× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পিয়াসার অন্ধকার জগতের ব্লু প্রিন্ট

শেষের পাতা

শুভ্র দেব
৪ আগস্ট ২০২১, বুধবার

চট্টগ্রামের আজগর দিঘী লেন থেকে ঢাকার অভিজাত এলাকা বারিধারা। মাঝখানে সময় ১৫ বছর। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা হয়ে উঠেছেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের নারী সদস্য। অথচ লেখাপড়াও বেশিদূর করতে পারেননি কাস্টম অফিসের কর্মচারী মাহবুব আলমের মেয়ে ফারিয়া। চট্টগ্রামের একটি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। অথচ একটি স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেছেন বলে প্রচার করতেন। একটি ঘটনাচক্রে চট্টগ্রাম ছেড়েছিলেন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
ঢাকায় আসার পর কিছুদিন কষ্ট করতে হলেও তার শারীরিক সৌন্দর্য ও বয়স তাকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যায়। একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচয়ের কারণে খুব তাড়াতাড়ি মিডিয়া জগতের ব্যক্তির সঙ্গে জানাশোনা হয়ে যায়। বয়সে তরুণী, দেখতে সুন্দর, মানিয়ে নিতে পারেন সব সোসাইটিতে এই তিনটি জিনিসকে পুঁজি করে বিচরণ করেছেন অপরাধের সব ডালে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে, নারী পাচার চক্র, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, ব্ল্যাকমেইলিং, নারী সরবরাহকারী, কোটিপতির দুলালদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা বাগিয়ে নেয়া, হত্যাকাণ্ডসহ সবকিছুতেই বিচরণ ছিল তার। এই ১৫ বছরে নানা কৌশলে কামিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার সম্পদের হিসাব দেখে রীতিমতো হতভম্ব গোয়েন্দারা।

পিয়াসাকে মডেল বলে পরিচয় দেয়া হলেও এই জগতে তার পথচলা বেশিদূর নয়। অল্পকিছুদিন কাজ করার পর আর স্থায়ী হননি। কিন্তু নামের আগে মডেল শব্দটি যুক্ত হওয়ার কারণে পিয়াসা সব স্থানেই জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন দ্রুত। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পিয়াসা চলাফেরা করতেন দামি গাড়িতে। ৩/৪ কোটি টাকার গাড়িতে চলাফেরা করতেও তাকে দেখা গেছে। পোশাক পরতেন পশ্চিমা ধাঁচের। একেকটি পার্টি ড্রেসের দাম ১ লাখ টাকার উপরে। নেইলপলিশ থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কসমেটিক্‌স, জুতা, ব্যাগ সবই ছিল বিদেশি। বারিধারার যে ফ্ল্যাটতিতে পিয়াসা থাকতেন সেই ফ্ল্যাটটির মাসিক খরচ কয়েক লাখ টাকা। তার একাধিক নিজের ফ্ল্যাট থাকার পরেও ভাড়া দিয়ে এত দামি ফ্ল্যাটে থাকার পেছনেও রহস্য রয়েছে।

