× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইভ্যালির অর্থের হিসাব দিতে পারছেন না রাসেল

প্রথম পাতা

আল-আমিন
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার

প্রায় ১০০০ কোটি টাকার সুস্পষ্ট হিসাব দিতে পারেননি ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন। তবে তার কোম্পানি আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ও দেউলিয়া হওয়ার ৩ টি কারণ তিনি জানিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, পণ্যের ব্র্যান্ড করতে লাভের পেছনে না ছুটে অব্যাহত লোকসান দেয়া এবং ব্র্যান্ড করার পেছনে বেশি করে ছোটা, চীনের সাংচু নামে একটি অনলাইন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আদলে শুধুমাত্র স্টকভিত্তিক পণ্য বিক্রয়ের চিন্তাভাবনা করা এবং প্রতিষ্ঠানের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নানারকম কুমন্ত্রণায় তার প্রতিষ্ঠান পথে বসেছে। প্রতিষ্ঠানকে ব্র্যান্ড বানাতে গিয়ে তিনি শুধু বিজ্ঞাপন বাবদ ৪০০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। সেই বিজ্ঞাপন ছিল সড়কের বিলবোর্ড থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনেও। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন যে, ইভ্যালি কোনো গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেনি। গ্রাহক তাদের শর্ত জেনেই পণ্য অর্ডার করেছেন। পণ্য অর্ডার বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে যে, অনেক বেশি মূল্যছাড়।
এতে গ্রাহক হুমড়ি খেয়ে পড়েন। চারদিকে হইচই পড়ে যায়। তিনি এবং তার স্ত্রী মনে করেছিলেন যে, মার্কেট ভ্যালু বেড়ে গেলে গ্রাহকের চাহিদা আরও বেশি বাড়বে। এতে আরও বেশি পণ্য বিক্রয় হলে তাদের ইভ্যালিতে যে লোকসানের পরিমাণ আছে তা কমে যাবে। এতে ডেলিভারিতে জট লেগেছিল তা কমে যাবে। তারা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে তাদের পণ্য স্টক কমতে থাকে। পাশাপাশি ফেসবুকে নানারকম পোস্ট আসায় গ্রাহকেরা তাদের টাকা ফেরত চেয়ে ইভ্যালির কার্যালয়ে ভিড় করেন। এ কারণে তাদের ইভ্যালি নিয়ে সব পরিকল্পনা জলে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে রাসেল ও নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গুলশান থানায় ইভ্যালির এক গ্রাহকের করা মামলার প্রেক্ষিতে তাকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। পরে গুলশান থানা পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরণ করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে। পরে আদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে পুলিশ গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে আবারও দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড আবেদন করে। আদালত রাসেলের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গুলশান থানার এসআই ওহিদুল ইসলাম জানান, ইভ্যালির বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ইভ্যালির কাছে গ্রাহকের পাওনা প্রায় ১০০০ কোটি টাকা। এ টাকা কোথায় কীভাবে ব্যয় হয়েছে এবং রাখা হয়েছে সে বিষয়টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাসেল ও তার স্ত্রী নাসরিনের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ টাকার বিষয়ে তারা কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি।

সূত্র জানায়, রাসেল পুলিশি রিমান্ডে দাবি করেছেন যে, ইভ্যালির প্রতিটি পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপনের সঙ্গে পণ্য ডেলিভারির বিষয়ে শর্ত দেয়া ছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল ‘স্টক থাকা পর্যন্ত’। অনেক সময় স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি। তারা দাবি করেছেন যে, যাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি তাদের টাকা সঙ্গে সঙ্গেই ফেরত দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো প্রতারণা করা হয়নি। রাসেল ও নাসরিন দাবি করেছেন যে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া ২ লাখ গ্রাহক তাদের পণ্য নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে ৫০ হাজার গ্রাহকের পণ্য তারা ডেলিভারি দিয়েছেন। যাদের দিতে পারেননি তাদের পণ্য বিদেশ থেকে আনার জন্য অর্ডার করা হয়েছিল। করোনার কারণে তারা আনতে পারেননি। তবে তারা তাদের পণ্যগুলো দিয়ে দিতেন। তবে তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন যে, ব্যবসায়িক কৌশলে কিছু ভুল ছিল। যে ভুলের মাশুল তারা এখন দিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, রাসেলের পরিকল্পনা ছিল যে, তাদের প্রতিষ্ঠান শেয়ার বাজারে আরও বেশি অর্থ আয় করে সেটি গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারি দিবে এবং এতে লোকসানের পরিমাণ কমে আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

