তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ রাখলে পশ্চিমা ব্রান্ডগুলো তাদের অর্ডার অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারে। সরকার ভয়াবহ করোনা মহামারির ঢেউ সত্ত্বেও এসব কারখানা খোলার নির্দেশ দিয়েছে। এরপরই কয়েক লাখ গার্মেন্টকর্মী বড় বড় শহরগুলোতে ফিরেছেন। ফলে ট্রেন এবং বাস স্টেশনে উপচে পড়ে তাদের ভিড়। বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানা নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা এএফপি’কে উদ্ধৃত করে এসব কথা লিখেছে অনলাইন গার্ডিয়ান। এতে আরো বলা হয়, আগে থেকেই সরকার নির্দেশ দিয়েছে ২৩ শে জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত সব কারখানা, অফিস, পরিবহন এবং দোকানপাট বন্ধ থাকবে। এর ফলে এক সপ্তাহের জন্য মানুষ তাদের ঘরে বন্দি হয়ে পড়েন। তবে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ এবং মৃত্যু রেকর্ড পর্যায়ে উঠে যায়।
তবে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় শীর্ষ স্থানীয় ব্রান্ডগুলো সরবরাহ দেয় এমন বৃহৎ কিছু কারখানাকে জাতীয় পর্যায়ে লকডাউনের বাইরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোববার সরকার দেশের ৪৫০০ গার্মেন্ট কারখানাকে খুলে দেয়ার নির্দেশ দেয়। এতে কাজ করেন বাংলাদেশের কমপক্ষে ৪০ লাখ মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে শিল্পনগরীগুলোতে ওইসব মানুষের ঢল নামতে শুরু করে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, প্রভাবশালী গার্মেন্ট কারখানাগুলোর মালিকরা সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, যদি সময়মতো বিদেশি ব্রান্ডগুলোর অর্ডার শেষ করা না যায়, তাহলে তাতে করুণ এক বিপর্যয় নেমে আসবে। ফলে কারখানা খুলে দেয়ার নির্দেশ পেয়ে কয়েক লাখ কর্মী, যারা পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন, তারা আবার ফিরতে শুরু করেন। লকডাউন ভঙ্গ করে ট্রেন, বাস ও ফেরিতে করে ঢাকামুখী হন। অন্যরা বর্ষাকালীন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে রওনা দেন।
ঢাকা থেকে ৪৫ মাইল দক্ষিণে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে কয়েক লাখ কর্মী ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকেন নদী পাড়ের জন্য। গার্মেন্টকর্মী মোহাম্মদ মাসুম (২৫) বলেছেন, তিনি ভোরে গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। কমপক্ষে ২০ মাইল হেঁটেছেন। তারপর রিক্সা নিয়েছেন ফেরিঘাটে আসতে। তিনি বলেন, বিভিন্ন চেকপয়েন্টে পুলিশ আমাদের থামিয়েছে। আর ফেরি ছিল মানুষে মানুষে পূর্ণ। আরেকজন গার্মেন্টকর্মী জুবায়ের আহমেদ বলেছেন, বাড়ি যাওয়ার জন্য সবাই পাগলের মতো ছুটেছিল। কারণ, লকডাউন দেয়ার পর বড় ছুটি পেয়েছে এ খাতের মানুষ। আবার এখন আমরা কাজে ফেরার সময় বড় রকম সমস্যার মুখোমুখি।
বিশ্বে সবচেয়ে বড় গার্মেন্ট রপ্তানিকারকদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই শিল্পের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ১৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষের দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ। বাংলাদেশে নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, যদি কারখানা বন্ধই থাকতো তাহলে ৩০০ কোটি ডলারের রপ্তানি অর্ডার ঝুঁকিতে পড়তো। এসব ব্রান্ড তখন তাদের অর্ডার অন্য দেশকে দিয়ে দিতো।