তার বাসায় মদের পার্টিতে এক রাতেই কয়েক লাখ টাকা খরচ করতেন। যদিও এর কয়েকগুণ বেশি টাকা আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে উঠিয়ে নিতেন। পিয়াসা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, বিদেশি ব্র্যান্ডের যেসব পণ্য ব্যবহার করতেন সেগুলো তার বিভিন্ন বন্ধুরা গিফ্‌ট করেছেন। এছাড়া অনেক সময় বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গিয়ে নিজেই কিনে এনেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পিয়াসার পাপের খতিয়ান বেশ দীর্ঘ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছিল। বিভিন্ন মহল থেকে আসা অভিযোগের সূত্র ধরে গোপন তদন্ত চলছিল। বিশেষ করে পিয়াসার প্রেমের ফাঁদে পড়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ব্ল্যাকমেইল করে দিনের পর দিন তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিলেন। এছাড়া মডেল পরিচয় দিয়ে এর আড়ালে অস্ত্র ব্যবসায়ও নেমেছিলেন পিয়াসা। অত্যাধুনিক একটি বিশেষ অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক মাফিয়ার সঙ্গে একটি পার্টিতে পরিচয় হওয়ার পর মূলত এই ব্যবসায় জড়ান। ওই মাফিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকেও দেদারসে দেশের কিছু সুন্দরী তরুণীকে দিয়ে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করিয়ে যাচ্ছেন। বেশির ভাগ সময় তিনি দেশের বাইরে থাকেন। অল্প দিনেই পিয়াসার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। পিয়াসারও টাকা ইনকামের আগ্রহ থাকায় এই ব্যবসায় জড়াতে তার বেশি সময় লাগেনি। এছাড়া ওই মাফিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের পর বিদেশে নারী পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে যান পিয়াসা। কারণ কথিত এই মডেলের গণ্ডি শুধু দেশেই বিস্তার ছিল না। বিভিন্ন দেশে গিয়ে বিভিন্ন পার্টিতে ডিজেতে অংশগ্রহণ করেন। নিজের মতো করে পিয়াসা তার আরও শতাধিক সুন্দরী অনুসারী তৈরি করেছেন। দেশে- বিদেশে বিভিন্ন পার্টিতে এসব তরুণীকে কাজে লাগাতেন। টাকার বিনিময়ে কোটিপতিদের গোপন আস্তানায় পাঠাতেন। বেশি টাকার বিনিময়ে অনেকের বিদেশ যাত্রার সঙ্গী করতেন ওই তরুণীদের। চুক্তিতে মিললে পিয়াসা নিজেও সফরসঙ্গী হতেন বলে অভিযোগ আছে।

ঢাকায় নিজের নামে কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে বলে তথ্য মিলেছে। কিন্তু লোক দেখানোর জন্য ভাড়া বাসায় থাকতেন। এছাড়া সব এলাকায় থেকে তার কর্মকাণ্ড চালানো যেত না। রাতের বেলা বিভিন্ন মানুষের অবাধে যাতায়াত, ডিজে পার্টির জন্য তিনি সুবিধামতো জায়গায় নিয়মের চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে ফ্ল্যাট নিতেন। তার এসব পার্টিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন মুখ দেখা যেত। গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকার ধনী ঘরের তরুণেরা পার্টির নিয়মিত অতিথি ছিলেন। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিদের আনাগোনা ছিল। পিয়াসা প্রতিদিনই দামি গাড়িতে চলাফেরা করতেন। এসব গাড়ির মধ্যে নিশান, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, রেঞ্জরোভার মডেলের গাড়ি রয়েছে। যদিও পিয়াসা দাবি করেছেন এসব গাড়ি তার নিজের নয়। তার বন্ধুরা তাকে এসব গাড়ি সাময়িক সময়ের জন্য চালাতে দিতেন। গোয়েন্দারা বলছেন, পিয়াসার নামে অনেক ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব হিসাবে কোটি কোটি টাকা রয়েছে। দৃশ্যমান কোনো চাকরি বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও এসব টাকা পিয়াসা কোথা থেকে পেয়েছেন এসব নিয়ে কাজ চলছে। পিয়াসা মাদক ব্যবসা, বাসায় ডিজে পার্টি, অস্ত্র ব্যবসা, নারী সরবরাহ, বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল করে কয়েক কোটি টাকা কামিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফ্ল্যাট পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন। আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে কয়েককোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এশিয়ান টিভি’র প্রতিবাদ: মঙ্গলবার মানবজমিন-এ প্রকাশিত মৌ-পিয়াসার রংমহল শিরোনামের প্রকাশিত সংবাদের একটি অংশের প্রতিবাদ জানিয়েছে এশিয়ান টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। মানবজমিন-এ পাঠানো এশিয়ান টিভি’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন) মো. সাজ্জাদ হোসেন রশীদ (পারভেজ) স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, রিপোর্টের একটি অংশে লেখা হয়েছে ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা কাজ করেছেন এশিয়ান টেলিভিশনের পরিচালক হিসেবে এবং প্রিভিউ কমিটির প্রধান হিসেবে। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হচ্ছে- পিয়াসা কোনো সময়ই টেলিভিশনটির পরিচালক ছিলেন না। তার নাম কোম্পানির আর্টিকেলস অব মেমোরেন্ডামে অথবা কোনো কাগজপত্রে ছিল না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর