× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে শফিক চৌধুরীর সামনে চ্যালেঞ্জ

প্রথম পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, সোমবার

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীর জন্য 
। নিজেকে সর্বজনীন করার শেষ সুযোগ পেয়েছেন বলে মনে করছেন দলের নেতারা। তারা জানিয়েছেন- শফিকুর রহমান চৌধুরীর নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে একপেশে থাকার কারণেই সব সুযোগ একেক করে হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। এতে করে বিতর্কিত হন তিনি। নিজ দলে তার প্রতিপক্ষরা সেই সুযোগ লুফে নিয়ে তাকে মাঠছাড়া করে দিয়েছিলেন। ভাগ্যবান শফিক চৌধুরী। ফিরলেন ক্ষমতাবান হয়েই। এখন ফের সরব সিলেটের টিলাগড়ের শফিক চৌধুরীর ড্রয়িংরুম।
উপচে পড়ছেন নেতাকর্মীরাও। কিন্তু গত ১৯ মাস সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুখকর ছিল না শফিকুর রহমান চৌধুরী। এই সময়ে তাকে নিয়েও রাজনীতি কম হয়নি। দীর্ঘ বিরতির পর ওয়ান ইলেভেনের সময় সিলেট-২ আসনে ভোটের রাজনীতির মধ্য দিয়ে সিলেটে ফিরেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি’র তুখোড় নেতা এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন। এই জয়ের পর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। তখন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগকে শাসন করতেন মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামীম। নির্বাচনে জয়লাভের পর সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সাধারণ সম্পাদক হয়ে প্রত্যাবর্তন ঘটে শফিক চৌধুরীর। ইফতেখার হোসেন শামীমকে হটিয়ে তাকে সাধারণ সম্পাদক করায় দলের ভেতরে অনেক ক্ষোভ, অনেক বিক্ষোভ। এরপরও শফিক চৌধুরীই হয়ে উঠেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ভরসা। বলা হয়ে থাকে সিলেট আওয়ামী লীগের ‘চেইঞ্জিং মুভমেন্টের’ নায়ক হচ্ছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার হাত ধরেই সিলেট আওয়ামী লীগ নতুন পথে হাঁটা শুরু করেছিল। সাধারণ সম্পাদক হয়ে প্রায় সাত বছর সিলেট আওয়ামী লীগকে শাসন করেছেন তিনি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বের শেষ বেলায় এসে তিনি তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েন। সংগঠনের বিভিন্ন উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক দুর্বলতা, জেলা কমিটিতে নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভের কারণে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের সম্মেলনে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর আগে পর পর দুই দফা নিজের মনোনয়নপত্র দলের জন্য বিসর্জন দিলেও কেবলমাত্র সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় জেলার সভাপতি হতে লবিং চালালেও শফিকুর রহমান চৌধুরী সফল হতে পারেননি। ব্যাকফুটে চলে যান তিনি। কর্তৃত্ব চলে যাওয়ায় হঠাৎ করে হয়ে পড়েন নীরব। চলেও গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে। সিলেটের নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শফিকুর রহমান চৌধুরী সর্বজনীন হতে পারেননি। বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ বিবদমান ছিল। এর মধ্যে একটি পক্ষকে তিনি সবসময় সমর্থন দিয়ে গেছেন। নিজ এলাকার বিরোধী গ্রুপ তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে উঠেছিল। এ কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তার ওপর নাখোশ ছিলেন। এবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ঘোষণার পর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন সাবেক ছাত্রনেতা নাসির উদ্দিন খান। তিনি বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের আওয়ামী লীগকে নিয়ে নতুন মিশন শুরু করেন। তিনি দুই উপজেলার বিবদমান গ্রুপকে একসঙ্গে মিলে চলার উদ্যোগ নেন। এবং সেটি এখন অনেকখানি সফলও। এদিকে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন শফিক চৌধুরী। তাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করতেও নারাজ একাংশ। সিলেটের এমপিরা এই পদে তাদের মধ্যে একজনকে চেয়েছিলেন। আর এজন্য তারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলেছিলেন। সিলেট আওয়ামী লীগ এমনকি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেই বিষয়টির সুরাহা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি পৌঁছে দলীয় প্রধানের হাতে। পরে অবশ্য দলীয় প্রধানের নির্দেশে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি বা সহ-সভাপতি-১ পদে আসীন করা হয়। এরপর থেকে শফিক চৌধুরী রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হলেও সুবিধা করতে পারছিলেন না। দলের সব সিদ্ধান্তের দায়িত্ব ছিল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতেই। এই অবস্থায় চলতি মাসে মারা যান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এডভোকেট লুৎফুর রহমান। তার মৃত্যুর পর কপাল খুলেছে শফিক চৌধুরীর। দীর্ঘদিনের স্বপ্নে লালিত সভাপতির পদে ফের আসীন হলেন তিনি। এডভোকেট লুৎফুর রহমানের মৃত্যুর পর দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক পত্রে তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর থেকে অভিনন্দন জোয়ারে ভাসছেন শফিক চৌধুরী। ফের সরব তার ড্রয়িংরুম। আবারো চাঙ্গা তার বলয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকায় গিয়েও তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। সিলেটে ফিরে জেলা আওয়ামী লীগের সভা করেছেন। ১৩টি সাংগঠনিক কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, শফিকুর রহমান চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার পর বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন তার অনুসারীরা। তাদেরকে নিয়েই তিনি সম্প্রতি ঢাকায় সফর করেছেন। এতে করে স্থানীয়ভাবে এলাকায় নতুন করে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। তারা জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ পাওয়া শফিক চৌধুরী এখন দলের সব বলয়ের নেতাদের কাছে সর্বজনীন নেতা হয়ে ওঠাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। তার দিকে নজর রাখছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর