চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে হোঁচট খেলো বাংলাদেশ। জুলাইয়ে ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ১১.১৯ শতাংশ কম, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬.৮৫ শতাংশ কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোরবানির ঈদের ছুটি এবং লকডাউনের কারণে ১০-১১ দিন পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় জুলাই মাসে রপ্তানি আয় কম এসেছে। ১লা আগস্ট থেকে কারখানা খুলেছে। প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। পচুর অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। এখন যদি আর কোনো সমস্যা না হয় তাহলে আগামী দিনগুলোতে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
ইপিবি’র তথ্যানুসারে, জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক, পাট ও পাটপণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ, কৃষি পণ্যসহ প্রায় সব খাতের রপ্তানি আয়ই কমেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার (৩.৪৭ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছে বাংলাদেশ।
এই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৭২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আয় এসেছিল ৩৯১ কোটি ডলার। রপ্তানি কমেছে ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এ হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, এই বছরের জুলাইতে সার্বিক রপ্তানি আয় কমেছে ১১.১৯ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম এসেছে প্রায় ৭ শতাংশ।
ইপিবি’র তথ্যে দেখা যায়, মহামারির মধ্যেও বড় উল্লম্ফন নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছর। ৩০শে জুন শেষ হওয়া ওই অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ (৩৮.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল; যা ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ১৫.১০ শতাংশ বেশি।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে করোনাভোইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেয়া লকডাউনের কারণে একদিনও রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক কারখানা বন্ধ থাকেনি। চলমান শাটডাউনেও ১লা আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফলে বরাবরের মতো রপ্তানি আয়ে প্রধান ভূমিকা রাখে পোশাক খাত।
এদিকে, জুলাইয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে ২৮৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১৬৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১২২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। জুলাইয়ে এই খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০১ কোটি ২৭ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরের জুলাইয়ে আয় হয়েছিল ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে পোশাক খাত থেকে আয় কমেছে ১১.০২ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে কমেছে ৪.১৭ শতাংশ। নিটে কমেছে ৫.২৫ শতাংশ; ওভেনে ১৭.৮ শতাংশ।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, জুলাইয়ে রপ্তানি আয় কম আসবে; এটা অবধারিত ছিল। ঈদের ছুটি ও লকডাউনের কারণে টানা প্রায় দুই সপ্তাহ সব কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন হয়নি; রপ্তানিও হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের পোশাকের বড় বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মানুষজন আগের মতো কেনাকাটা শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি বাড়বে। গত অর্থবছরের একটা ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই অর্থবছরও শেষ হবে বলে আশা করছি।
অন্যান্য খাতের মধ্যে জুলাই মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে আয় হয়েছিল ১২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাইতে পাট খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৪১ দশমিক ২৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ৫০ দশমিক ০৮ শতাংশ। এই মাসে হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কৃষি পণ্য কমেছে ৩ শতাংশের মতো। তবে, ওষুধ রপ্তানি প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
গত ১লা জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩.৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে ৩৫.১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম ছিল ২৬ শতাংশ।