× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খালা-বোনঝির চিত্রকাব্য

বাংলারজমিন

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার

শামীমা বেগম। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রান্সপোর্ট)। আর নওরিন ফারহানা নিশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। সম্পর্কে দু’জন আপন খালা-বোনঝি। একজনের আঁকা চিত্রকাব্যকে ভাবনায় রূপ দিয়েছেন আরেকজন। দুইয়ের সমন্বয়ে-‘চিত্রকাব্য’।
 পেশায় কর্মগুণে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লেখালেখিতেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন পুলিশের পদস্থ নারী কর্মকর্তা শামীমা বেগম। তার বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এরই মধ্যে।
২০১৪ সালে ভিকটিম সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে ডিসি হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন ভিকটিমদের জীবন অভিজ্ঞতা ভিত্তিক গ্রন্থ ‘জীবন স্তব্ধ, জেগে ওঠে শব্দ’ সম্পাদনা করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গকৃত স্মারকগ্রন্থ ‘প্রতীতি’। মুজিব জন্মশত বর্ষপূর্তির আয়োজনে যার প্রকাশ ঘটে। টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, মহেড়া জমিদার বাড়ি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে রচিত হয়েছে তথ্যভিত্তিক এই স্মারকগ্রন্থটি। এটি প্রকাশনায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। এর আগে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ- স্মৃতির উঠোন, ভালোবাসার অনুকাব্য। সর্বশেষ যুগল প্রকাশনা ‘চিত্রকাব্য’।
পরিবেশ, প্রতিবেশ নিয়ে নওরিন নিশির নিত্যনতুন ভাবনার প্রতিফলনে চিত্রায়িত শিল্পকর্ম মুগ্ধ হওয়ার মতো। চিত্রাঙ্কনে প্রাতিষ্ঠানিক হাতে খড়ি ছাড়া তার আঁকা ছবি এবং প্রকৃতি থেকে কুড়িয়ে আনা নানা উপকরণে সৃজিত চিত্রকলা ও ফটোগ্রাফিতে সংযোজিত হয়েছে অভিনবত্বের নতুন মাত্রা। নওরিনের অঙ্কিত চিত্র ও ছবির গভীর ভাবনায় একাত্ম্য হয়ে নিবিড় শব্দ বিন্যাসে কাব্য কথা সাজিয়েছেন তার খালা শামীমা বেগম। দু’জনের সৃজনশীল ভাবনার চিত্র ও কাব্য যাদুকরী এক ছোঁয়ায় বাঙ্ময় হয়ে ফুটে উঠেছে চিত্রকাব্যে। বঞ্চিত মানুষদের জন্য সেবা ও মানবিকতা এবং দেশ কাল, মাটি ও প্রকৃতির মায়া চিত্রায়িত হয়ে ওঠে শামীমা বেগমের সৃজনশীল ভাবনা আর লেখনীতে। তিনি পুলিশ ম্যাগাজিন ডিটেকটিভে নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি  বিপিডব্লিউএনের প্রকাশিত ম্যাগাজিনসমূহ সম্পাদনাতেও ভূমিকা রাখছেন।  
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ার মেয়ে শামীমা বেগম ১৯৯৯ সালের ২৫শে জানুয়ারি ১৮তম বিসিএস ব্যাচে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রশিক্ষণ পরবর্তী তিনি আরএমপি, ডিএমপি, পুুলিশ স্টাফ কলেজ, পুলিশ হেডকোয়াটার্সে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। জানা যায়, ডিএমপিতে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এর অধীনে থাকা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার,  ইনভেস্টিগেশন ইউনিট, কুইক রেসপন্স টিমের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের মানসিক, সামাজিক ও আইনগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে  সেবার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেন তিনি। এখানে দায়িত্ব পালনকালে ‘জীবন স্তব্ধ, জেগে ওঠে শব্দ’ গ্রন্থটি রচনা করেন। এছাড়া ভিকটিম সাপোর্ট সংক্রান্ত তথ্যমূলক ডকুমেন্টারি ‘জেগে আছি আমরা’ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে লিয়েনে ইউএনডিপির পুলিশ রিফর্ম প্রজেক্টে ভিকটিম সাপোর্ট এক্সপার্ট হিসেবে যোগদান করে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে মোট ৮টি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। যার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও নারীবান্ধব পরিবেশে সেবা ও আস্থা অর্জনের ভরসাস্থল তৈরি হয়। অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতির পর ২০২০ সালে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার টাঙ্গাইলে কমান্ড্যান্ট (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে সফলতার সঙ্গে অর্পিত প্রশিক্ষণ ও প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে মানবিক কাজের অংশ হিসেবে পিটিসি এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য ফ্রি চিকিৎসা এবং শীতকালে দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। করোনাকালীন ও বন্যায় এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। শামীমা বেগম ২০০৬-০৭ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ইয়ামাসুক্র আইভোরিকোস্টে ব্যানএফপিইউ-২ কন্টিনজেন্ট এবং ২০১০-১১ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সুদানে দায়িত্ব পালন করে দু’বার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক অর্জন করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি ও কৃতিত্বপূর্ণ  অবদানের জন্য ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম), ২০১৩ সালে আইজিপি গুড সার্ভিস ব্যাজ এবং বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড-২০১৬ কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সহ-সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ নারী পুলিশের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন। ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ওমেন পুলিশের রিজন-২২’র কো-অর্ডিনেটর এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সদস্য ছাড়াও বিসিএস উইমেন্স নেটওয়ার্কের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শামীমা। এর মাধ্যমে নারীদের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি, নারী ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছেন। শামীমা বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস সম্পন্ন করেছেন। তার স্বামী মো. মনির হোসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স)। পুলিশ চাকরি জীবনে বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে যোগদানে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেন শামীমা। অন্যদিকে নওরিন ফারহানা নিশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘আর্ট ইন ইউর হার্ট’ শিরোনামে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে নিশির আঁকা ছবি। দৃক গ্যালারিতে তার তোলা ছবি প্রদর্শিত ও বিক্রি হয়েছে এবং দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছে। রেনেসাঁ প্রকাশনী আয়োজিত ‘রংতুলির কাব্য’ ইভেন্টে তার আঁকা চিত্রকর্ম প্রকাশিত হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর