রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে দেয়া সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রত্যাবাসন, তাদের নিরাপদে রাখাইনে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করা। সেখানেই তারা তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে- এটাই সঙ্গত। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অন্য ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছুটা বাড়তি চাপে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, নিশ্চিতভাবে তারা আমাদের চাপে রাখবে। টাকা ছাড় করতে ঝামেলা করবে। কিন্তু তারা তো আমাদের টাকা-পয়সা দেয় না। রোহিঙ্গাদের নামে যে টাকা আসে সেটার চেহারাও সরকার দেখে না দাবি করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের নাম করে বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ আসে। কিন্তু ওই অর্থ রোহিঙ্গাদের দেখভাল করা আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর নিজেদের মতো খরচ করে।
অর্থ কোথায়, কীভাবে খরচ করছে সেটা সরকারকে জানায়ও না। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি না- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতাশা ব্যক্ত করে বলেন- না, কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, যে ১৬টা দেশে উদ্বাস্তু বা রিফিউজি আশ্রয় পেয়েছে তাদের সাহায্য-সহায়তা সংক্রান্ত পলিসি রিভিউ ফ্রেমওয়ার্ক। সেখানে উদ্বাস্তুদের হোস্ট কান্ট্রিতে ইন্টিগ্রেট করার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু রোহিঙ্গারা রিফিউজি না, তাই বাংলাদেশ এ রিপোর্ট পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের ওই রিপোর্টের সঙ্গে আমাদের চিন্তা-ভাবনার মিল নেই। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র পথ হচ্ছে নিজের দেশে ফিরে যাওয়া। আমরা তাদের ক্ষণিকের জন্য আশ্রয় দিয়েছি মাত্র। ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার বলেছে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তারা কখনো বলেনি নেবে না। ফলে এখানে তাদের অবস্থান ক্ষণস্থায়ী। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক তাদের রিপোর্টে ‘রিফিউজি’ বলেছে, রোহিঙ্গাদের আমরা রিফিউজি বলে আশ্রয় দেয়নি। মন্ত্রীর দাবি সরকার ওই পলিসির কথা জানতো না। ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে ভাসানচর সংক্রান্ত আলোচনায় ওই বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবিত পলিসি’র রেফারেন্স দিয়ে তাদের সব ধরনের নাগরিক সুবিধা; যেমন: বাংলাদেশিদের মতো কাজ করতে পারে, চলাফেরার লিগ্যাল মুভমেন্ট পায়, জমিজমা কিনতে পারে, নির্বাচন রাইট চাওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার এ বিষয়ে জেনেছে। মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক নাগরিক আর উদ্বাস্তুর মধ্যে বৈষম্য রাখতে চায় না। কিন্তু আমরা বলেছি, রোহিঙ্গারা সেই শর্তের মধ্যে পড়ে না। মন্ত্রীর মতে, বিশ্বব্যাংক যে প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে এটা দীর্ঘমেয়াদি। কিন্তু বাংলাদেশ আমরা এটার পক্ষে না। তিনি বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য তাদের জানিয়ে দিয়েছি। বলেছি, আমরা এটা গ্রহণ করি না। আমরা এটা নাকচ করার পর ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে একটা সমঝোতা হচ্ছে, যেগুলো আমরা অপছন্দ করি সেগুলো বাদ দিয়ে চুক্তি হবে। আমাদের যে ক্ষণস্থায়ী চিন্তাভাবনা, সেটা অনুযায়ী তারা রাজি হলে চুক্তি করবো।
টিকার যৌথ উৎপাদনে সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে: এদিকে বাণিজ্যিক চুক্তির পাশাপাশি করোনা টিকার যৌথ উৎপাদন বিষয়ে চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং মন্ত্রীর সঙ্গে সোমবারের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী বলেন, চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে টিকা কেনা শুরুর পর এক মাসে ৭০ লাখ টিকা পেয়েছি। এ মাসে আরও টিকা আসবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের টিকার বিপুল চাহিদা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশকে বাড়তি টিকার চাহিদার বিষয়ে তাদের আগেভাগে জানাতে। আমরা তা-ই করেছি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সিনোফার্মের টিকার যৌথ উৎপাদন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, তুরস্কের সঙ্গে সিনোফার্মের যৌথ উৎপাদনের চুক্তি হয়েছে। চলতি মাসেই তারা উৎপাদনে যাচ্ছে। আরও অনেক দেশের সঙ্গে সিনোফার্মের চুক্তি হয়েছে। আমাদের সঙ্গেও খসড়া সমঝোতা চূড়ান্ত প্রায়। ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস যৌথ উৎপাদনের খসড়াটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। টিকার যৌথ উৎপাদন বিষয়ে আর দেরি করা ঠিক হবে না মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এই এগ্রিমেন্ট এতো আহামরি কিছু না। আমি মনে করি, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত এটা যত দ্রুত সম্ভব ডিসক্লোজ করা। রাশিয়ার সঙ্গে টিকার যৌথ উৎপাদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমরা সবকিছু পাঠিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেখানে অনেক লোকজন অফিসে আসে না। এজন্য একটু দেরি হচ্ছে। কিন্তু এটা আমাদের গরজ, আমরা লেগে আছি।
জাতিসংঘে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী: ওদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানিয়েছেন, ২১ থেকে ২৬শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে কোন কোন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান অংশ নিচ্ছেন তা এখনো জানা যায়নি। তবে তিনি আশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। মোমেন বলেন, এবারের সম্মেলন খুব সীমিত আকারে হবে। জাতিসংঘ অনেক কম লোকজনকে নিয়ে যেতে বলেছে। কোনো সাইড ইভেন্ট জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ভেতরে হবে না। সেখানে দু’টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে। একটি পরমাণু শক্তি নিয়ে, যা গতবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমি অংশ নিয়েছিলাম। আর একটি হবে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে। ওই সফরে নিউ ইয়র্কে কোনো কমিউনিটির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সাক্ষাৎ না হওয়ার কথাও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।