আইপি টিভির নামে স্যাটেলাইটে সম্প্রচার চালাচ্ছিল জয়যাত্রা টিভি। ঢাকাসহ ৫০টি জেলায় ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে হংকংয়ের একটি ডাউন লিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছিল। যার ফ্রিকোয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়। এর জন্য হংকংকে মাসে ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতো জয়যাত্রা টিভি। জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক সানাউল্লাহ নূরী। সেই সানাউল্লাহ নূরী ও জয়যাত্রা টিভির জিএম (প্রশাসন) হাজেরা খাতুনকে গতকাল ভোরে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব জানিয়েছে, হেলেনা সমাজের বিভিন্ন বিশিষ্টদের ছবি ব্যবহার করে নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। বিষয়টি প্রতারণার অংশ হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থা খতিয়ে দেখছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র?্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, হেলেনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন ও সানাউল্লাহ নূরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি ল্যাপটপ এবং ২টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। হাজেরা খাতুন ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ হতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন মিরপুরে একটি গার্মেন্ট এডমিন (এইচ আর) পদে চাকরি শুরু করেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নিকটআত্মীয়। তিনি কর্মদক্ষতা গুণে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ফলশ্রুতিতে ২০১৬ সালে তিনি ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’ এর ডিজিএম হিসেবে নিযুক্তি পান। পরে ‘জয়যাত্রা টিভি’ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম (এডমিন) এর পদে নিযুক্ত হন। উল্লেখ্য যে, হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচারের কোনো বৈধ অনুমোদন নেই বলে হাজেরা খাতুন র্যাবকে জানিয়েছেন। সম্প্রচারের জন্য ক্যাবল ব্যবসায়ীদের নিকট রিসিভার জয়যাত্রা টিভি বা তার প্রতিনিধির দ্বারা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের নিকট সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রতিনিধিরা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সম্প্রচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে চাকরিচ্যুত হয়ে থাকেন।
তিনি আরও জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টিভিকে তিনি নিজ প্রচার ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করতেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতেন। জয়যাত্রা টিভির বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে তিনি নেতিবাচক উদ্দেশ্য চরিতার্থে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার হওয়া সানাউল্লাহ নূরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় সাধন করতেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। এলাকাতে তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি গাজীপুর গার্মেন্ট সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করতেন। তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিতে প্রদান করতেন বলে জানা গেছে। জয়যাত্রার টিভির সঙ্গে যুক্ত কিছু সুনামখ্যাত ব্যক্তির নাম এসেছে যারা হেলেনাকে সহযোগিতা করতো তাদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর নিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহযোগী পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি ও এএসপি আনম ইমরান খান ইমন প্রমুখ।