ক্যাশ রিসিট স্পর্শ করার ফলে মানব দেহে বিপজ্জনক রাসায়নিক বিসফেনলএ (বিপিএ) ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর সাম্প্রতিক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। সাধারণত রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানে থার্মাল পেপার ক্যাশ রিসিটের জন্য ব্যবহৃত হয়, যার ফলে মানুষের হাতের মাধ্যমে বিপিএ মানব দেহে প্রবেশ করে থাকে। থার্মাল পেপার থেকে বিপিএ রক্তের মাধ্যমে দ্রুত শোষিত হয় ফলে ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো রোগ বৃদ্ধি পায়।
আজ বৃহস্পতিবার এসডো অনলাইন আয়োজনের মাধ্যমে ‘বিপিএ ইন রিসিট: টক্সিন ইন ফিঙ্গার’ শীর্ষক রিপোর্টের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
গবেষণা অনুসারে ক্যাশ রিসিটে ০.০৮ % থেকে ৩.৭% মাত্রায় বিপিএ পাওয়া গেছে (ওজন দ্বারা প্রমাণিত) যার সর্বনি¤œ হার ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন-ইইউ এর আদর্শ হার (০.০২%) এর চেয়ে বেশি। বিসফেনলএ বা বিপিএ, একটি অন্ত:স্র্রাব ক্ষতিকারক রাসায়নিক যা মানব দেহ, পরিবেশ, প্রাণী এবং উদ্ভিদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষকদের মতে, প্রাথমিকভাবে এস্ট্রোজেন সাপ্লিমেন্ট হিসেবে তৈরি বিপিএ, নবজাতক ও শিশুদের বিকাশের সমস্যা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যান্সার, স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের কারণ হয়ে থাকে ।
গবেষকরা বলছেন, বিপিএ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে - প্লাস্টিকাইজার হিসেবে প্লাস্টিকের বোতল এবং খাদ্য ক্যান লাইনার তৈরিতে, ক্রেডিট-কার্ড এবং ক্যাশ নিবন্ধন রিসিটে, বিক্রয় রিসিটে, এটিএম রিসিটে, প্রেসক্রিপশন প্রিন্ট করতে ব্যবহৃত থার্মাল ইমেজিং পেপারে, এয়ারলাইন টিকিট এবং অন্যান্য মেশিন- উৎপাদিত রিসিটে।
অনুষ্ঠানের পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রিসিটে বিপিএর উপস্থিতি উপেক্ষা করা উচিত নয়। তিনি জনসচেতনতা ও আইনী পদক্ষেপের নেয়ার প্রতি জোর দেন।
এসডোর রিসার্চ টিম প্রধান ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, সাধারণত রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানে থার্মাল পেপার ক্যাশ রিসিটের জন্য ব্যবহৃত হয়, যার ফলে মানুষের হাতের মাধ্যমে বিপিএ মানব দেহে প্রবেশ করে থাকে।
থার্মাল পেপার থেকে বিপিএ রক্তের মাধ্যমে দ্রুত শোষিত হয় ফলে ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো রোগ বৃদ্ধি পায়।
গবেষণায় দেখা গেছে , রিসিট থেকে বিপিএ ত্বকে প্রবেশ করে যার ফলে মানবদেহে বিপিএর পরিমাণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। গবেষকদের মতে, ত্বকের যতেœ ব্যবহৃত পণ্যগুলো এবং হাতের জীবাণুনাশকগুলোতে বিপিএ শোষণের হার বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে।
এসডো রিসার্চ টিম বাংলাদেশের জনপ্রিয় আউটলেটগুলোতে ব্যবহৃত থার্মাল পেপারে বিসফেনল-এ (বিপিএ) সম্পর্কে জনসচেতনতার জন্য ফেব্রুয়ারি ২০১৯ থেকে জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৫০ জন (গ্রাহক এবং খুচরা বিক্রেতা) উপর ভিত্তি করে একটি বেসলাইন সার্ভে করে থাকে। এছাড়া স্থানীয় দোকান (ফাস্ট ফুড, সুপার শপ, রেস্তোরাঁ, ফার্মেসি, এটিএম ইত্যাদি) এবং জরিপকৃত এলাকার এটিএম বুথ থেকে এসডোর গবেষণা দল ক্যাশ রিসিট সংগ্রহ করে। পরীক্ষাগারে থার্মাল পেপার পরীক্ষায় ১০ থেকে ৫৩ ইউজি/সিএম ২ পর্যন্ত বিপিএর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যার সম্পর্কের জনগণের কোনো ধারণা ছিল না।
সাবেক সচিব ও এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মারগুব মোরশেদ বলেন, বিপিএ সম্পর্কে বর্তমান যে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে তা এসডোর গবেষণার জন্য সম্ভব হয়েছে। সরকারের এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা উচিত এবং এই ক্ষেত্রে এসডো অবশ্যই সর্বাত্মক সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এনামুল হক নগদ রশিদ প্রাপ্তিতে বিপিএ-এর ঝুঁকির মাত্রা খুঁজে বের করতে এসডো যে গবেষণা শুরু করেছে, এই উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, মানুষ দৈনন্দিন জীবনে যেভাবে এই রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসছে এবং এর সংক্রমণ বাড়ছে তা নিয়ে এখনই আমাদের কাজ করতে হবে। এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, বিপিএ সংবলিত রিসিটগুলোর জন্য পৃথক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা প্রয়োজন তা না হলে আমাদের খাদ্য এবং পানি দূষিত হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. আবু জাফর মাহমুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল হাসেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এসডোর মহাসচিব এবং গবেষণা দলের নেতা ড. শাহরিয়ার হোসেন অধিবেশনটি পরিচালনা করেন।