রেডলিস্ট থেকে নাম প্রত্যাহার হলেও বাংলাদেশিদের জন্য বৃটেন এখনই পুরোপুরি উন্মুক্ত হচ্ছে না। যদিও আজ থেকে (লন্ডন সময় ভোর চারটা আর বাংলাদেশ সময় সকাল ৯ টা) ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সংক্রান্ত বৃটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন জানিয়েছে, আগামী ৪ঠা অক্টোবর ভ্রমণ বিষয়ক নতুন নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে বৃটেনের ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট। ওই ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশিদের বৃটেন ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করে হাই কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বৃটিশ ফরেন অফিস প্রচারিত বিধি-নিষেধের উদ্বৃতি দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, ২২শে সেপ্টেম্বর থেকে ৪ ঠা অক্টোবর পর্যন্ত ১০ দিনের গ্রেস পিরিয়ড রেখেছে বৃটিশ সরকার। তারা আগেই জানিয়েছে, ২২শে সেপ্টেম্বর থেকে বৈধ ভিসাধারী বাংলাদেশিরা বৃটেনে প্রবেশ করতে পারবেন। এর মধ্যে যারা বৃটিশ সরকার অনুমোদিত ফাইজার, মডার্না, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন-এই চার টিকার যে কোনো একটির পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন তাদের ১০ দিনের হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। তাছাড়া তাদের দ্বিতীয় এবং অষ্টম দিনের করোনা টেস্টও বাধ্যতামূলক নয়। তবে বৃটিশ সরকার অনুমোদিত ওই চার টিকার বাইরের কোনো টিকা গ্রহণ কিংবা তালিকায় থাকা টিকার কোর্স সম্পন্ন না হলে অবশ্যই তাদের ১০ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, যা বৃটিশ সরকার রেগুলার মনিটর করবে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করা কোভিশিল্ড কিংবা চীনের সিনোফার্ম যা বাংলাদেশিরা ব্যাপক হারে গ্রহণ করেছেন তাদের বৃটেন ভ্রমণে কোনো বাধার মুখে পড়তে হবে কি-না? জানতে চাইলে মিশনের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বলেন, তাদের প্রবেশে বাধা নেই, তবে ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে (বাড়িতে কিংবা ভ্রমণকালে যেখানে থাকছেন বলে তিনি পূর্বে উল্লেখ করেছেন) থাকতে হবে। নির্ধারিত দিনে নিজ খরচে করোনা টেস্টও করতে হবে। এ জন্য আগের মতোই তাদের বাড়তি কিছু খরচ হবে। ওই কূটনীতিকের মতে, যারা করোনার ভারতীয় কিংবা চীনা টিকা নিয়েছেন তাদের উচিৎ পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। কারণ এরইমধ্যে ওই সব টিকা উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলো তাদের টিকার কম্পোজিশনের বিষয়টি জানিয়ে বৃটিশ সরকারের অনুমোদন লাভের চেষ্টা করছে। বৃটিশ সরকার সেই সব টিকাকে অনুমোদন দেবে কি-না? তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত টিকা গ্রহণকারীদের বৃটেন ভ্রমণে কোয়ারেন্টিন এড়িয়ে চলতে হলে অপেক্ষায় থাকতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বৃটেনের নব নিযুক্ত বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নিউ ইয়র্কে এক বৈঠকে কোভিশিল্ডকে স্বীকৃতি বা অনুমোদনের অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাই কমিশনের পদস্থ ওই কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ওই টিকা গ্রহণকারী হিসাবে বাংলাদেশের তরফে এমন অনুরোধ জানানোর কোন চিন্তা আছে কি-না? জবাবে তিনি বলেন, আমরা যে ভারতের কোভিশিল্ড, চীনের সিনোফার্ম, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মর্ডানা এই ৪টি টিকা ব্যবহার করছি তা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ সংক্রান্ত ৪ দফা নোটভারবালে উল্লেখ করেছি। আমাদের ব্যবহৃত টিকার বিষয়ে বৃটিশ সরকার অবহিত। সুতরাং এ নিয়ে নতুন করে আমাদের লেখার প্রয়োজন হয়তো পড়বে না। তাছাড়া আমরা তো ওই টিকার উৎপাদক রাষ্ট্র নই। আমাদের তৈরি টিকা হলে আমরা এর অনুমোদনের জন্য লিখতে পারতাম। আমাদের মতো পৃথিবীর অনেক দেশ ভারত ও চীনের টিকা নিয়েছে। সুতরাং সবার জন্য নিশ্চয়ই বৃটিশ সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। তাছাড়া এটা ডিপ্লোমেটিক ইস্যু নয়। অনুমোদনের বিষয়টি একান্তই টেকনিক্যাল এবং বৈজ্ঞানিক বিষয়।