‘নতুন সিলেট’ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে এবার সিটি করপোরেশনের ৮৩৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর একটি কনভেনশন হলে তিনি এই বাজেট ঘোষণা করেন। বাজেটে করোনাকালের নানা উদ্যোগ, ডেঙ্গু প্রতিরোধের ব্যবস্থা সহ নানা দিক উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, গোটা দেশের মডেল ভূ-গর্ভ লাইনের নতুন করে কাজ শুরুর ঘোষণা দেন মেয়র আরিফ। নগরীর আরও ১১টি সড়কের ভূ-উপরিস্থিত লাইন ভূগর্ভে যাচ্ছে বলেও জানান। এবার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ৮৩৯ কোটি ২০ লাখ ৭৬ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। আর এই বাজেট হচ্ছে; সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ বাজেট। বাজেটে আয় ও ব্যয় সমপরিমাণ ধরে সেটি প্রণয়ন করা হবে।
এবং লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেছেন মেয়র। বাজেট বক্তৃতায় মেয়র জানিয়েছেন- ‘সিলেটের সকল মানুষের সহযোগিতায় করোনা মোকাবিলা করে এবং শত ঝুঁকি উপেক্ষা করে সিলেটের উন্নয়ন- অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই সিলেটে দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে যেভাবে করোনা মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন তা অতুলনীয়। এই একতাই আমাদের সিলেটের বড় শক্তি। এই একতা, এই সাহস আমাদেরকে ‘নতুন সিলেট’ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।’ বাজেটে উল্লেখযোগ্য আয়ের খাত হচ্ছে; হোল্ডিং ট্যাক্স ৪৪ কোটি ৯২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের উপর কর ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের ওপর কর ২ দুই কোটি টাকা, পেশা ব্যবসার ওপর কর ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বিজ্ঞাপনের ওপর কর ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, বিভিন্ন মার্কেটের দোকান গ্রহীতার নাম পরিবর্তনের ফি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৯০ লাখ টাকা, ঠিকাদারি তালিকাভুক্তি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৩০ লাখ টাকা, বাস টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ৫৫ লাখ টাকা, ট্রাক টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ১৭ লাখ টাকা, খেয়াঘাট ইজারা বাবদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি ও দোকান ভাড়া বাবদ ১ কোটি টাকা, রোড রোলার ভাড়া বাবদ আয় ৬০ লাখ টাকা, রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বাবদ আয় ৫০ লাখ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে আয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, পানির সংযোগ লাইনের মাসিক চার্জ বাবদ ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা, পানির লাইনের সংযোগ ও পুনঃসংযোগে ফি বাবদ ৮০ লাখ টাকা, নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন ও নবায়ন ফি বাবদ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা সহ আয়ের আরও অনেক খাত উল্লেখ করা হয়েছে। মেয়র জানান, ‘নগরবাসী নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পরিশোধ করলে বাজেট বছরে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব খাতে সর্বমোট ৮২ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।’ বাজেটে ব্যয়ের খাত দেখানো হয়েছে সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ১০ কোটি টাকা, কোভিড-১৯ মোকাবিলা, ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার উপ-খাতসহ সরকারি বিশেষ মঞ্জুরি খাতে ৩১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, অন্যান্য প্রকল্প মঞ্জুরি বাবদ ১ কোটি টাকা, সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প ১০ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ১৩০ কোটি টাকা, ২০১৮ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প খাতে ২৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা, মহানগরীর নাগরিক সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের জন্য আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ২৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, নগর ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প খাতে ২০ কোটি টাকা, দক্ষিণ সুরমা এলাকায় শেখ হাসিনা শিশু পার্কে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২ কোটি টাকা, মহানগরীর যানজট নিরসন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন ছড়া খনন ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ প্রকল্প খাতে ১০ কোটি টাকা, সিটি করপোরেশন এসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে জমি অধিগ্রহণ খাতে ৩০ কোটি টাকা, সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ফিলিং স্টেশন স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, সিটি করপোরেশনের প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, কুমারপাড়ায় সিটি করপোরেশনের নগর মাতৃসদন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা। বাজেট ঘোষণাস্থলে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিসিক কাউন্সিলরবৃন্দ, সিসিকের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাজেট বক্তৃতা শেষে মেয়র সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।