সিলেটের শেরপুরে ইউসিবিএল ব্যাংকের বুথ লুট করেছে পেশাদার একটি চক্র। পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজে লুটের দৃশ্যের যেটুকু ধারণ রয়েছে এতে বোঝা যাচ্ছে ওরা পেশাদার। ঘটনার সময় মুখোশ পরা, হাতে গ্লাভস ছিল ডাকাতদের। ফলে প্রমাণের কোনো চিহ্নই রেখে যায়নি। এছাড়া বুথ লুটের আগে ওরা কালো স্প্রে দিয়ে সিসিটিভির ক্যামেরা আড়াল করে দেয়। সব কিছু মাথায় রেখেই ওরা ব্যাংকের বুথ লুটের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এদিকে ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পুলিশ কাউকে চিহ্নিত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পুলিশের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে।
গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ স্থানীয়দের ভাষ্য থেকে ধারণা পেয়েছে ব্যাংকের বুথ যারা লুট করেছে তারা নদীর ওপার থেকে এসেছিল। ভোরে মুখোশপরা চারজনকে মোটরসাইকেল যোগে শেরপুরের মৌলভীবাজার অংশের চৌরাস্তা দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। সিলেটের শেরপুর। প্রাচীন এক জনপদ। এক সময়ের বাণিজ্যিক এলাকা। রোববার ভোররাতে শেরপুরের ওসমানীনগর অংশে টোলপ্লাজার কাছের বাজারের ইউনূস মার্কেটে থাকা ইউসিবিএল ব্যাংকের বুথে হঠাৎ হানা দেয় ৪-৫ জন অস্ত্রধারী। তারা বুথের দরোজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। এ সময় ওই বুথে থাকা সিকিউরিটি গার্ড তাদের বাধা দিলেও কোনো কাজ হয়নি। তারা জোরপূর্বক ভেতরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সিকিউরিটি গার্ডকে বেঁধে ফেলে। সিসিটিভির ফুটেজে সিকিউরিটি গার্ডকে বেঁধে ফেলা পর্যন্ত দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। এরপর দুর্বৃত্তদের একজন হাতে থাকা কালো রঙের স্প্রে প্রথমে বুথের কাছে ছিটায়। এরপর বুথে ভেতরে দুটি সিসিটিভি ফুটেজের ক্যামেরার গ্লাসেও ছিটায়। এতে সিসিটিভি ফুটেজ অদৃশ্য হয়ে পড়ে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অস্ত্রধারী লুটেরা চলে যাওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই বুথে প্রায় ২৪ লাখ টাকা ছিল। সব টাকাই তারা নিয়ে গেছে। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ডাকাতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা খুবই কৌশলী। মুখোশ পরা ছাড়াও হাতে গ্লাভস ছিল। তাদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। তিনি জানান, ধারণা করা হচ্ছে; মৌলভীবাজার অংশ থেকে এসে ঘটনা ঘটিয়ে তারা চলে গেছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে ঘটনাকারী অপরাধীরা দ্রুত গ্রেপ্তার হবে। এদিকে- শেরপুরের ওসমানীনগর অংশের বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী শেরপুরের দুটি অংশ। একটি হচ্ছে উত্তর অংশ, যেটি সিলেট জেলার ওসমানীনগর এলাকায় অবস্থিত। টোলপ্লাজার অবস্থান ওই অংশে। অপরটি হচ্ছে- দক্ষিণ অংশ। যেটি মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মিলনস্থলে চৌরাস্তা অবস্থিত। শেরপুরে দক্ষিণ অংশে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। এরপরও দক্ষিণ অংশ অপরাধ প্রবন এলাকা। নানা ধরনের অপরাধীরা দক্ষিণ অংশের নদীর তীর ও আশেপাশের এলাকায় বসবাস করে। মাদক, তীর, জুয়ার আসর বসে ওই এলাকায়। ফলে অপরাধের অন্যতম ক্রাইম জোন হিসেবে চিহ্নিত শেরপুরের দক্ষিণ অংশের বাজার ও আশপাশ এলাকা। ওই এলাকায় অবস্থান গেড়ে অপরাধীরা দক্ষিণ অংশে ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটায়। কয়েক বছর আগে হঠাৎ করে শেরপুরের ওসমানীনগর অংশের কয়েকটি গ্রামে প্রায় প্রতি রাতেই ডাকাতি সংঘটিত হতো। ওই সময় ওসমানীনগর থানা পুলিশ ডাকাতদের ধরতে পারেনি। পরে খবর নিয়ে জানা গেল- দক্ষিণ অংশের ঘাপটি মেরে থাকা ডাকাতরা নৌকা যোগে এসে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়। পরে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ পুলিশের যৌথ অভিযানে ডাকাতি রোধ করা সম্ভব হয়েছিল। এবারের ব্যাংক লুটের ঘটনা একইভাবে দক্ষিণপাড়ের ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধীরা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।