× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘আসুন ভূরাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আফগানিস্তানকে পুনর্গঠন করি’

দেশ বিদেশ

মাখদুম শাহ মাহমুদ কুরেশি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার

যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগের পর আফগানিস্তান এক ঐতিহাসিক ‘ক্রসরোডে’, যেখান থেকে চূড়ান্তভাবে যুদ্ধ এবং অস্থিতিশীলতার চক্র ভেঙে ফেলা যায়। অথবা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে এ দেশটি। যদি সেটা হয় তাহলে তা জনগণের জন্য অব্যক্ত এক ভয়াবহতা নিয়ে আসবে। ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এ অঞ্চলে। আফগানিস্তানের জটিল অবস্থার কারণে আফগানিস্তান তো ভুগছেই। তারপর সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পাকিস্তান।
আমাদের ৮০ হাজার মানুষ হতাহত হয়েছেন। তাও সহ্য করতে হয়েছে আমাদের। কমপক্ষে ১৫০০০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে আমাদের।
এখনো আমরা প্রায় ৪০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছি। একটি ছোট দেশের জনসংখ্যাকে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ করে দেয়ার মতো বিষয়টি। কিন্তু আমরা অবিচল। আমাদের সামনে এখান থেকে সরে যাওয়ার কোনো বিকল্প বা ঝোঁক ছিল না। একেবারে নিকটবর্তী প্রতিবেশী হওয়ার কারণে আমাদের মধ্যে কোনো বিলাসিতা ছিল না এবং এর সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার কোনো ইচ্ছেও ছিল না।
আফগানিস্তানে দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলো খোলা রেখেছে পাকিস্তান। আমাদের জাতীয় বিমান সংস্থা পিআইএ সব বিপদকে পিছনে ফেলে সাহসিকতা দেখিয়ে কূটনৈতিক মিশনগুলোর কর্মকর্তাদের, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কর্মকর্তাদের, আন্তর্জাতিক এনজিও এবং মিডিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উদ্ধার করেছে। সাধ্যে যতটুকু কুলায় ততটুকু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পাকিস্তান। পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে বাস্তবসম্মত অত্যাবশ্যক পদক্ষেপ নিতে হবে। আফগানিস্তানের পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে এবং তা অব্যাহত আছে। এ অবস্থা পাকিস্তান তৈরি করেনি। কিন্তু ‘চিরজীবনের যুদ্ধ’ বন্ধে সমঝোতায় সহায়তা করার চেষ্টা করেছি আমরা।
আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা আনার প্রক্রিয়া দমন করার প্রবণতায় লিপ্ত ‘স্পয়লারস’ বা বিপথগামীদের বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানায় পাকিস্তান। আফগানিস্তান এমনিতেই গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত। প্রয়োজন সেই ক্ষত সারিয়ে তোলা। নিষ্ঠুর কারসাজি প্রয়োজন নেই। সাইবার প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করবেন না। ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ফাটল ধরাবেন না।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি, আমরা বলি- শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে এবং একটি অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় এড়াতে আফগানিস্তানকে সাহায্য করতে হবে। অতীতের ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন না, যা আফগান সমাজের ভেতরে ফাটলকে আরও গভীর করে। সামরিক পদক্ষেপ, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে এই ফাটল বেড়ে গিয়েছিল। আর পশ্চিমা করদাতাদের অর্থের অপচয় হয়েছিল। গঠনমূলক সংযুক্তি এবং ইতিবাচক বার্তার মধ্য দিয়ে প্রণোদনাকে উৎসাহিত করুন।
আফগানিস্তানে নতুন ব্যবস্থার জন্য, আমরা বলি- একটি প্রকৃত পুনর্মিলন ঘটানোর চেষ্টা করুন। এমন একটি রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করুন, যেখানে জাতি বা লিঙ্গগত কারণে কেউই নিজেকে বঞ্চিত মনে না করেন। একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে, পাকিস্তান শুধু শান্তি প্রক্রিয়াকেই সহজ করে দেয় নি। একই সঙ্গে আফগানিস্তান ইস্যুতে আঞ্চলিকতাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। টেকসই শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য আফগানিস্তানের সব রাজনৈতিক দলকে একত্রে কাজ করার পাশাপাশি আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে পর্যন্ত গিয়েছি।
আন্তর্জাতিক প্রতিটি দেশকে আফগানিস্তানে বহুদলীয় পুনরেকত্রীকরণের জন্য খাঁটি প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানাই। আফগানিস্তানে যথেষ্ট যুদ্ধ হয়েছে। আফগানিস্তানের পর এতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্ভোগের দেশ পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে রয়েছে পরিবর্তিত পাকিস্তানের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। ভূরাজনীতি থেকে ভূ-অর্থনীতির দিকে পাকিস্তান তার পলিসি পরিবর্তন করেছে। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ অঞ্চল প্রত্যাশা করি। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতিকরণের দিকে আমাদেরকে সহায়তা করবে পারস্পরিক সংযোগের এজেন্ডার বিষয়ে অনুধাবন। আফগানিস্তানের জন্য উদার সমর্থন- একটি ভঙ্গুর, দুঃশাসনময় অবস্থা থেকে প্রকৃত একটি পটপরিবর্তনে সহায়ক হবে। এর মধ্য দিয়ে তারা পরিণত হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি দায়িত্বশীল সদস্যে।
আফগানিস্তানকে সাহায্য করলে সেখানে অর্থনৈতিক ধস এবং শরণার্থী সংকট প্রতিরোধে সহায়ক হবে। এই সময়ের প্রেক্ষাপটে আর্থিক পদক্ষেপ সাধারণ আফগানদের দুর্ভোগকেও কমিয়ে দেবে। তাদেরকে দম বন্ধ করা এক অবস্থায় না ফেলে, আমরা তুলে আনার জন্য আমাদের হাতকে প্রসারিত করবো।
সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণির নেতৃত্বাধীন সরকার তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে। এতে অনেক ধারণার জন্ম হয়েছে। ছিল উদ্বেগ, হতভম্বতা। একটি আঞ্চলিক ‘অ্যাক্টরের’ বিনিয়োগ বিফলে গেছে। এই আঞ্চলিক ‘অ্যাক্টর’ চেয়েছিল আফগানিস্তানকে পাকিস্তান বিরোধী ‘ট্রোজান হর্স’ বানাতে।
আসুন আমরা ভূরাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে যাই। বেদনা লাঘবের চেষ্টা করি। আফগানিস্তানের দুর্ভোগ কমানোর চেষ্টা করি। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সব দায়িত্বশীল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায় পাকিস্তান। আর যেন, সেই অবস্থার প্রত্যাবর্তন না ঘটে। আমাদের এগিয়ে আসার মধ্যে নির্দেশমূলক ধারণা থাকতে পারবে না। একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান আঞ্চলিক সত্যিকার সুযোগগুলোকে উন্মুক্ত করে দেবে। তাই আসুন এমন একটা যুগের সুযোগকে আমরা কাজে লাগাই।
(লেখক পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনলাইন খালিজ টাইমসে প্রকাশিত তার লেখার অনুবাদ)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর