দম্পতি শাহজাহান মিয়া ও সালমা আক্তার দুজনই প্রতিবন্ধী। ভিক্ষাবৃত্তি করতে গিয়েই উভয়ের পরিচয়। আর সেই পরিচয় থেকেই চির বন্ধনের জীবন উভয়ের মাঝে বিয়ে। তারপর বৈবাহিক জীবনে এসেছে সন্তান। ইনকাম না বাড়লেও ঠিকই বেড়েছে তাদের খরচ। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে সালমা আক্তার ও শাহজাহান মিয়ার জীবন। দাউদকান্দি উপজেলার প্রতিবন্ধী এই দম্পতি বলছেন, সরকারি অনুদান পেলে অন্তত মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই বানিয়ে জীবন যাপন করতে পারতেন তাঁরা। ‘মন্দ কপাল' নিয়ে জন্ম সালমা আক্তারের।
বাড়ি দাউদকান্দি উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে। সালমাকে জন্ম দিয়ে আঁতুড়ঘরেই মারা যান তাঁর মা জাহানারা বেগম। কৈশোরে পা রাখার আগেই হারান বাবা ওহাব আলীকেও। এ অবস্থায় দাদির কাছে বড় হন মানসিক প্রতিবন্ধী সালমা। সেই দাদিও একসময় অসহায় এ নাতিকে এই ধরায় রেখে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। এখন আপন বলতে আর কেউ নেই সালমার। কখনো পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতায়, কখনো ভিক্ষা করে জীবন কাটছিল মেয়েটির। ভিক্ষা করতে গিয়েই বছর দুয়েক আগে পরিচয় হয় আরেক প্রতিবন্ধী শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে। জন্মগতভাবেই তাঁর ডান পা বাঁকা। সেই কারণে চলাফেরা করতে বেশ অসুবিধে হয় তাঁর। শাহজাহানের ‘বাড়ি নোয়াখালীর বসুরহাটের চরক্লার্ক গ্রামে। শুধু পরিচয় দেওয়ার জন্যই শাহজাহানের বাড়ির কথা বলা। জমিজমা থাকা দূরের কথা, ওই গ্রামে তাঁর জন্মভিটাও নেই। বেঁচে নেই তার মা-বাবা ও ভাইবোনও। অনেকটা আরেক প্রতিবন্ধী সালমার মতোই অবস্থা। উভয়ের পরিচয় থেকে শুরু হওয়া সম্পর্কটা শেষমেশ গড়ায় চির বন্ধনের বিয়েতে। শাহজাহান ও সালমা এখন বাস করেন দাউদকান্দি উপজেলারস্থ মোহাম্মদপুর গ্রামের সালমার দাদির রেখে যাওয়া ছোট্ট একটা কুটিরে। কিছুদিন আগে মেয়ে সন্তান এসেছে প্রতিবন্ধী এই দম্পতির ঘরে। এতে যেমন তারা খুশি হয়েছেন, তেমনি করে দুশ্চিন্তাও তাদের উভয়ের মাথায় ভর করেছে। সালমা আক্তার বলেন, সংসার চালাতে তাঁরা দুজনই ভিক্ষা করেন। মাঝেমধ্যে পাড়া-প্রতিবেশীরা সহযোগিতা করেন। তাতে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু সন্তানের আসার পর খরচ বেড়েছে। কখনো কখনো না খেয়েই দিন কাটাতে হয় তাঁদের। জরাজীর্ণ বসতঘরে বসবাস শাহজাহান ও সালমার। ফলে বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয় তাদের। বাড়িতে নলকূপ, শৌচাগার কিছুই নেই। পাড়া-প্রতিবেশী বলছেন, খুবই অসহায় অবস্থায় আছেন এই প্রতিবন্ধী দম্পতিদ্বয়। তাদের যে অবস্থা, এতে তাঁরা সরকারি যেকোনো সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু খোঁজ যে রাখে না কেউ তাঁদের। অন্তত প্রয়োজনীয় বসতঘর, নলকূপ ও শৌচাগার করে দেওয়া হলে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে পারবেন তাঁরা।