সপ্তর্ষী প্রিয়া। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিকার হয় বাল্যবিবাহের। বিয়ের কিছুদিন না পেরোতেই যৌতুকের জন্য শুরু হয় নির্যাতন। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার নির্যাতনে যখন সে ক্লান্ত নিরবে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। শেষ করে জীবনের অধ্যায়।
ফারহানা সুমি। বয়স ১৪। দারিদ্র্যতাই যখন সঙ্গী ফলে পড়াশোনা আর হয়নি।
বাবা নেই। মা আর তিন ভাইবোনের সেই ছিল ভরসাস্থল। রাজধানীতে ফুল বিক্রি করেই চালাতো সংসার। সব ঠিকঠাকই ছিল। হঠাৎ এক রাতের অন্ধকারে কিছু নরপশুদের বিকৃত যৌনলালসার শিকার হলো সুমি। অচিরেই জীবনের রং হারালো সে।
আরো একটু পেছনে যদি ফিরি তবে রিশার ছবিটা যেন সামনে চলে আসে। রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী ছিল রিশা। স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। চার দিন পর হাসপাতালে মারা যায় ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী। এরকম হাজারো প্রিয়া, সুমি ও রিশার জীবন ঝরে যাচ্ছে অকালে। কেউ হয়ত জীবন হারাচ্ছে, কেউবা জীবনের রং।
আজ জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে এ দিবসের সূচনা। প্রতিবছর ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন ৩০শে সেপ্টেম্বরকে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
সময়ের পরিক্রমায় সব বদলেছে। 'ডিজিটাল' হয়েছে দেশ। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি
কিছু মানুষের মানসিকতা। প্রতিনিয়তই কন্যাশিশুদের ওপর বেড়ে চলেছে অত্যাচার, নির্যাতনের মাত্রা। বাসা কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সকল জায়গায় তারা হয়রানির শিকার। এমনকি ডিজিটাল প্লাটফর্মেও মেয়েরা নিরাপদ নয়।
অলনাইনে যৌন হয়রানি নিয়ে সম্প্রতি এক গবেষণা-জরিপ প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এতে বলা হয়, করোনাকালে দেশে ৩০ শতাংশ শিশু অনলাইনে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নিপীড়নের শিকার হওয়া শিশুদের ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ মেয়ে শিশু। ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছেলে শিশু।
পরিসংখ্যান বলছে গোটা দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। এনসিডব্লু রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। শুধু মাত্র ২০২১ সালে ৪৬ শতাংশ বেড়েছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। এমনই উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
খবরের পাতা কিংবা টেলিভিশন চোখ রাখলেই দেখা যায় হাজারো অসহায়ত্বের গল্প। নিজের মামা, চাচা দ্বারা ধর্ষণের শিকার কিশোরী, রাস্তায় ইভটিজিংয়ের শিকার স্কুলছাত্রী, রাস্তার ধারে ধর্ষিত মেয়ের লাশ উদ্ধার, বাল্যবিবাহের শিকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইত্যাদি। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই আর নিরবতা নয়। এসব রুখতে সরব হতে হবে এখন থেকেই। খোঁজ নিন, কেমন আছে আপনার কন্যাশিশু? এভাবে যেন অকালে আর কোনো প্রাণ ঝরে না যায়, কেউ যেন অল্পতেই জীবনের রং না হারায়। জাতীয় কন্যাশিশু দিবসে এটাই প্রত্যাশা।