২০১৯ সালের ২১শে আগস্ট ব্যবসায়ী বড় ভাই আলী আজগর মোস্তফা মুকুল (৬২) কে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় ঘটনার দিনই পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মো. শামছুল মুসলেমিন মতি ওরফে কেজি মতি (৫৫)। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর বড় ভাই হত্যার আসামি হিসেবে ওই বছরের ২৪শে আগস্ট থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে হাজতি হিসেবে তিনি আটক ছিলেন। কারাগারে বিভিন্ন রোগে ভুগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোরে মারা গেছেন তিনি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কারাগার থেকে গতকাল ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মারা যাওয়া হাজতি মো. শামছুল মুসলেমিন মতি ওরফে কেজি মতি পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরটেকী গ্রামের মৃত হারুন-অর-রশীদের ছেলে। তিনি ১৯৯২ সালে নিজ গ্রাম চরটেকীতে নরসুন্দা বিদ্যানিকেতন নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে কেজি মতি হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. বজলুর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাজতি শামছুল মুসলেমিন মতি ওরফে কেজি মতি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিল।
ফলে করোনা সন্দেহে তাকে গত ২৮শে জুলাই কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে ৩১শে জুলাই হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোরে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) ডা. মো. হেলাল উদ্দিন জানান, হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শামছুল মুসলেমিন মতি ওরফে কেজি মতি নামের ওই হাজতিকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবু বকর সিদ্দিক পিপিএম জানান, এ বিষয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা (নং-২০/২১) রুজু করা হয়েছে। দুপুরে জেনারেল হাসপাতাল মর্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব দত্তের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পারিবারিক জায়গাজমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ছোট ভাই মো. শামছুল মুসলেমিন মতি ওরফে কেজি মতির ছুরিকাঘাতে বড় ভাই ব্যবসায়ী আলী আজগর মোস্তফা মুকুল খুন হন। ২০১৯ সালের ২১শে আগস্ট সকাল সোয়া ৬টার দিকে পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরটেকী গ্রামে এই হত্যাকাণ্ডের পর পরই এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ ঘাতক ছোট ভাই শামছুল মুসলেমিন মতি ওরফে কেজি মতিকে আটক করে। নিহত আলী আজগর মোস্তফা মুকুল ঢাকায় অবস্থান করে ব্যবসা করতেন। অন্যদিকে শামছুল মুসলেমিন মতি ওরফে কেজি মতি বাড়িতে থাকতেন। একই গ্রামের তাদের স্বজন রাসেল মিয়া (৩৫) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ওই বছরের ১৮ই আগস্ট বিকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রাসেলের নামাজে জানাজায় অংশ নিতে ১৯শে আগস্ট ঢাকা থেকে ব্যবসায়ী আলী আজগর মোস্তফা মুকুল বাড়িতে এসেছিলেন। ২১শে আগস্ট তার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৬টার দিকে বাড়ির সামনে ছোট ভাই শামছুল মুসলেমিন মতি ওরফে কেজি মতির সঙ্গে পারিবারিক জায়গাজমির হিস্যা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আলী আজগর মোস্তফা মুকুল।