বিচারকের কাছে আর্জি জানিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন আমার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে, তখন সব ড্রয়ার ও আসবাবপত্র তছনছ করে ফেলে। এমনকি প্রেসক্রিপশনসহ আমার ওষুধের বক্সটা পর্যন্ত তারা নিয়ে যায়। আমার গাড়িসহ অন্যান্য জিনিসের কোনো কাগজপত্র আমার কাছে নেই। বাসায় আমি ছাড়া আর আমার কোনো কিছুই নেই। বাসার বিভিন্ন চাবিও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিত্রনায়িকা পরীমনি এসব ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, আমার আইফোন ও প্রসাধনীর বাক্স জব্দ করা হয়েছে।
পরীমনি সকাল সাড়ে ১১টার পরে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। সেখানে তাকে দেখার জন্য উৎসুক মানুষ ভিড় করে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা আদালত চত্বরে অবস্থান করার পর মামলার শুনানি শুরু হয়। তখন কড়া নিরাপত্তায় পরীমনি আদালতের এজলাসকক্ষে যান। তিনি এজলাসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ পর্যায়ে পরীমনি নিজেই আদালতে কথা বলেন। বিচারকের কাছে আর্জি জানিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন আমার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে, তখন সব ড্রয়ার ও আসবাবপত্র তছনছ করে ফেলে। এমনকি প্রেসক্রিপশনসহ আমার ওষুধের বক্সটা পর্যন্ত নিয়ে যায়। আমার গাড়িসহ অন্যান্য জিনিসের কোনো কাগজপত্র আমার কাছে নেই। বাসায় আমি ছাড়া আর আমার কোনো কিছুই নেই। এ পর্যায়ে গাড়ি ফেরত চেয়ে করা আবেদনের বিরোধিতা করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান। তিনি আদালতে বলেন, গাড়ির মালিকানা যাচাই ছাড়া জিম্মায় কীভাবে দেয়া সম্ভব? যেহেতু পরীমনি ও তার আইনজীবী বলছেন, গাড়িসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মালিকানার কাগজপত্র নেই, তাই তার আবেদন নাকচ করা হোক। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পরীমনির গাড়ির মালিকানা যাচাই করতে বিআরটিএ’কে নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে পরীমনি আদালত ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে গাড়ির হুড খুলে দেখতে আসা মানুষের দিকে হাত নেড়ে নয়া বার্তা দেন পরীমনি। এবার ডান হাতের তালুতে লিখলেন ‘..... মি মোর’। আদালত প্রাঙ্গণে হুডখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ ভক্তদের স্যালুট জানানোর সময় মেহেদিতে লেখা এই বার্তা নিয়েও চলছে ভক্ত-সমালোচকদের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ। উঠেছে গুঞ্জন, ছবিটি হয়েছে ভাইরাল। কিন্তু এবারের ‘... মি মোর’ স্লোগানের ব্যাখ্যা আর মেলানো যাচ্ছে না। কারণ, আগের স্ল্লোগান ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’-এর সঙ্গে এবারেরটি বেশ বিপরীত। এবারের আদালত কেমন লাগলো, আবার কবে হাজিরা। এসব প্রশ্নের জবাবে পরীমনি গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত এখন আমার ভালোই লাগে। এখন তো সয়ে গেছে। আর সামনে হাজিরা..., ১০ই অক্টোবর। টানা ৫টা দিন বিছানায় পড়ে ছিলাম। আজ (১৫ই সেপ্টেম্বর) আদালতে গিয়ে একটু ভালো লাগছে। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে পরীমনি নিজেই হাজতখানার গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় পুলিশ ও তার কিছু আত্মীয় হাজতখানার ভেতরে প্রবেশ করেন।
এবারের বার্তাটি প্রসঙ্গে পরীমনি বলেন, ‘আমার কষ্ট লাগছে এখন। অনেকেই আমার বার্তাটি ঠিক বুঝতে পারছেন না, ভুল বুঝছেন। সবাই ভাবছেন আমি লিখেছি ‘লাভ মি মোর’। আসলে তো আমি লিখেছি ‘...ক (গালি) মি মোর’। কিন্তু কেন এই বার্তা? এখন তো সবই আপনার অনুকূলে। কার উদ্দেশে এটি বলেছেন? জবাবে পরীমনি বলেন, যারা আমার জীবন নিয়ে খেলতে চায় বা ঘাঁটতে আসে, তাদের সবাইকে আমি ওয়েলকাম করছি। আসো। ওয়েলকাম। আমি প্রস্তুত তোমাদের সঙ্গে এই খেলায় অংশ নিতে। দম যতদিন আছে, আমি শেষ অবধি এই খেলায় লড়ে যাবো।
এর আগে, গাড়ি, আইফোন ও প্রসাধনীর বাক্স জব্দ করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন জানিয়ে আদালতে আবেদন করেছেন পরীমনির আইনজীবী। এ সময় পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত আদালতকে বলেন, পরীমনির সাদা রঙের গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। গাড়ির ভেতর মালিকানা-সংক্রান্ত কাগজপত্র ছিল। গাড়িটি নিয়ে যাওয়ায় কোনো কাগজপত্র পরীমনির কাছে নেই। এজন্য গাড়ির মালিকানা-সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালতে জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আদালতকে আরও বলেন, পরীমনির আইপ্যাড, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্রও (আলামত) জব্দ করা হয়েছে। এসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকায় পরীমনি এখন নানান সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে গাড়ি না থাকায় তিনি নিরাপত্তাহুমকির মধ্যে আছেন। যে কোনো শর্তে তার এসব জিনিসপত্র ফেরত দেয়া হোক। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, যেহেতু এই ডকুমেন্টগুলো কোনো কাগজপত্র নেই, তাই যাচাই-বাছাই করা সম্ভব না। তাদের আবেদন নামঞ্জুর করার দাবি জানাচ্ছি। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তদন্ত কর্মকর্তাকে বিআরটিএ থেকে গাড়ির সঠিক মালিকানা যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। বুধবার মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় বিচারক আগামী ১০ই অক্টোবর দিন ধার্য করেন।