ঝুঁকিতে থাকা সাবেক প্রায় ২০ জন আফগান দোভাষী নিউজিল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেনের কাছে ভিসা আবেদন করে অনুনয় করছেন। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া মিলছে না। এসব আফগান নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দোভাষী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তারা দেশটির সরকারের কাছে আবেদন করছেন তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনের অনুমতি দিতে। কিন্তু সরকার থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ফলে এসব মানুষ প্রধানমন্ত্রী আরডেনের সঙ্গে কথা বলার দাবিতে পার্লামেন্টের বাইরে সমবেত হয়েছেন। তারা মিলে গড়ে তুলেছেন আফগান ভ্যাটের্যান ইন্টারপ্রিটার্স এসোসিয়েশন। দ্বিতীয় দিনের মতো আজ মঙ্গলবার তারা প্রধানমন্ত্রী আরডেন অথবা অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস ফাফোইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পেতে পার্লামেন্টের বাইরে সমবেত হয়েছেন।
তাদের কাছে তারা নিজেদের দুর্ভোগের কথা জানাতে চান। হ্যামিলটন থেকে তারা মন্ত্রীদের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। পাঠিয়েছিলেন ইমেইল। করেছিলেন ফোন। কিন্তু এর কোনোটিরই সাড়া পাননি তারা। তাদের কথা সরকারের কান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হ্যামিলটন থেকে ছুটে গেছেন ওয়েলিংটনে। সোমবার তারা পার্লামেন্টের সামনে ১০ ঘন্টা অবস্থান করেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলতে কোনো মন্ত্রী এগিয়ে যাননি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
আফগানিস্তানে প্রায় ৪০০ মানুষকে ফেলে গেছে নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে আছে ৪৩টি পরিবার। এসব মানুষ নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনী, অথবা সরকারি প্রজেক্টে কাজ করেছেন। এর মধ্যে ছিলেন দোভাষী, শ্রমিক অথবা কর্মী। এখন নিউজিল্যান্ডে যে এসোসিয়েশন গড়ে তুলেছেন দোভাষীরা তারা দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং পুলিশের জন্য ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাঁধে কাঁধ রেখে দোভাষীর কাজ করেছেন। এসোসিয়েশনের মুখপাত্র রাজা খাদিন এ কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক পরিবারকে ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখন তাদের ভাইবোন, পিতামাতা, পরিবারের অন্য সদস্যরা মারাত্মক ঝুঁকিতে।
আফগানিস্তানে সম্প্রতি পরিস্থিতির যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে সব হিসাব এলোমেলো হয়ে গেছে। খাদিন বলেন, আমরা যেখানে জনগণকে তালেবান থেকে সুরক্ষিত রেখেছি, এখন সেই তালেবানরাই দেশে শাসক। এখন আমরা হয়ে গিয়েছি খারাপ লোক। তালেবানরা এখন প্রতিটি বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এবং কোনো দোভাষীকে পাওয়া যায় কিনা তা খুঁজছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। খাদিন আরো বলেন, এসব মানুষের নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার ফলে তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এই দেশের নাগরিক। এই দেশের জন্য আমরা কাজ করেছি। আমাদের জীবন, পরিবারকে সম্মুখযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করেছি। কিউইদের নিরাপদ রাখতে ঝুঁকি নিয়েছি আমরা।
গ্রুপটির আরেকজন সদস্য নিজের নাম প্রকাশ করতে চান না তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য। নিউজিল্যান্ড অনেক ঝুঁকিতে থাকা আফগানের জন্য যা করেছে, তার জন্য তিনি প্রশংসা করেন। কিন্তু যাদেরকে ভিসা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো সাবেক দোভাষীর পরিবার নেই। তিনি বলেন, যদি অন্য লোক ভিসা পেতে পারে, তাহলে আমাদের তো কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। বিষয়টি হতাশার। আমরা সোমবার আশা করেছিলাম যে, কেউ আসবেন এবং আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন সোমবার বলেছেন, পার্লামেন্টের বাইরে যে এই গ্রুপটি আছেন, তা তিনি অবগত ছিলেন না। তবে তাদের সঙ্গে আগস্টের শুরুতে তিনি কথা বলেছেন। তারা এখন তাদের বর্ধিত পরিবারকে নিউজিল্যান্ডে আনার জন্য সমর্থন চাইছেন। অন্যদিকে মন্ত্রী ফাফোইয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তিনি এসব দোভাষীর অনুরোধের বিষয়ে অবগত।