বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ ও বরেণ্য ক্রীড়া লেখক জালাল আহমেদ চৌধুরী আর নেই। গতকাল বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর। ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে গত ১৫ই সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জালাল চৌধুরীকে। কয়েকদিন পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
একসময় তিনি ছিলেন ক্রিকেটার। পরে নাম লেখান ক্রিকেট কোচিং ও সাংবাদিকতায়। দু’টোই তার চলেছে সমানতালে। ১৯৭৯ সালে দেশের প্রথম আইসিসি ট্রফি অভিযানে তিনি ও ওসমান খান ছিলেন দলের কোচ।
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতিতে তিনি ছিলেন প্রধান কোচ গর্ডন গ্রিনিজের সহকারী। প্রাথমিক দল গড়েছিলেন তিনিই। দেশের কয়েক প্রজন্মের অনেক শীর্ষ ক্রিকেটার তার হাতে গড়া। তার লেখনীতে ক্রিকেট কিংবা যে কোনো খেলা পেতো ভিন্নমাত্রা। জালাল আহমেদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৭ সালে। বেড়ে উঠেছেন আজিমপুর কলোনিতে। ষাটের দশকে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু উদীতি ক্লাবের হয়ে। তিনি ছিলেন মূলত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি কিপিং ও অফ স্পিন বোলিংও করতেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে ক্রিকেট ছাড়ার পর শুরু করেন কোচিং। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট কোচ হিসেবে ভারতের পাতিয়ালায় উচ্চতর কোচিংয়ের ওপর ট্রেনিং করেন তিনি। পরে মোহামেডান, ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি শীর্ষ ক্লাবে কোচিং করান জালাল আহমেদ চৌধুরী। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি বিভিন্ন সময়। এছাড়াও বিসিবি’র হোম ডেভেলপমেন্ট, ক্রিকেট অপারেশন্স, আম্পায়ার্স কমিটিসহ নানা ভূমিকায় কাজ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তার ক্রীড়া সাংবাদিকতা জীবনের শুরু আশির দশকের শুরুর দিকে নিউ নেশন পত্রিকার হয়ে। এরপর দীর্ঘদিন কাজ করেন বাংলাদেশ টাইমস-এ। ইংরেজি পত্রিকায় কাজ করলেও দারুণ খ্যাতি অর্জন করেন তিনি বিভিন্ন বাংলা পত্রিকায় কলাম লিখে। ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই লেখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। জীবনের শেষ বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন তিনি। অনেক বিষয়েই লিখতেন মন খুলে। বিপতœীক জালাল আহমেদ চৌধুরীর দুই সন্তানই প্রবাসী। আজিমপুরের একটি ফ্ল্যাটে একাই বসবাস করতেন এই বরেণ্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রথম জানাজা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আসরের নামাজের পর আরও একটি জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে।
জালাল আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রীড়াঙ্গনে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন পৃথক পৃথক শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। এছাড়া জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাসহ অনেকে প্রিয় গুরুর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন।