বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে গতকাল প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এই দিনটিকে ‘বিমান বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাগণ সেক্টর কমান্ডারের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছিলেন। আইএসপিআর জানায়, রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটি স্বতন্ত্র বিমান বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। আর এ লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে ২৮শে সেপ্টেম্বর ভারতীয় বিমান বাহিনীর সহায়তায় একটি অটার বিমান, একটি ড্যাকোটা বিমান ও একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার এবং ৫৭ জন বাঙালি বৈমানিক, কারিগরি পেশার বিমান সেনা ও বেসামরিক বৈমানিকদের সমন্বয়ে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাত্রা শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৫০টি বিমান অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনার মাধ্যমে ‘কিলো ফ্লাইট’ বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপনের অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর পিটি-৬ বিমানের মাধ্যমে ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার আকাশে ‘৫০’-এর একটি অবয়ব তৈরির মাধ্যমে চমৎকার উড্ডয়নশৈলী প্রদর্শন করা হয়।
কিলো ফ্লাইটের সদস্যদের সাহসিকতাপূর্ণ অবদানকে সম্মান প্রদর্শন করতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দক্ষ বৈমানিকগণ মিগ-২৯ ও এফ-৭ জঙ্গি বিমানের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল, চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি, নোয়াখালীর দাগনভূঁইয়ায় অবস্থিত কিলোফ্লাইটের অধিনায়ক এয়ারভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় এরিয়াল ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন। এ ছাড়াও সি-১৩০, কে-৮ডব্লিউ, পিটি-৬ বিমান এবং এমআই-১৭ ও বেল-২১২ হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে একটি মনোমুগ্ধকর ফ্লাইপাস্টের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন সন্ধ্যায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আতশবাজির আয়োজন করা হয়। এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রতিষ্ঠার উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘কিলোফ্লাইট’ প্রদর্শনের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সদস্যদের অবদান, আত্মত্যাগ, স্বাধীনতার চেতনা এবং দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কিলোফ্লাইটের বীর যোদ্ধাসহ প্রাক্তন বিমান বাহিনী প্রধানগণ, বিমান সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, আমন্ত্রিত অতিথিগণ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।