× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইমরান খানের সাক্ষাৎকার /‘আফগানিস্তানে লেজেগোবরে করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র’, তালেবানদের নিয়ে সরকার গঠনের দাবি

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) আগস্ট ৩, ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

আফগানিস্তানে আসলেই লেজেগোবরে করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে একমাত্র সমাধান হলো রাজনৈতিকভাবে চুক্তি করা। সেখানে তালেবানসহ সব পক্ষকে রাখতে হবে। এসব মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার দেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার মিলিট্যান্ট সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী আফগানিস্তানে প্রবেশের অভিযোগকে তিনি ‘রাবিশ’ বলে অভিহিত করেছেন। পিবিএস নিউজআওয়ারে জুডি উডরাফকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তান সমস্যার কোনো সামরিক সমাধান নেই। আমার মতো যেসব মানুষ বলছেন, সামরিক উপায়ে কোনো সমাধান নেই, তাদেরকেই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এমনকি আমাকে ‘তালেবান খান’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
যখন তারা চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্তে এসেছে যে, এ সমস্যার কোনো সামরিক সমাধান নেই, তখনই দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বাহিনীর দর কষাকষির শক্তি শেষ হয়ে গেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

এতে বলা হয়, ওই সাক্ষাৎকারে ইমরান খান আরো বলেছেন, আফগানিস্তানে ন্যাটোর দেড় লাখ সেনা থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক সমাধানে যাওয়া উচিত ছিল। ওটাই ছিল এমন সমাধানের উত্তম সময়। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের জন্য তালেবানদের উত্থান কি শুভ? এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে তার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে হলে সেখানকার সরকারে তালেবানদেরকে অবশ্যই অংশীদার করতে হবে। আফগানিস্তানে যদি সবচেয়ে খারাপ কোনো পরিস্থিতি আসে, তাহলে তা হবে গৃহযুদ্ধ। যদি তা হয়, তাহলে পাকিস্তানের দৃষ্টিতে, তা হবে এক ভয়াবহ দৃশ্য। এমন অবস্থায় চলমান গৃহযুদ্ধে পাকিস্তানকে শরণার্থীর চাপ মোকাবিলা করতে হবে।

ইমরান খান আরো উল্লেখ করেন, এরই মধ্যে তার দেশ আফগানিস্তানের ৩০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। এ অবস্থায় দীর্ঘায়িত গৃহযুদ্ধে আরো শরণার্থীর চাপ পড়বে বলে পাকিস্তান আতঙ্কে। ইমরান খান বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এত ভাল নয় যে, আমরা আরেক দফা শরণার্থীর ঢল সামাল দিতে পারবো। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আফগানিস্তানে নতুন একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তার ঢেউ পাকিস্তানেও পড়বে। কারণ, তালেবানরা জাতিগত পস্তুন। আফগানিস্তানের চেয়ে পাকিস্তানে অধিক পরিমাণ পস্তুন বসবাস করেন। যদি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে পাকিস্তানে থাকা পস্তুনরাও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বেন।

পাকিস্তানকে তালেবানদের নিরাপদ আস্তানা বলে অভিযোগ প্রসঙ্গে ইমরান খান পাল্টা প্রশ্ন রাখেন। তিনি বলেন, কোথায় এই নিরাপদ স্বর্গ? পাকিস্তানে ৩০ লাখ শরণার্থী আছেন। তালেবানরা যে জাতিগোষ্ঠীর তারাও তাই। তালেবানরা কোনো সামরিক যোদ্ধা গোষ্ঠী নয়। তারাও সাধারণ বেসামরিক মানুষ। কিভাবে পাকিস্তান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে? পাকিস্তান তালেবানদের সমর্থন দেয় বলে যে অভিযোগ আছে তার জবাবে ইমরান খান বলেন, এ অভিযোগ চরম মাত্রায় অন্যায়। তিনি বলেন, ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের কিছুই করার ছিল না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত যখন পাকিস্তান নিয়েছিল, তাতে এই দেশটি বিধ্বস্ত হয়েছে। ওই যুদ্ধে ৭০ হাজার পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন। এর নিয়ে আমাদের কিছু করার ছিল না। অর্থনীতিতে আমাদের ১৫০০০ কোটি ডলারের বেশি লোকসান হয়েছে।

প্রায় ১০ হাজার মিলিট্যান্ট সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানে গিয়েছেন বলে অভিযোগের জবাবে ইমরান খান বলেন, পুরোপুরি এক বাজে কথা এটা। এ দাবির পক্ষে কোনোই প্রমাণ নেই। নতুন করে তিনি আবার বলেন, পাকিস্তানের মাটিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ঘাঁটি চান না। তার ভাষায়, সন্ত্রাসকে আমাদের ধারণ করার সক্ষমতা নেই। আমাদের সীমান্তের ভিতরে যুদ্ধের সক্ষমতা নেই আমাদের। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উত্তুঙ্গু সময়ে যখন ছিলাম আমরা, তখন পাকিস্তান তাতে যোগ দিয়েছিল। এতে সারা দেশে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। ব্যবসা ও পর্যটন ধ্বংস হয়ে গেছে। ইমরান খান আরো যোগ করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তান ঘাঁটি নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তাহলে আবারও তার দেশ টার্গেটে পরিণত হবে। এ সময় তিনি পুনরায় বলেন, পাকিস্তান শান্তির অংশীদার হতে চায়। কোনো যুদ্ধে নয়।

এ সময়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদ কি রকম সম্পর্ক চায়? এ প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, আগেকার সম্পর্ক ছিল লেনদেনভিত্তিক। আর পাকিস্তান ছিল একটি ভাড়া করা বন্দুকের মতো। যুক্তরাষ্ট্র তো বলে, আমরা তোমাদেরকে বিনিময় দিয়েছি। আমরা তোমাদেরকে সহায়তা দিয়েছি। এ জন্যই তোমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লড়াই করেছ। অন্যদিকে পাকিস্তান মনে করে, এটা সেই দেশ- যার এই যুদ্ধের অংশীদার হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ইমরান খান বলেন, অর্থনীতিতে আমরা যে পরিমাণ অর্থ হারিয়েছি, তার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা সামান্যই। আফগানিস্তানে ব্যর্থতার জন্য এখনও ইসলামাবাদকে দায়ী করা হয়। ইমরান খান আরো বলেন, পাকিস্তান সহায়তা করতে চেয়েছে। তালেবানদেরকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্য সাহায্য করেছে। আমরা একটি অবনতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা কাটিয়ে উঠেছি। আবার আমরা সেই অবস্থায় যেতে চাই না।

সাংবাদিক উডরাফ এ সময় বলেন, আমরা এ কথা শুনেছি। কিন্তু এর পরে কি তালেবানদের বিজয়কে মেনে নিতে আপনি প্রস্তুত? ইমরান খান জবাবে বলেন, অবশ্যই। এমন কিছু নেই যা আমরা আর করতে পারি। আমরা যা করতে পারি তাহলো তাদেরকে চাপ দিয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারি। এটাই সব। কিন্তু আফগানিস্তানে যা ঘটছে, তাতে আমরা শুধু প্রার্থনাই করতে পারি যে- আফগানিস্তানের জনগণ যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তারা কি ধরনের সরকার চান। ফলে আমরা আশা করি- শেষ পর্যন্ত যা ঘটুক, তারা সবার অংশগ্রহণমূলক একটি সরকার গঠন করুক।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর