× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তালেবানের ক্ষমতা দখলের এক মাস, ভয়াবহ মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে আফগানরা

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১, বুধবার, ৫:৫৭ অপরাহ্ন

তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের এক মাস পূর্ণ হলো। কট্টরপন্থী এই মিলিশিয়া বাহিনীকে এখন শুধু যুদ্ধ নয়, একটি সরকারও পরিচালনা করতে হচ্ছে। আফগানদের সামনেও এখন চ্যালেঞ্জের অভাব নেই। গত ৪ দশক ধরে যুদ্ধ চলছে সেখানে। প্রাণ হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বিদেশি সেনারা আফগানিস্তানে আসার পর গত ২০ বছরে অবস্থা কিছুটা এগিয়েছিল। সেসময় শত শত বিলিয়ন ডলার উন্নয়নের পেছনে ব্যয় হয়েছে। তবে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এখন ডুবতে বসেছে সবই।
খরা আর দুর্ভিক্ষের কারণে লাখ লাখ আফগান গ্রামাঞ্চল ছেড়ে শহরমুখী হয়েছে।
দেশটির একটি বড় অংশ টিকে আছে সরাসরি আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপরে। এখন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপি জানাচ্ছে, এই মাসের মধ্যেই আফগানিস্তানে তাদের খাদ্যের যোগান ফুরিয়ে আসতে শুরু করবে। এতে করে না খেয়ে থাকতে হবে ১ কোটি ৪০ লাখ আফগানকে। ফলে এখন পশ্চিমাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তালেবানকে। তারা ক্ষমতায় আসার পর নারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে নানা কঠিন নিয়ম কানুন। তালেবানের মন্ত্রীসভায় স্থান পাননি কোনো নারী। খেলাধুলার সুযোগ বঞ্চিত করা হয়েছে তাদেরকে। অথচ তালেবানই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ক্ষমতায় এলে তারা নারীর অধিকার নিশ্চিত করবে। এছাড়া, রয়েছে আল-কায়দা, ইসলামিক স্টেটসহ অন্য জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার উদ্বেগও। তালেবান বলেছিল, তারা আফগান ভূমিকে ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে দেবেনা। তবে তালেবানকে বিশ্বাস করছে না পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। ফ্রান্স সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, তালেবানের সঙ্গে কোনো ধরণের সম্পর্কে জড়াবে না তারা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আরও একবার তালেবানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তালেবানের জন্য এখনও আশার কথা যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ তার বেশিরভাগ পশ্চিমা মিত্র এখনও বলছে, তারা তালেবানের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষন করে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা আফগানিস্তানে সাহায্য অব্যাহত রাখবে। তবে তা সরাসরি না হয়ে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে।  

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানদের উন্নতির সকল স্বপ্নই এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতির বেহাল দশা। চারদিকে শুধু ক্ষুধা আর ক্ষুধা। কাবুলের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল-জাজিরাকে জানান, আফগানিস্তানের প্রতিটি শিশু এখন ক্ষুধার্ত। তাদের কাছে এক মুঠো খাবার কিংবা তেল নেই। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরের এক ভিডিও ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এখনই ৪০ লাখের বেশি আফগানের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। আফগানিস্তানের ৭০ ভাগ মানুষই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করে। সেখানে এখন প্রচন্ড খরা চলছে যা দেশের ৭৩ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করেছে। দেশটির ৩৪ প্রদেশের ২৫টিই খরায় বিপর্যস্ত। আফগানদের জন্য শীতকালীন গম চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশীরভাগ আফগানের ক্যালোরির চাহিদা পূরণ হয় গমের মাধ্যমেই। তাই যদি সেখানে যদি ফসল উৎপাদনও হ্রাস পায় তাহলে তার প্রভাব পড়বে পুরো দেশের ওপরেই। অপুষ্টিতে ভোগার পাশাপাশি বাড়বে মানুষের স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কাও। সব মিলিয়ে মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। এদিকে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটির ব্যাংকিং সিস্টেম বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর সামনে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন। সেখানে সপ্তাহে মাত্র ২০ হাজার জনকে টাকা তোলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তাও সর্বোচ্চ ২০০ ডলার করে। বাড়ছে খাদ্যের দামও। কাবুলে খাবারের দাম দেখা গেছে আকাশচুম্বী।  

এমন ভয়াবহ অবস্থায় আফগানদের পাশে দাঁড়াতে কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘ। মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুঁতেরা আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর কাছে আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এরইমধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতারা। কিন্তু এটি কতখানি সাহায্য করবে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। দেশটিতে যখন বিদেশি সেনারা ছিল তখনও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য এসেছে। দেশটির সরকারের ব্যায়ের ৭৫ শতাংশই ছিল বিদেশি সাহায্য থেকে। সেখানে তালেবানের অধীনে সামনের দিনগুলোতে আফগানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। দেশটিতে কোনো চাকরী নেই। গত জুলাই মাস থেকে বেতন ছাড়াই কাজ করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর এখন প্রতিটি দিন আগের দিনের থেকে খারাপ যাচ্ছে।

পাঞ্জশির ছাড়া পুরো দেশ তালেবানের দখলে থাকায় যুদ্ধ থেমে গেছে। ফলে নিরাপত্তার অবস্থা আগের তুলনায় ভাল। কিন্তু মানুষের আয় থেমে গেছে। এমনটাই বলছিলেন কাবুলের বিবি মাহরো এলাকার এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, প্রতিদিন আগের থেকে আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তিক্ত হয়ে উঠছে সব। এখানকার অবস্থা আসলেই ভয়াবহ।

কাবুলে বিমানবন্দর চালু হয়েছে এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। সেখানে বিদেশি সাহায্যও পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু এখনও তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্বের কোনো দেশ। পাকিস্তানসহ কিছু দেশ তালেবান সরকারের বিষয়ে ইতিবাচকতা দেখালেও স্বীকৃতি দিতে তাদের গড়িমসি এখন স্পষ্ট। কবে নাগাদ আটকে পরা ৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়া হবে তাও স্পষ্ট নয়। যদিও তালেবান জানিয়েছে, তারা আগের মতো কঠিন শরিয়া কায়েম করবে না। কিন্তু তাদের কথায় মন গলছে না বিশ্বের। তালেবান আসলেই বদলেছে তা বিশ্বাস করছে না কেউ। দিন যত যাচ্ছে তার পক্ষে প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসির কাছে তালেবানের বেসামরিক নাগরিক হত্যার প্রমাণ এসেছে। সাংবাদিকদের উপর নির্মম নির্যাতনের খবরও বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছে। এখনও নারীর অধিকার নিশ্চিতের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি তালেবানের কাছ থেকে। উল্টো তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে তালেবান সদস্যরা। সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অর্জনের ব্যর্থ হচ্ছে তারা। আফগানিস্তানের আগের সরকারের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের শেষ ছিলনা। কিন্তু এখনকার আফগানিস্তান প্রতিনিয়ত অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। এ নিয়ে কাবুলের এক মুদির দোকানের মালিক বলছিলেন, চোরেরা পালিয়েছে কিন্তু এখন রুটিও উধাও হয়ে গেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর