× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আশ্রয়হীন মানুষদের পাশে নেই কেউ

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
৩ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার
ফাইল ছবি

রাত ১১টা। চারদিকে সুনসান নীরবতা। নেই কোনো গাড়ির শব্দ। ছিল না পথচারীদের কোলাহলও। এরই মধ্যে ৮ মাস বয়সী ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে ফার্মগেটের ফুটপাথে বসে থাকতে দেখা যায় ইতি বেগমকে। তার নেই বসবাসের কোনো ঘর। রাস্তায়ই তার ঘর-সংসার। ছোট শিশুকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেন।
পথচারীদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে মিটান পেটের ক্ষুধা। হঠাৎ করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ। দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে কঠোর লকডাউন। কিন্তু ইতি বেগমের নেই কোনো আয়ের পথ। পেটের ক্ষুধায় ছোট শিশুটিকে কোলে নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন খাবারের। হয়তো কেউ গাড়িতে করে খাবার নিয়ে আসবেন। কিন্তু রাত যত গভীর হয় খাবার নিয়ে আর কেউ আসেন না। অপেক্ষায় থেকে এক সময় রাস্তার ফুটপাথে ছেলেকে নিয়ে ক্লান্ত চোখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।
আট বছর আগে বিয়ে করেন ইতি বেগম। তার গ্রামের বাড়ি ডেমরাতে। স্বামীকে নিয়ে সংসার ভালোই যাচ্ছিল। আরেকটি বিয়ে করেন তার স্বামী আকাশ হোসেন। এই ঘটনা জানার পর তার কোলের শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ইতি বেগম। শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। ইতি বেগম বলেন, লকডাউনের আগে দিনে আয় করতেন ১০০০-১৫০০ টাকা। তাতে ভালো ভাবেই চলতো সংসার। স্বামী কোনো খোঁজখবর রাখেন না। রাস্তায় কেটে যায় রাত-দিন। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো আয় নেই। এখনো রাস্তায় বসে মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করি। ১০০-২০০ টাকা যা পাই তা দিয়ে কোন রকমে দিন পার করি।
শুধু ইতি বেগম নয়, চলমান লকডাউনে কাজ বন্ধ রেখে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই রকম অনেক আশ্রয়হীন ভাসমান মানুষ পেটের ক্ষুধায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে যান ফুটপাথে খোলা আকাশের নিচে।
তিন বছর বয়স থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে তামান্না আক্তার (১৩)। চাঁদপুরে তার বাবার বাড়ি। বাবা আরেক বিয়ে করে সৎমাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে থাকেন। বিয়ের পর তার মাকে ছেড়ে দেন। সেদিন থেকে তামান্নাকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন মা খাদিজা বেগম। তামান্না জানান, মা ভিক্ষা করতো। মাঝে মাঝে বাসাবাড়িতেও কাজ করেছেন। এখন নাবিস্কোতে কাজ করেন। প্রতিদিন তিনশ’ টাকা পেতেন। এখন মায়ের কাজ বন্ধ। অন্য কোনো কাজও নেই। লকডাউনের আগে রাতের বেলা ট্রাকের সবজি সংগ্রহ করতাম। তখন ১০০০-১৫০০ টাকা বিক্রি হতো। এখন কোনো আয় নেই। তাই প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হয়।
লেগুনা চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতো সজীব হোসেন (১২)। সে জানান, বরিশালে তার গ্রামের বাড়ি। চার বছর বয়সে মা মারা যান। বাবা আরেকটা বিয়ে করেছেন। বাবা কোনো খোঁজ রাখেন না। নানির কাছে বড় হয়ে ৭ বছর বয়সে ঢাকায় আসি। তখন থেকে ভাঙাড়ি সংগ্রহ ও ভিক্ষা করি। দুই বছর ধরে লেগুনায় কাজ করি। লকডাউনের আগে এক হাজার টাকা আয় হয়েছে। এখন কাওরান বাজারে ট্রাকের মালামাল নামিয়ে ১০০ টাকা পাই। তাতে কিছুই হয় না। কেউ কোনো খাবারও দেয় না।
নুরজাহান বেগম জানান, এখন সব কাজ বন্ধ। দিনে একবারও খেতে পারি না ঠিকমতো। করোনার জন্য বাসাবাড়ির কাজ বন্ধ। মানুষের কাছে চেয়ে ১০০-২০০ টাকা হয়। মাঝে মাঝে রুটি আর পানি খেয়ে থাকি। লকডাউনের আগে বাসার কাজ বন্ধ থাকলেও বোতল সংগ্রহ করে কিছু টাকা আয় হতো। এখন সেটাও বন্ধ।
৬৫ বছর বয়সী জরিনা বেগম আক্ষেপ নিয়ে বলেন, গত পাঁচদিন ধরে না খেয়ে মরতাছি। বাসাবাড়িতেও কাজ নেই। আগে ভাঙাড়ি সংগ্রহ করতাম। ট্রাকের নিচে পড়ে থাকা সবজি নিয়ে বিক্রি করতাম। কিছু টাকা আয় হতো। তা দিয়ে খাবার খেতাম। সারা দিন না খেয়ে থেকে এখন রাতে খাচ্ছি। সকালে কি খাব তার ঠিক নেই।
ময়মনসিংহের নাজমা বেগম ৭ বছর আগে ঢাকা আসেন। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। দুই ছেলে তার। তিন বছর আগে বড় ছেলে মারা গেছে। তার ঘরে তিন ছেলে-মেয়ে আছে। তাদের খরচ চালাতে হয়। এখন আয় নেই। সব কাজ বন্ধ। রাস্তায় সারাদিন বসে থাকলেও কোনো টাকা পাই না।
কাশেম মিয়া তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় কোমরে আঘাত পান। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না তিনি। ধানমণ্ডি ৩২নং ফুটপাথে তার বসবাস। তিনি জানান, পটুয়াখালী থেকে ১০ বছর আগে ঢাকায় আসেন। অটোরিকশা চালাতেন। তিন বছর আগে পান্থপথে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় তার কোমর ভেঙে যায়। তারপর থেকে ভাঙা কোমর নিয়ে ফুটপাথে বসে ভিক্ষা করেন। অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। পরিবারে আর কেউ নেই তার। দুই বছর আগে স্ত্রী মারা গেছেন টাইফয়েড জ্বরে। এক মেয়ে ছিল। মেয়েটাও মারা গেছে। আগে মানুষ ভিক্ষা দিতো। এই ভিক্ষার টাকা দিয়েই চলতাম। এখন লকডাউনে কেউ ভিক্ষাও দিতে চায় না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর