× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এক্সক্লুসিভ / সিলেটে যে প্রকল্প নিয়ে অনেক প্রশ্ন

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৫ আগস্ট ২০২১, বৃহস্পতিবার

সিলেটের একটি প্রকল্প ৮ মাস ধরে ঝুলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ড. একে আব্দুল মোমেন ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ডিও দিয়েছেন। বার বার যোগাযোগ করেছেন; কিন্তু প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। মাত্র চার কোটি টাকার এই প্রকল্প নিয়ে অনেক ক্ষোভ সিলেটে। জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। সিলেটের মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রকল্পটি কেন অনুমোদিত হচ্ছে না- এই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই। আগে সম্পন্ন হলে এই প্রকল্পে চার কোটি টাকায়ই শেষ হতো, এখন নতুন করে এটিতে এসে যুক্ত হয়েছে অক্সিজেন প্ল্যান্টও। ফলে চার কোটি টাকায়ও এখন আর প্রকল্পটি ম্পূর্ণ হবে না।
করোনার শুরু থেকেই সিলেটের মানুষের চাহিদায় ছিল সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা। শহীদ
শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতাল করা হলেও সেটিতে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া ও আইসিইউ বাড়ানো নিয়ে সংকট দেখা হয়। তখন এগিয়ে এসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তার প্রচেষ্টায় হাসপাতালে আইসিইউ সাপোর্ট বাড়ানো হয়। প্রবাসীরা এগিয়ে এসে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করেন। বেসরকারি উদ্যোগ থেকে সহায়তা নিয়ে চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য দুটি গাড়ির ব্যবস্থা করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রবাসীদের সহায়তায় কিডনি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শামসুদ্দিন ছাড়াও সিলেটের অন্য দুটি কোভিড হাসপাতাল খাদিমপাড়া ও দক্ষিণ সুরমায় চিকিৎসা শুরু করা হয়। প্রথমে দরজা বন্ধ রাখলেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনা চিকিৎসা শুরু করেন। আর এখন করছেন রীতিমতো যুদ্ধও। সিলেটের করোনার চিকিৎসায় সরকারি সুবিধা বলতে প্রথম পর্যায়ে ততটা প্রয়োজন পড়েনি। এমনকি কোভিড ছাড়া অন্য রোগীদের চিকিৎসা স্বাভাবিক রাখতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে রিজার্ভ রাখা হয়। কিন্তু ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শুরু হওয়ার আগেই প্রস্তুতি বিবেচনায় নিয়ে সিলেটে সরকারিভাবে করোনা চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের দুটি তলায় সাড়ে ৪শ’ বেডের আইসোলেশন সেন্টার চালুর প্রস্তাব করা হয়। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আইসোলেশন সেন্টার চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের অর্থায়নে দুটি ওয়ার্ডে বেডসহ সরঞ্জামাদি জোগান দেন। কিন্তু বাদ সাধে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা। করোনা রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্ট খুবই প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন চার কোটি টাকা। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই চার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে গত ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় এবং বার বার ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে প্রকল্পটির বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু বার বার আশ্বাস দেয়া হলেও ওই প্রকল্পের ছাড় দেয়া হয়নি। এমনকি সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রকল্পের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ডিও দিলেও তাতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কর্ণপাত করেননি। সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার পর মাত্র চার কোটি টাকা ব্যয়ে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু না করতে পারায় খেসারত এখন দিতে হচ্ছে সিলেটের মানুষকে। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটেছে সিলেটে। পরিসংখ্যান বলেছে; সিলেটের অর্ধেক মানুষই এখন করোনা আক্রান্ত। গত জুলাই মাসে সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার। আইসিইউ ও অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দিনে দিনে সিলেটে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে করোনা পরিস্থিতি। এখন হাসপাতালে রোগী ভর্তির জায়গা নেই। প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতালের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দিয়েও করোনা রোগীর ঠাঁই দিতে পারছে না। ওসমানী হাসপাতালের চারটি ওয়ার্ডে প্রায় ৩০০ বেডের জায়গা করার পর বেশি সংখ্যক রোগী হাসপাতালমুখী হওয়ার কারণে এখন ফ্লোরিং করা হচ্ছে। আগস্টে এসেও হাসপাতালমুখী রোগীর স্রোত কমছে না। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রস্তাবিত সাড়ে ৪শ’ বেডের আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের বিষয়টি। শুধু মাত্র অক্সিজেনের অভাবের কারণেই করোনা চিকিৎসার আইসোলেশন সেন্টারটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন- ‘হাসপাতালে নতুন আইসোলেশন সেন্টার চালু করতে এখন অক্সিজেন সাপোর্ট নতুন করে বাড়াতে হবে। এজন্য অক্সিজেন প্ল্যান্টও প্রয়োজন। অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো ছাড়া নতুন আইসোলেশন সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে না। কারণ- রোগী ভর্তি করলে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হবে।’ তিনি জানান- ‘প্রকল্পটি নিয়ে আমরা যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি সরকারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে দ্রুতই সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।’ এদিকে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- বর্তমান সময়ে ওসমানীতে বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের ৯০ শতাংশেরই অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে। এ কারণে বর্তমানে যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে সেটি দিয়ে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। প্রয়োজন বিবেচনায় এখন একদিন অন্তর অন্তর অক্সিজেন কোম্পানি হাসপাতালে প্ল্যান্টে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে ৪শ’ বেডের আইসোলেশনের সেন্টারের জন্য মাত্র চার কোটি টাকা বরাদ্দ না দেয়ায় ক্ষুব্ধ সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এখন আর টাকার জন্য বসে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন। শুধু তিনি অনুমতি চান। সিলেটের মানুষের সহযোগিতা নিয়ে এই আইসোলেশন সেন্টার চালু করার কথা জানিয়েছেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দীর্ঘ দিন উপ-পরিচালক ছিলেন ডা. হিমাংশু লাল রায়। এখন তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক। প্রকল্পটি কেন অনুমোদিত হচ্ছে না- এ প্রশ্নের উত্তরও তার কাছে জানা নেই। জানালেন- ‘সিলেটের নগর ভবনের বৈঠকে শেষ পর্যন্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে; টাকা দিতে না পারলে যেন জানিয়ে দেয়া হয়। এরপর স্থানীয়ভাবে এই প্রকল্পটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে বলে জানান তিনি।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর