২০১৪ সালের আজকের দিনে কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মানদীতে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ। লঞ্চ ডুবির ভয়াবহ সাত বছর পূর্ণ হলো বুধবার (৪ আগষ্ট)। সরকারি হিসেব মতে সে সময় ৪ ৯জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৬৪ জন। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২১ জনের পরিচয় না পেয়ে দাফন করা হয় শিবচর পৌর কবরস্থানে। দীর্ঘ সাত বছরেও অজ্ঞাতনামাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। কেউ তাদের খোঁজে আসেনি।
জানা যায়, কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে (বর্তমান বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট) পদ্মা নদীতে ২০১৪ সালের ৪ঠা আগস্ট ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে মাঝ পদ্মায় ডুবে যায় এমভি পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাওয়া যাত্রীদের চাপ ছিল তখন।
সেদিনটিতেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর বাতাস ছিল।
শিবচরে পিনাক-৬ ডুবিতে স্বজন হারানো কয়েকটি পরিবারের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, এই দিনটিতে তারা হারানো স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য দোয়া-মাহফিল করে থাকেন।'
শিবচরের পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচর এলাকার নিহত মিজানুর রহমান তার স্ত্রী ও দুই সন্তান লঞ্চ ডুবিতে মারা যায়। সন্যাসীরচর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ফরহাদ মাতুব্বর, তার স্ত্রী শিল্পী, এক বছর বয়সী সন্তান ফাহিম ও শ্যালক বিল্লালসহ সকলের মৃত্যু হয় পদ্মায় ডুবে। যাদের লাশ শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
শিবচরের কাদিরপুর এলাকার মেধাবী দুই বোন ও তাদের এক খালাতো বোনেরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায়। ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাবার সাথে ঢাকা ফিরতেছিল তারা। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর পদ্মার প্রবল স্রোত ঠেলে তাদের বাবা ভেসে উঠতে পারলেও সন্তানদের আর বাঁচাতে পারেনি।
নিহত হীরার পরিবার জানান, 'মেয়ে হারানো কষ্ট সব সময় কাঁদায়। পদ্মার পাড়ে গেলেই মনে পড়ে। আমি চাই আমার মত যেন কোন বাবাকে এভাবে তার মেয়েকে হারাতে না হয়। তাছাড়া লঞ্চ মালিকদের অনুরোধ করবো যাতে তারা তাদের লঞ্চের ধারন ক্ষমতার বাহিরে কোন যাত্রী না তোলে এবং প্রশাসনের কঠোর নজরধারী যেন থাকে।'
বিআইডব্লিউটিএ'র বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাটের ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, 'পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির পর খুব সাবধানতার সাথে নৌরুটে লঞ্চ চালানো হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধারণ ক্ষমতার বাইরে যাত্রী উঠানো হয় না। এছাড়াও ফিটনেসবিহীন কোন লঞ্চ চলাচল করতে দেওয়া হয় না।'
শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান জানান, 'পিনাক-৬ ডুবিতে উদ্ধারকৃত যে সকল লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তা পৌর কবরস্থানে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে দাফন করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত লাশের খোঁজে কেউ আসেনি।’
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'পিনাক ৬ ডুবিতে অনেকেই মারা গেছেন। লঞ্চ ডুবিতে নিঁখোজও হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। বর্তমানে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচলে কঠোর রয়েছে প্রশাসন। সব সময়ই লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছি অতিরিক্ত বোঝাই করে যাত্রী পারাপার না করতে। লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিয়মিত মনিটরিং করছি। তাছাড়া আবহাওয়া বৈরি হলেই নৌরুটে লঞ্চ বন্ধ রাখা হচ্ছে।'