× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২১: / করোনা আক্রান্ত মা নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন?

শরীর ও মন

ডা. ফাহমিদা জাবীন
৫ আগস্ট ২০২১, বৃহস্পতিবার

শিশুর জন্য মায়ের দুধ একটি পরিপূর্ণ ও সর্বোৎকৃষ্ট খাবার। পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত একটি শিশুর সঠিক শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য যে সকল পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন তার সবই শুধু মায়ের দুধে সঠিক পরিমাণে রয়েছে। শিশুর অন্তত ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে, তবে পাশাপাশি ৬ মাস পর থেকে ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার দ্বারা শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে হবে। মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৭০ টিরও বেশি দেশ এই মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করছে। ২০১০ সাল থেকে জাতীয়ভাবে বাংলাদেশেও প্রতিবছর বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে।
 
এ বছর বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- “প্রোটেক্ট ব্রেস্টফিডিং- এ শেয়ারড রেসপন্সিবিলিটি”;বাংলায় যার মর্মার্থ দাঁড়ায়- “মাতৃদুগ্ধ দান সুরক্ষায়: সকলের সম্মিলিত দায়।” সফলভাবে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো একটি দলগত প্রচেষ্টা। ওয়ার্ল্ড অ্যালিয়েন্স ফর ব্রেস্ট ফিডিং অ্যাকশন (ডাব্লিউএবিএ) কর্তৃক বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ (ডাব্লিউবিইউ-এসডিজি ২০৩০)-এর এরিয়া ২ প্রচার লক্ষ্যে এই প্রতিপাদ্য অনুযায়ী বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সফল মাতৃদুগ্ধপানের সাথে নারী, শিশু ও জাতির সুস্বাস্থ্য জড়িত। এ বছরের প্রতিপাদ্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে- মাতৃদুগ্ধপান সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা; মাতৃদুগ্ধপান সমর্থনকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা; বৃহত্তর প্রভাব তৈরিতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়কে নিযুক্ত করা; জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে মাতৃদুগ্ধপান সুরক্ষাকে শক্তিশালী করা।
 
গর্ভাবস্থা ও প্রসব পরবর্তী দুগ্ধদানের সময়টি একজন কর্মজীবী মা ও তার পরিবারের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও নাজুক।
মা ও নবজাতকের সঠিক সুরক্ষায় প্রয়োজন প্রসবকালীন, প্রসব পরবর্তী সুস্থতা এবং নবজাতকের স্তন্যদানে পর্যাপ্ত সময়। পাশাপাশি আবশ্যকীয় এই মাতৃত্বকালীন ছুটিতে তার কর্মক্ষেত্রে কোন সমস্যা যেন তৈরি না হয়, সেটিও লক্ষ্যণীয়। মাতৃত্বকালীন সুরক্ষাই পরবর্তীতে শিশুকে সফল দুগ্ধদান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পারে। দ্যা প্যান আমেরিকা হেলথ অর্গানাইজেশন (পিএএইচও)/ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য ও তা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি আইন (ইন্টারন্যাশনাল কোড অব মার্কেটিং) প্রয়োগে কঠোর হবার নির্দেশনা দিয়েছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, স্তন্যদানকারী মা যেন কোনভাবেই বিপণন, শিল্প অথবা জনস্বাস্থ্য কর্মীর দ্বারা ফর্মুলা দুধ প্রচারণার প্ররোচনায় দুগ্ধদানে বাধাগ্রস্ত না হয়।
 
মাতৃদুগ্ধপান নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় পুষ্টিসেবা ও বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) যৌথ উদ্যোগে অত্যন্ত সার্থকতার সাথে দীর্ঘদিন যাবত বছরব্যাপী বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচীর মাধ্যমে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বে বর্তমানে শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৪% হলেও বাংলাদেশে এই হার ৬৫% হয়েছে। উল্লেখ্য যে জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ নিশ্চিত করলে ৩১% নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। যদিও মাতৃদুগ্ধদান মায়ের অধিকারভুক্ত, তথাপি স্বামী, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, কর্মক্ষেত্র এবং সমাজের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পেলে সফল মাতৃদুগ্ধদান সম্ভব।
 
বর্তমান করোনা মহামারীতে দুগ্ধদানের ক্ষেত্রে বিশেষ পরামর্শ হচ্ছে- একজন আক্রান্ত মা তার সুস্থ নবজাতককে নিশ্চিন্তে সরাসরি বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিশুর সান্যিধ্যে সঠিক নিয়মে মাকে মাস্ক পরিধান করার পাশাপাশি নিয়মিত হাত এবং ব্রেস্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মা ও শিশু একই কক্ষে অবস্থান করতে পারবে; তবে সম্ভব হলে দুগ্ধদানের সময় ছাড়া অন্য সময় ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং শিশুর পরিচর্যায় একজন সুস্থ সাহায্যকারী নিয়োজিত থাকবে। মা অথবা শিশু বেশি অসুস্থ থাকলে যদি দুধ খেতে বাধা না থাকে, তাহলে আক্রান্ত মায়ের এক্সপ্রেসড বুকের দুধ দেওয়া যাবে।
 
মাতৃদুগ্ধ পান করানো মায়ের অধিকার। মাতৃদুগ্ধদান-এর মাধ্যমে মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য এবং ভালো থাকা নিশ্চিত করা যায়, যা একটি দেশের উন্নতি এবং অগ্রগতির প্রধান শর্ত। আসুন আমরা সবাই মিলে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২১-কে সফলভাবে পালন করি ও সম্মিলিতভাবে এর বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই।
 
বর্তমান করোনা মহামারীতে দুগ্ধদানের ক্ষেত্রে বিশেষ পরামর্শ হচ্ছে- একজন আক্রান্ত মা তার সুস্থ নবজাতককে নিশ্চিন্তে সরাসরি বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।
 
লেখক: কনসালটেন্ট- পেডিয়াট্রিক্স অ্যান্ড নিওনেটোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা
 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর