নানির সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মা নাজমা বেগমের লাশ নিতে এসেছে শিশু নয়ন। সাত বছর বয়সী নয়ন মৃত্যু কি জিনিস বোঝে না। কেন এসেছে জানতে চাইলে নয়ন জানায়, আম্মুকে নিতে এসেছি। মায়ের মৃত্যু নিয়ে অনেকটা ভাবলেশহীন ছিল শিশুটি। ক্ষীণ শরীরে মর্গের সামনে নানির হাত ধরে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিল মায়ের অপেক্ষায়। নয়নের নানি কল্পনা আক্তার বলেন, গতকাল স্যাররা ফোন করেছিলেন। বগুড়া থেকে মেয়ের লাশ নিতে এসেছি। এদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুসের কারখানায় পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া আরেক নাজমা খাতুনের মরদেহ নিতে এসেছেন তার ভাই হাবিব ও বোন মমতাজ।
বাসায় রেখে এসেছেন বোনের ১৩ বছরের ছেলে নাজমুল ও ৬ বছরের মেয়ে পাখিকে। মায়ের অপেক্ষায় ছোট্ট পাখি। মৃত নাজমার বোন মমতাজ বলেন, সিআইডি পুলিশের ফোন পেয়ে ভুলতা থেকে বোনের পুড়ে যাওয়া দেহের অংশ বিশেষ নিতে এসেছেন তারা। বোনকে অন্তত দাফন করতে পারবেন সেই সান্ত্বনা নিয়ে বাসায় ফিরবেন। তবে মৃত নাজমার সন্তানদের বাসায় গিয়ে কি জবাব দেবেন? নাজমুল-পাখি ওরা জানে তাদের মা ছোট খালার বাসায় বেড়াতে গেছেন। আসার সময় তারা জানতে চেয়েছে, খালা মা আসবে না? তোমরা কোথায় যাও? বর্তমানে ছোট খালার বাসায় আছে ওরা। আগুনে নিহত ৪৮ জনের মধ্যে ৪৫ জনের মরদেহ শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গ থেকে স্বজনদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি জানায়, সরকারি খরচে মরদেহগুলো স্বজনদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। গতকাল দুপুর ২টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. ইমাম হোসেনের উপস্থিতিতে এ লাশ হস্তান্তর করা হয়। মো. আয়াত হোসেন, মো. নাঈম ইসলাম, নুসরাত জাহান টুকটুকি, হিমা আক্তার, মোসা. সাগরিকা শায়লা, খাদেজা আক্তার, মোহাম্মদ আলী, তাকিয়া আক্তার, মোসা. শাহানা আক্তার, মোসা. মিতু আক্তার, জাহানারা, মোসা. ফারজানা, মোসা. ফাতেমা আক্তার, মোসা. নাজমা খাতুন, ইসরাত জাহান তুলি, মোসা. নাজমা বেগম, রাশেদ, মো. রাকিব হোসেন, ফিরোজা, মো. তারেক জিয়া, মো. রিপন মিয়া, মোসা. শাহানা আক্তার, মো. মুন্না এবং রিয়া আক্তারসহ মোট ২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ হস্তান্তরের সময় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মাহফুজুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুর নবী এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।