‘এর আগেও স্কুল খুলবে বলে আর খোলে নাই। এইবারও ভাবছিলাম হয়তো আগের মতো হবে। তবে আজকে সরকার সত্যি সত্যি স্কুল খুলে দিয়েছে। মেয়েকে একটু আগে স্কুলে ঢুকিয়ে দিলাম। এখন তাই মনে একটু স্বস্তি পাচ্ছি। তাদের পড়াশোনা নিয়ে এতদিন খুব টেনশনে ছিলাম।’ গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের জামালখান মোড়ের ডা. খাস্তগীর স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদককে এমনটা বলছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান নামে এক অভিভাবক। নানা অনিশ্চয়তার পরও করোনা পরিস্থিতির কারণে ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল খুলেছে স্কুল মাদ্রাসাসহ উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই সারা দেশের মতো সকাল থেকে চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয় ওঠে।
কচিকাঁচা এই ছেলে-মেয়েদের হাসি কথা গানে আবারো মুখর হয়ে উঠেছে মানুষ গড়ার এসব কারখানা। সেইসঙ্গে আপাতত কেটেছে বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে মোহাম্মদ শাহজাহানের মতো অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে নগরীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের হাসিমুখ উপস্থিতি। দীর্ঘদিন পর নিজেদের প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে সকলের চেহারাতেই ছিল খুশির ঝলক। নগরের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল আবছার বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফিরেছে। তাদের পদচারণায় ফের মুখরিত প্রাণের ক্যাম্পাস। করোনায় দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত তারা। আমরাও তাদের একসঙ্গে সরাসরি ক্লাসে পেয়ে খুব খুশি। এদিকে, নগরী ও জেলার ১১৪৮টি স্কুল কলেজ ছাড়াও মাদ্রাসাসমূহে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সশরীরে ক্লাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়েছে। মাস্ক পরে আসেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে। ক্লাস রুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সকালে নাসিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মাহমুদউল্লাহ মারুফ সাংবাদিকদের বলেন, সতর্কতামূলক নানা ব্যবস্থা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। মাস্ক পরা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে আসার আগে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। স্কুলের একটি কক্ষে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিভাবকদেরও গেটে জটলা না পাকাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসের অধীনে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও উচ্চ বিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় ২ হাজার ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব বিদ্যালয় গতকাল সকাল ৮টা থেকে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হয়েছে।