আফগানিস্তান সমস্যা জাতিসংঘ একাই সমাধান করতে পারবে বলে মনে করা একটি উদ্ভট কল্পনা বলে মন্তব্য করেছেন মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। তিনি আরো বলেছেন, আফগানিস্তানে অধিক সংখ্যক অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতা করার সুযোগও সীমিত। তবু আফগান জনগণের জন্য তিনি তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উল্লেখ্য, ১৫ই আগস্ট তালেবানরা আফগানিস্তানে পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করে। এরই মধ্যে এর মেয়াদ এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জাতিসংঘ মহাসচিবের সাক্ষাতকার নেয়। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আফগানিস্তানকে মেরামতের জন্য কোনো চাপ অনুভব করছেন কিনা? জবাবে অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেন, আমি মনে করি সবার মধ্যে একটা প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে জাতিসংঘের প্রভাব নিয়ে। কারণ, এখনও আফগানিস্তানে বিদেশি সংগঠন হিসেবে প্রধান সংগঠন জাতিসংঘ।
বিশ্ব দেখেছে আফগানিস্তানে হাজার হাজার সেনা পাঠাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
২০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসনের পর এ সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আল কায়েদার প্রয়াত প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেয়া তালেবান সরকারকে উৎখাত করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে খরচ করেছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। তারা অবশেষে দেখতে পেয়েছে তাদের সমর্থিত আফগান সরকার এবং সেনাবাহিনী তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। এরপর আগস্টে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে।
আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশন। সেখানে বিশ্ব নেতারা সমবেত হবেন। তার আগে জাতিসংঘ মহাসচিব ওইসব দেশকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তারা যখন এসব রিসোর্স ব্যবহার করে আফগানিস্তানের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে, তখন ওই পরিমাণ শক্তি ও অর্থ ছাড়া আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারবো এমনটা ভাবা উদ্ভট কল্পনা। এ সমস্যা তারা দুই দশকেই সমাধান করতে পারেননি। তবে যে দেশটি নাটকীয়ভাবে মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে তার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু জাতিসংঘ করবে বলে আশ্বাস দেন গুতেরাঁ। আফগানিস্তানে মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তালেবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগেই দেশটির অর্ধেক মানুষ বেঁচে ছিলেন বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করে। তাদের দুর্দশা প্রচ- খরা এবং খাদ্য সঙ্কটে আরো বৃদ্ধি পাবার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, দেশটির এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ অনাহারে থাকার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেছেন, ২০ বছর আগে তালেবানরা যেমন সরকার গঠন করেছিল সে রকম না হয়ে অধিক অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনের জন্য তালেবানদের আয়ত্তে আনার জন্য প্রচেষ্টায় তিনি সমর্থন দিয়ে যাবেন। তার ভাষায়, মধ্যস্থতায় খুব কমই সক্ষমতা আছে এক্ষেত্রে জাতিসংঘের। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর উচিত আফগান জনগণকে সমর্থন করা। গুতেরাঁ বলেন, আপনি অলৌকিক কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন না। জাতিসংঘ তালেবানদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু ইসলামিক এই আন্দোলনকারীরা আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনে কখনোই জাতিসংঘের ভূমিকা মেনে নেবে না।