ঢাকার পল্লবী এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার কাজের সন্ধানে বের হয়েছিল মো. নাজমুল নামের এক তরুণ। এরপর থেকে তার আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় একটি জিডি করা হয়। পরদিন শুক্রবার তুরাগ থানা পুলিশ এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে নাজমুলের পরিবারের সদস্যরা গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করে। তারা তুরাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলাও করে। মরদেহ শনাক্ত হলেও নাজমুলের মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করে পুলিশ। পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাবের একটি টিম।
পরে র্যাবের তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়। তদন্তে র্যাব জানতে পারে নাজমুল একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য ছিল। সে মেট্রোরেল প্রকল্পের মালামাল চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। র্যাব জানিয়েছে, তুরাগ এলাকা থেকে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে ওই তরুণ। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মো. মোজাম্মেল হক জানান, গত কয়েক বছর ধরে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পগুলো চলাকালে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ সাধারণত খোলা জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয়। একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি দল সুকৌশলে সেই মালামাল চুরি করে। নিহত নাজমুলও এই সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। চক্রের আরও দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। তিনি বলেন, সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চোর চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো- মো. আশিক (১৯) ও মো. হারুন (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চোরাইকৃত মালামালসহ একটি পিকআপ ও সিএনজি জব্দ করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুলের মৃত্যু ও প্রকল্পের মালামাল চুরি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা র্যাবকে জানিয়েছে, নিহত নাজমুল, আশিক ও হারুন তিনজনই রাসেল এবং শামীম নামের আরও দুজনের সঙ্গে মিলে চুরি করতো। ঘটনার দিন রাসেল এবং শামীম নিহত নাজমুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সেদিন আশিকও তাদের সঙ্গে চুরির কাজে যোগ দেয়। যদিও সেদিন তাদের সঙ্গে হারুন যোগ দেয়নি। রাতের বেলা তুরাগে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নাজমুলের মৃত্যু হয়। পরে তারা নাজমুলকে ঘটনাস্থলে রেখে পালিয়ে যায়। র্যাব বলছে, এই চক্রটি বেশ কিছুদিন ধরে মেট্রোরেলের মালামালসহ অন্যান্য সরকারি কাজের মালামাল এবং বৈদ্যুতিক তার চুরির কাজ করে আসছিল। র্যাবের অভিযানে আশিক গ্রেপ্তার হলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তারা ঢাকা মহানগরীর পল্লবী থানাধীন এলাকায় পরস্পরের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় লোহা, ইস্পাত, তার, মেশিন কৌশলে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। র্যাব জানায়, চক্রটি মূলত এই চুরির কাজটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করে থাকে। তারা সুকৌশলে প্রকল্পের কী মালামাল কোথায় আছে তার বিভিন্ন তথ্য আগেই সংগ্রহ করে। সেই অনুযায়ী চুরির পরিকল্পনা করে থাকে। পরবর্তী সময়ে চুরি করা মালামাল একটি গোপন জায়গায় নিয়ে রাখে। আরেকটি গ্রুপ চোরাইকৃত মালামাল পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে সহজে বহনযোগ্য করার উপযোগী করে। পরবর্তীতে এ ধরনের মালামাল কেনেন এমন ক্রেতাদের সঙ্গে প্রথম ধাপের চোরাই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। পরে তাদের সঙ্গে দাম ঠিক করে তা বিক্রি হয়। র্যাব জানিয়েছে, এই চোরাই চক্রটিসহ এমন আরও কয়েকটি চোর চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে আইনানুগ কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন।