× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

টার্গেট কাবুল তৎপর তিন গোয়েন্দা বস

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার

হলিউডের সিনেমার চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয় তার জীবন। অজিত দোভাল। এখন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। ছিলেন ঝানু গোয়েন্দা। ছদ্মবেশে পাকিস্তানে কাটিয়েছেন সাতটি বছর। গেল সপ্তাহে সিআইএ বস উইলিয়াম জে. বার্নসের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক সারলেন তিনি। প্রধান এজেন্ডা আফগানিস্তান। নিশ্চিতভাবেই ঘুরেফিরে পাকিস্তানের কথাও ওঠে এসেছে।
এ সময় পাশের দেশে কাটানো পুরনো স্মৃতি কি উঁকি দিয়েছিল তার মনে? রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান নিকোলাই পত্রুশেভও গত বুধবার বৈঠক করেছেন দোভালের সঙ্গে। এজেন্ডা না বলে দিলেও চলে!
অজিত দোভাল যখন দিল্লিতে আফগানিস্তান নিয়ে ব্যস্ত তখন কী করছেন পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) প্রধান ফয়েজ হামিদ। গত সপ্তাহে তিনি সরাসরি হাজির হন কাবুলে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘকালব্যাপী যে ছায়াযুদ্ধ চলছে তার একটি কেন্দ্র আফগানিস্তান। আপাতত এ ছায়াযুদ্ধে পাকিস্তান জিতেছে। কেননা তালেবানের সঙ্গে আইএসআইয়ের সংশ্লিষ্টতা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। এ সংগঠনটি তৈরির পেছনেও বড় ভূমিকা ছিল আইএসআইয়ের। কেন এই সময়ে আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদের কাবুল সফর তা নিয়ে নানা আলোচনা। সাধারণত এ ধরনের সফর অনেকটা গোপনে হলেও আইএসআই প্রধান প্রকাশ্যেই এ সফর করেন। আফগানিস্তানে নেমেই হাস্যোজ্জ্বল জেনারেল নিশ্চয়তা দেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা কাজ করছি। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। মূলত সেখানকার বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্যই তার এই সফর এমনটাই বলা হয়েছে নানা বিশ্লেষণে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন তিন তারকা জেনারেল। ২০১৯ সালে তিনি আইএসআই-এর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। বালুচ রেজিমেন্ট থেকে আসা ফয়েজ হামিদ মহাপরিচালক হওয়ার আগে আইএসআই’র অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শাখার দায়িত্বে ছিলেন।

আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধ আপাতত শেষ হয়েছে। আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে মার্কিন বাহিনী। চলে গেছে অন্য পশ্চিমা শক্তিগুলোও। তাদের সমর্থিত সরকারেরও পতন হয়েছে। তালেবান এরইমধ্যে নতুন কেয়ারটেকার সরকার গঠন করেছে। বলা হয়েছে, সরকারের আকার আরও বাড়বে। নানা জাতি-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু সামনের দিনগুলো কেমন যাবে তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা। বিশ্ব রাজনীতির প্রবল পরাক্রমশালীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। কেবলই কি আফগানিস্তান? পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই তৎপরতা বেড়েছে সুপার পাওয়ারদের। তৎপর ঝানু গোয়েন্দারা। বসে নেই চীন ও রাশিয়াও। তালেবানদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে নতুন পরাশক্তি চীন। অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়াও তার প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট, ব্যাটল শেষ হলেও ওয়ার শেষ হয়নি।

নতুন এই সমীকরণে গোয়েন্দা বসরাই সম্ভবত রাখতে চলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তালেবানদের হাতে কেবল কাবুলের পতন হয়েছে। মার্কিন সেনাদের দেশটি ত্যাগের সময়সীমা বাড়ানো হবে কিনা তা নিয়ে নানা আলোচনা। এরইমধ্যে তৎপর হয়ে উঠলেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র প্রধান উইলিয়াম জে. বার্নস। তিনি ছুটে এলেন কাবুল। বৈঠক করলেন তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা গণি বারাদারের সঙ্গে। বলে রাখা ভালো, সিআইএ প্রধানের এই পুরো সফরটিই হয়েছে গোপনে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ায় এখন সেখানে সিআইএ’র কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আসবে। তাদের ফোকাস এখন সেখানে চীন ও রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের ওপরেও রাখতে হবে। সিআইএ চাইলেও আগের মতো সমগ্র আফগানিস্তানজুড়ে জাল বিস্তার করে রাখতে পারবে না। আবার তাদেরকে এখন হাজার হাজার মার্কিন সেনা ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হচ্ছে না। এতদিন আফগানিস্তানে জঙ্গি শনাক্ত ও ব্যবস্থা নেয়াই ছিল সিআইএ’র প্রধান কাজ।

দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র ভারত। আফগানিস্তান পরিস্থিতি দেশটিতে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। পশ্চিমা শক্তি সমর্থিত আফগান সরকারের সঙ্গে ভারতের খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দেশটি আফগানিস্তানে ব্যাপক বিনিয়োগও করেছিল। মূলত পাকিস্তানের ভূমিকা খর্ব করার জন্যই ছিল ভারতের এসব তৎপরতা। নতুন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছে ভারতও। কথা বলেছে, তালেবান নেতাদের সঙ্গে। এই অবস্থায় দিল্লিতে উইলিয়াম বার্নস বৈঠক করেন অজিত দোভালের সঙ্গে। অন্যদিকে, রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান নিকোলাই পত্রুশেভের সঙ্গে দোভালের বৈঠকে চীন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ডিবি ভেঙ্কটেশ বর্মা বলেন, দোহা’য় তালেবানদের সঙ্গে যে শান্তি আলোচনা হয়েছে তা সঠিক ফল বহন করে আনেনি। আফগানিস্তান ইস্যুতে ভারত ও রাশিয়া একত্রে কাজ করলে ভালো ফল আসবে। এদিকে আফগানিস্তান যুদ্ধে রাশিয়া তালেবানকে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তাছাড়া মার্কিনিদের আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া রাশিয়ার জন্য স্বস্তির বিষয়ও। তবে তালেবানকে নিয়ে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার মধ্যেও। অজিত দোভালের সঙ্গে আলোচনার সময় এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন নিকোলাইন পত্রুশেভও। ভারত আশঙ্কা করছে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আফগান ভূমি ব্যবহার করে হামলা চালাতে পারে। তেমনি রাশিয়ার আশঙ্কা হচ্ছে, তালেবানের উত্থান মধ্য এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ বিস্তার করতে পারে। সেখানে আবার রাশিয়ার সরাসরি স্বার্থ জড়িত। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই এ অঞ্চলে তৎপরতা বাড়বে রাশিয়ারও।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর