সিলেটে দুই বোনের মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। বাড়ির ছাদের রডের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় গতকাল সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগের দিন বিয়ে সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই বোন চাচার বাড়িতে গিয়েছিল। পুলিশ বলছে; বিয়ে না হওয়া, পারিবারিক অশান্তিসহ নানা কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছেন। সিলেট নগরীর আম্বরখানা মজুমদারি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ওই এলাকার ৩১ নম্বর বাসার ছাদের রডে ঝুলন্ত অবস্থায় দুই বোনের মরদেহ উদ্ধার করে। মজুমদারির ওই বাসার মৃত কলিমউল্লাহর মেয়ে রানী বেগম।
তার বয়স ৩৮ বছর। আর তার ছোটো বোন ফাতেমা বেগম বয়স ২৭ বছর। ফাতেমা মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করেছে। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে- রানী বেগম ও ফাতেমা বেগম পিতার সংসারে রয়েছে। বাবা নেই। মা জীবিত আছেন। এখনো বিয়ে হয়নি রানী বেগমের। বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে না হওয়ায় পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। পাশাপাশি ফাতেমারও বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সম্প্রতি দুই সন্তানের জনক এক লন্ডনী পাত্রের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে বড় বোনের। পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। তবে- বয়স্ক পাত্র হওয়ার কারণে রানী বিয়েতে রাজি হচ্ছিলো না। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তাদের সংসারে বিরোধ চলছিলো। বার বার বিষয়টি রানীকে পরিবারের পক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও রানী এতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত সোমবার রানী ও ফাতেমা চাচার বাড়িতে চলে যায়। গতকাল সকালে বাড়ির ছাদের রডের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দুই বোনের মরদেহ পাওয়া যায়। দুই বোনের ভাই রাজন আহমদ জানিয়েছেন- বিয়ের আলাপ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাগ ও ক্ষোভ থেকে দুই বোন আত্মহত্যা করতে পারে। বড় বোন রানীর প্ররোচনায় ছোটো বোন আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি। রাজন জানান- গত রোববারে এসেছিলো বিয়ের প্রস্তাব। বরের বয়স একটু বেশি। এই বিয়েতে রানী মত দিচ্ছিলো না। তাকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছিলো। এ নিয়ে গতকাল তার মায়ের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। এই কথাকাটাকাটির জের ধরে গত সোমবার তারা চাচার বাড়িতে গিয়েছিলো। সেখান থেকে চলেও এসেছিলো। ভোর ৫টায় তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। এদিকে- একসঙ্গে দুই বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মফিজুর রহমান। খবর পেয়ে সেখানে যান স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী কয়েসও। আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির এস আই মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন- সকালে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। ভবনের ছাদের ওপর থাকা পিলারের রডের সঙ্গে ঝুলন্ত ছিল তাদের মরদেহ। এই পরিবারের সদস্যদের কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গেও তাদের তেমন যোগাযোগ নেই। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী মনে হয়েছে। তারা তাদের বক্তব্যে একই জায়গায় থাকছেন না। তারা এই এলাকার আদি বাসিন্দা, কিন্তু এলাকায় তাদের সেরকম কোনো সামাজিক সম্পর্ক নেই। একধরনের আইসোলেটেড জীবনযাপন করে তারা। ঘটনাটি শুনে আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। পুলিশি তদন্তে সার্বিক বিষয় জানা যাবে বলে জানান তিনি। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিএম আশরাফউল্লাহ তাহের জানিয়েছেন- লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। তবে- প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুই বোন আত্মহত্যা করেছে। বিয়ে নিয়ে মত-অমতকে কেন্দ্র করে পরিবারের মধ্যে বিরোধ ছিল। এ ছাড়া- পরিবারটিও আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাদের সঙ্গে এলাকার কারও তেমন যোগাযোগ ছিল না।