× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বুস্টার ডোজ: দরিদ্র দেশগুলোর প্রয়োজন না মিটিয়ে নয়

শরীর ও মন

ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার
১২ আগস্ট ২০২১, বৃহস্পতিবার

করোনাভাইরাসের বিরূদ্ধে যুদ্ধ জয়ের প্রত্যাশায় টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে কি হবে না সেই বিতর্ক এখন সব দেশেই কম বেশি শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ইসরাইল ৬০ বছরের বেশি বয়সী এবং অন্তত ৫ মাস আগে টিকা নিয়েছেন, এমন সবাইকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে। ফ্রান্স এবং জার্মানিও বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতও এই ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে। কম্বোডিয়া তাদের সম্মুখ সারির স্বাস্থ্য কর্মীদের ব্যাপারে একই কথা ভাবছে। যুক্তরাজ্য এবং সুইজারল্যান্ডও এ ধরণের পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনা টিকার বুস্টার ডোজের ব্যাপারে বিভক্ত মতামত দিয়েছে। দেশটির সরকার ফেডারেল ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর মতামতের জন্য অপেক্ষা করছে। এ ধরণের দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাঝে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস পৃথিবীর ধনী দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন, তারা যেনো বুস্টার ডোজের চিন্তা থেকে অন্তত আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সড়ে আসে।

যেসব দেশ এই মুহূর্তে বুস্টার ডোজ (মূলতঃ জনসন এন্ড জনসনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ, অন্য সব টিকার ক্ষেত্রে তৃতীয়) নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন তাদের যুক্তি দুর্বল, যেমন- রোগাক্রান্ত এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা।
তাদের যুক্তি, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার কারণে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত টিকার কার্যকারিতা হুমকির সম্মুখীন। দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও জনগোষ্ঠীর দুর্বল অংশ এই ভ্যারিয়েন্ট এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত এন্টিবডি তৈরি করতে পারবে না, আশানুরূপ সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে। সুতরাং, তাদেরকে বুস্টার ডোজ দিতে হবে।

পৃথিবীব্যাপী এই বিতর্কের অবতারণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারক ফাইজার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বৌরলা। তিনি বলেছেন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর কারণে টিকার ইমিউন রেসপন্স ১০ মাসের মধ্যেই দ্রুত কমে যায় এবং এই দুর্বলতা কাটাতে তৃতীয় ডোজের টিকা নিতে হবে। মডার্নার স্টিফেন ব্যান্সেলও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট কেন্দ্রিক এই একই ভীতির কথা উল্লেখ করেছেন। সমালোচকরা প্রমাণ দেখতে চাইলে তারা ইসরাইল থেকে প্রাপ্ত অপ্রকাশ্য তথ্যের 'রেফারেন্স' দিয়েছেন। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে বুস্টার বা তৃতীয় ডোজের টিকা প্রথম দুই ডোজের চেয়ে এন্টিবডি তৈরিতে অধিক কার্যকর। অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন বাজার দখল আর অধিক মুনাফা লাভের আশায়ই কিছু কিছু টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বুস্টার ডোজ নিয়ে সম্প্রতি বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।

ধনী দেশগুলোর সম্পূর্ণরূপে টিকা গ্রহণকারীদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেকটাই আন্তর্জাতিক সংহতি এবং সাম্যের পরিপন্থী; বিশেষ করে সরবরাহ জনিত সমস্যার কারণে পৃথিবীর অধিকাংশ জনগোষ্ঠীই যখন টিকার আওতার বাইরে৷ এখন পর্যন্ত শতকরা ৮০ ভাগের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে ধনী দেশগুলোয়। যখন যুক্তরাজ্যে টিকা দেওয়ার হার ৬৫ শতাংশ, তখন এই হার আফ্রিকার সকল দেশে মাত্র ২ শতাংশ। যখন ধনী দেশগুলোতে ১০০ জনের বিপরীতে ১০১ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে তখন দরিদ্র দেশগুলোতে প্রতি ১০০ জনের বিপরীতে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১.৫ ডোজ টিকা।

এই ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ খুবই মানবিক। আর তা হলো যেসব দেশ ইতিমধ্যেই অধিকহারে টিকা দিতে পেরেছে তাদের উচিত তৃতীয় বুস্টার ডোজের চিন্তা না করে উদ্বৃত্ত টিকা দরিদ্র দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া যেখানে এখনো করোনার টিকা পাওয়া জনগোষ্ঠীর হার নিতান্তই কম।

জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, দরিদ্র দেশগুলোর টিকা না পাওয়া কোটি কোটি মানুষ শুধু নিজেরাই করোনায় ভুগবে না, বা মারা যাবে না; তারা নিয়মিত নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করে পৃথিবীর সবাইকেই দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলবে, যার হাত থেকে ধনী দেশগুলোরও বাঁচার সম্ভাবনা থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে লাভবান হবে কয়েকটি টিকা প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান এবং তাদের দোসররা। কিন্তু পরাজিত হবে পৃথিবীর সকল মানুষ এবং মানবতা।

লেখকঃ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর