× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কান্নার শেষ কোথায়?

প্রথম পাতা

মরিয়ম চম্পা
৪ আগস্ট ২০২১, বুধবার
সময় ১১:৫২মি.। মাকে নিয়ে হাসপাতালে। সময় দুপুর ২:১১মি.। মায়ের লাশ নিয়ে ফেরা। ইউসা’র কান্না থামছেই না -ছবি: জীবন আহমেদ

আম্মু কেমনে থাকবে কবরে একলা। আমারে ছাড়া আম্মু থাকতে পারবে না। মা আমারে রেখে কেমনে চলে গেলা? বাবাও চলে গেল। আমি কি নিয়ে থাকবো। ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালের সামনে মাকে হারিয়ে এভাবেই চিৎকার করে কান্না করছিল দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইউসা। ইউসা’র হৃদয়বিদারক কান্নায় হাসপাতালে আসা মানুষেরও চোখ ছলছল।

ইউসা’র মা নাসরিন আক্তার। বয়স ৫০ বছর। তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসার ২৫ মিনিট পর অবজারভেশন কক্ষেই মৃত্যু হয়।
ইউসা জানায়, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নানার বাড়িতে তার মা তাদের নিয়ে থাকতেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিন বোনের মধ্যে ইউসা সবার ছোট। মা টিউশনি করে তাদের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন। বড় দুই বোনের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী। অপরজনও শারীরিকভাবে অসুস্থ। ইউসা বলেন, আম্মুর দুটি কিডনি আগে থেকেই নষ্ট হয়ে যায়। ইসিজি’র রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুস অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। সোমবার রাতে হঠাৎ আম্মুর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সকালে নারায়ণগঞ্জে আলিফ প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অক্সিজেনের সংকট থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে শয্যা খালি না থাকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পথে এম্বুলেন্সেই আম্মুর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। সেখান থেকে ডিএনসিসি হাসপাতালে নিয়ে আসলে অবজারভেশন কক্ষে নেয়ার পর তিনি মারা যান।

শুধু ইউসাই নয়। তার মতো অনেকের কান্নায় ভারী হাসপাতালগুলোর পরিবেশ। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর সামনে প্রতি মুহূর্তে আসছে রোগী। আবার বের হচ্ছে লাশ। মারা যাচ্ছেন কারও না কারও স্বজন। তাদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনেক সময় এমন পরিবেশে নিজেদের ধরে রাখতে পারেন না। দুঃসহ এই পরিস্থিতির কবে শেষ হবে। কবে থামবে মানুষের এমন কান্না এর কোনো উত্তরই যেন নেই কারও কাছে।

‘ও আব্বা তুই আমারে কি কইয়া গেলি। একটা কথাও কইলি না আব্বা। তোরে ছাড়া থাকমু কেমনে। কিছু একটা কও আব্বা।’ এভাবে চিৎকার করে কাঁদছে আব্দুল জলিলের ছেলে। কেরানীগঞ্জ থেকে আসা জলিলকে নিয়ে চার হাসপাতাল ঘুরে ডিএনসিসি হাসপাতালের সামনে এসে এম্বুলেন্সেই মারা যান তিনি। মৃত জলিলের এক স্বজন বলেন, ১০ দিন আগে করোনা শনাক্ত হয় আব্দুল জলিলের। বয়স ৬৭ বছর। শারীরিক কোনো জটিলতা না থাকায় বাড়িতে বসেই ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত সোমবার থেকে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। প্রথমে তারা মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি না করায় মুগদা হাসপাতালে নিয়ে যান। মুগদা থেকে ঢাকা মেডিকেল। সেখানেও ভর্তি না নেয়ায় সর্বশেষ ডিএনসিসি হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের সামনেই এম্বুলেন্সে মারা যান জলিল। কুমিল্লা থেকে করোনা আক্রান্ত আব্দুর রহমানকে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী রহিমা। প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভর্তি করেনি। সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী সবশেষে ডিএনসিসি হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে এম্বুলেন্সের ভেতরে মারা যান তিনি। আব্দুর রহমানের স্ত্রী তার স্বামী জীবিত না মৃত এটা জানার জন্য হাসপাতালে বারবার গেলেও কোনো চিকিৎসক প্রথমে আসেননি। পরবর্তীতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পরে আব্দুর রহমানকে হাসপাতালের ভেতরে এনে মৃত ঘোষণা করা হয়। আব্দুর রহমানের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পাশেই একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর গত দুদিন আগে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। গতকাল সকালে তার অবস্থা বেশি খারাপ হলে আমরা প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন তার অক্সিজেন সাপোর্ট খুব দরকার ছিল। চিৎকার করে কেঁদেছি। কিন্তু কারও একটু দয়া হয়নি। সেখান থেকে ডিএনসিসিতে আনার পরেই তার মৃত্যু হয়। ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের ডিউটিরত একজন চিকিৎসক বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য আক্রান্ত রোগী আসেন। কিন্তু আমাদের সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে কিছুই করার থাকে না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি একজন রোগীকে ভর্তি করতে। প্রতিদিনই কম-বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে হাসপাতালটিতে। আবার অনেকেই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর