শেষের পাতা
সরকারের কাছে ৬২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
কাজী সোহাগ
২০২১-০৯-৩০
সরকারের কাছে ৬২৫ কোটি টাকা মূল্যের চারটি সম্পত্তি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে-তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এক একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত মিমি চকলেট লিমিটেড, ২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সিরকো সোপ অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গাজীপুরের বোর্ড বাজারে এক দশমিক ১০ একর জমির ওপর থাকা ইউনাইটেড টোবাকো কোম্পানি লিমিটেড ও টংগী, গাজীপুরে এক দশমিক ৭৭ একর জমিতে থাকা বাংলাদেশ গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২২তম বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের ৬৬তম সভায় ট্রাস্ট মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান/জায়গার বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারি অফিস বা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষ্যে সরকার এ জমি কিনে নেবে। জমি বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ সরকারি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা হবে। এ থেকে পাওয়া লভ্যাংশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ করে শহীদ ও খেতাবপ্রাপ্ত এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের কল্যাণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে খরচ করা হবে। ওই সিদ্ধান্তের পর জমির মৌজাভিত্তিক রেজিস্ট্রি ও সম্ভাব্য বাজার মূল্য সংগ্রহ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে সম্ভাব্য বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৬২৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে মিমি চকলেট লিমিটেডের বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা, সিরকো সোপ অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মূল্য ৩০০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড টোবাকো কোম্পানি লিমিটেডের মূল্য ৭৫ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের ১০০ কোটি টাকা। এরআগে ওই চার সম্পদ নিয়ে ট্রাস্টের ৫৪ ও ৫৫তম নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৫৪তম সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়-বর্ণিত জমির রেজিস্ট্রি মূল্য ও সম্ভাব্য বাজারমূল্য সংগ্রহ করা হয়। বাস্তবতার নিরিখে জমির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের জন্য পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের নিমিত্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ডের নিকট সার-সংক্ষেপ প্রেরণ করতে হবে। পরবর্তীতে নির্বাহী কমিটির ৫৫তম সভায় ৪টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে শেয়ারিং পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে প্রতিবেদনে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও জায়গাসমূহের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় ৩৩টি সম্পদের বিবরণ দেয়া হয়েছে। এসব সম্পদের সম্ভাব্য বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৪৭০৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজার মূল্যের সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১৫২৮ কোটি টাকার রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট। এতে মোট দোকান রয়েছে ১৭৯৬টি (রাজধানী-১৬৪২টি ও নিউ রাজধানী-১৫৪টি)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতিটি দোকানের বিপরীতে ট্রাস্ট ভাড়া হিসেবে পাচ্ছে ১৫০০ টাকা। এরপরই রয়েছে- ৭২৫ কোটি টাকা মূল্যের মিরপুরে থাকা তাবানি বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড। এই সম্পদ সম্পর্কে বলা হয়েছে- কোকা-কোলা কর্তৃক ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি বাতিল করে কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করায় ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়। বর্তমানে ছয় দশমিক ৫৮ একর জায়গা ও স্থাপনা মাসিক ২২ দশমিক ৯৭ লাখ টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৬৭ শতাংশ জমির সীমানা চিহ্নিত করার জন্য সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ৩৩টি সম্পদের মধ্যে ১১টি সম্পদের বিপরীতে বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। এ কারণে সম্পদগুলোর ওপর উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আবার কোনোটির বিপরীতে ভাড়া আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ২ একর জমির ওপর থাকা মেটাল প্যাকেজেস লিমিটেড লিজ দিয়ে চার কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার ১২৪ টাকা ভাড়া বকেয়া রয়েছে।