম্পিক পদকগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান দিয়ে তৈরি করেছেন তা নয় , এর আগে রিও অলিম্পিকেও স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক তৈরির জন্য গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং আয়না থেকে পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছিল । এবার লক্ষ্য ২০২৪ - এর প্যারিস গেমস , সেখানেও টোকিও মডেল কাজে লাগানোর চিন্তা-ভাবনা করছেন উদ্যোক্তারা।