কলিজার টুকরা আমার,
শুরুতেই আদর নিস। অনেকদিন তোকে দেখি না। মনে লয় উড়ে যাই তোর কাছে। কিন্তু আমি যে মানুষ। আমার যে পাখা নেই। যে পাখায় ভর দিয়ে উড়বো। তোকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি টেরই পাই না। আসলে জীবনটাই এমন।
নারী হয়ে জন্ম নেয়া, বেঁচে থাকা, জীবনটাকে এগিয়ে নেয়া সত্যিই বড় কঠিন। আমি যেটা করে এসেছি। তুই যেটা করছিস। তুই যেদিন ঘর আলো করে আমার কোলে এলি সেদিন যেন গোটা পৃথিবীটা আমি পেয়েছি। তোর বাবা আনন্দে আত্মহারা। তোর পৃথিবীতে আসা উপলক্ষে পাড়া- প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে খাওয়ালো তোর বাবা। আস্তে আস্তে তুই বড় হতে থাকলি। একসময় স্কুলে দিলাম। দেখতে দেখতে এসএসসি পাস করলি। এরপর এইচএসসিও পার হলি। অনার্সে ভর্তি হলি। কতো যে স্বপ্ন তোকে নিয়ে। এরই মধ্যে তোর বিয়ে আসতে থাকলো। ভালো একটি পরিবার দেখে তোকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। দুই পক্ষ মিলে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হলো। আস্তে আস্তে সময় ফুরিয়ে আসছে। আসল বিয়ের দিন। অনেক মানুষকে দাওয়াত দেয়া হলো। গোটা বাড়িতে মানুষ আর মানুষ। তোর বিয়ের অতিথি। ধুমধাম করে বিয়ে দিলাম। মনে পড়ে গেল তোর জন্মের পর যেভাবে মানুষকে খাওয়ানো হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই যেন তোর বিয়ের দিনও আনন্দ করা হলো। পাত্রের হাতে তোকে সঁপে দিলো তোর বাবা। এরপর তোর বাবার সে কি কান্না। জীবনে তোর বাবাকে এভাবে কাঁদতে দেখিনি। আসলে তুই ছিলি তোর বাবার কলিজার টুকরা। তোকে না দেখলে এক মুহূর্তও তোর বাবা থাকতে পারতো না। আজও সে তোর জন্য কাঁদে। আজ তুই দেশ ছেড়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে আমেরিকায় বসতি গড়েছিস। প্রতিদিনই কথা বলিস। মোবাইল ফোনে তোকে দেখে দেখে কথা বলি। কিন্তু মা, মনের তৃপ্তি যে মেটে না। তোকে যে ছুঁয়ে দেখতে পারি না। তোর বাবা অপেক্ষায় আছে, কখন তুই আসবি। তোকে জড়িয়ে ধরে তোর বাবা শান্তির নিঃশ্বাস নেবে। যত তাড়াতাড়ি পারিস এসে তোর বাবাকে দেখে যা। আমার নাতি কেমন আছে? আর জামাইকে আমার আদর দিস। অনেক কিছু লেখার ছিল-রে মা। চোখের কোণে জল জমে গেছে। গাল বেয়ে মাটিতে পড়ছে। ভালো থাকিস মা। শুধু ভাবি, তোর মতো আমিও একদিন তোর বাবার হাত ধরে তোদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আপনজন ছেড়েছিলাম। এরপর তোকে পেয়ে আপনজন ছাড়ার কষ্ট ভুলে যাই। এখন তুই-ই সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে বসতি গড়েছিস। সুখে থাক মা।
ইতি
তোর গর্ভধারিণী