সূত্র জানায়, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন যে, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অংকের টাকা নেই। শুধুমাত্র সাভারে কয়েক শতক জমি কিনেছেন। সেই জমির পরিমাণও খুব বেশি নয়। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছেন যে, ১০০০ কোটি টাকা কোথায় গেল?। তারা কী তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ড থেকে টাকা অন্য কোথায়ও স্থানান্তর করেছেন, না টাকা অন্যজনের অ্যাকাউন্টে রেখেছেন তা উদ্ঘাটন করার জন্য তারা মাঠে কাজ করছেন। এছাড়াও রাসেল ও নাসরিনের রিমান্ডে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই ছাড়াও ইভ্যালির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এবার রাসেল রিমান্ডে, শামীমা কারাগারে: এবার ধানমন্ডি থানার মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। তবে রাসেলের স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের এডিশনাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক এ আদেশ দেন। এর আগে রাসেল ও শামীমাকে আদালতে হাজির করে সাতদিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে ধানমন্ডি থানা-পুলিশ।

গুলশান থানার প্রতারণার মামলায় তিনদিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এদিন রাসেল ও শামীমাকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। তাদের দু’জনকেই ধানমন্ডি থানার মামলায় সাতদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন এসআই নাজমুল হুদা। তদন্ত কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখ করেন, ইভ্যালির রাসেল ও শামীমা অত্যন্ত সুচতুর, ধুরন্ধর এবং কৌশলী। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেছেন। এ সময় গুরুতর প্রশ্ন কৌশলে তারা এড়িয়ে যান। তারপরও আসামিরা রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, যা তদন্তের স্বার্থে যাচাই-বাছাই চলছে। এ মামলার তদন্তের স্বার্থে পুনরায় তাদের রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি কেএম সাজ্জাদুল হক। তিনি আদালতকে বলেন, আসামি রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনার রহস্য উদ্?ঘাটনে জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি। অপরদিকে রাসেলের আইনজীবী মনিরুজ্জামান আসাদ রিমান্ডে নেয়ার আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে ওই আদেশ দেন।

পুলিশের রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী মরিুজ্জামান আসাদ বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়ে আমরা অস্বীকার করছি না। আমরা পণ্য দেব না সে কথাও বলিনি। প্যানডেমিক সিচুয়েশনের কারণে আমরা পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আর মামলার বিষয়ে দায়টি দেওয়ানি প্রকৃতির। এ বিষয়ে বাদী ড্যামেজ স্যুট, মানি স্যুট করতে পারতেন। এটা কোনোভাবেই ক্রিমিনাল মামলা নয়। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, বিজনেস ট্রানজেকশন থেকে ফৌজদারি অপরাধের সৃষ্টি হয় না। আসামিদের জামিন চেয়ে তিনি বলেন, এখানে একজন নারী অভিযুক্ত রয়েছেন। ফৌজদারি কাযবিধির জামিনের বিধানে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বিশেষ সুযোগ পান। যে কোনো শর্তে, প্রয়োজনে পাসপোর্ট জমা রেখে হলেও আসামিদের জামিন দেয়ার আবেদন করেন তাদের আইনজীবী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কেএম সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, নয় মাস আগে পণ্য কেনার টাকা দেয়া হলেও আসামিরা বাদীকে পণ্য সরবরাহ করেননি। প্রায় আধা ঘণ্টা দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক দুই আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদেশে বলা হয়, রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে হবে তদন্ত কমকর্তাকে। আর শামীমাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে করাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। শুনানির সময় আসামিদের কয়েকজন আত্মীয়কে এজলাসে ও বারান্দায় কান্নাকাটি করতে দেখা গেলেও রাসেল ও শামীমা ছিলেন স্বাভাবিক।

রাসেল ও শামীমা রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ধানমণ্ডি থানায় তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন কামরুল ইসলাম চকদার নামের এক গ্রাহক। সেই মামলাতেই মঙ্গলবার রাসেলকে নতুন করে রিমান্ডে পাঠাল আদালত। এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চুক্তির মাধ্যমে বাদীর চারটি কোম্পানি থেকে ইভ্যালিকে মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করা হলেও দাম পরিশোধ করা হয়নি। এসব পণ্যের দাম বাবদ ইভ্যালি চেক দিলেও অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা দুইবার ফেরত আসে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর