× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জ্যাকসন হাইটসে হাঙ্গামা এবং প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি

মত-মতান্তর

শরীফ আস্-সাবের
২ অক্টোবর ২০২১, শনিবার

সম্প্রতি জ্যাকসন হাইটসসহ নিউইয়র্কের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সমাবেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের প্রবাসী বাংলাদেশী সমর্থকরা ব্যাপক বাক বিতন্ডা এবং দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যা দেশ-বিদেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তুমুল সমালোচনা এবং বিতর্কের অবতারণা করে। এই বিবাদমান পরিস্থিতি জনাকীর্ণ জ্যাকসন হাইটস এলাকায় যানজট এবং পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ প্রভূত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে সাধারণ নিউ ইয়র্কবাসীরা তাদের ক্ষোভ, হতাশা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং সুনামকে ক্ষুন্ন করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে এক কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি বাংলাদেশী বিদেশে বসবাস করছেন বলে ধারণা করা হয়, যার মধ্যে পঁচিশ লক্ষেরও বেশী স্থায়ীভাবে বিশ্বের ১৬০ টিরও বেশি দেশে অবস্থান করছেন। শিল্পায়িত, উন্নত দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের অধিকাংশই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার অধিবাসী। স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যা বিচারে যুক্তরাজ্য প্রথম এবং যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

এই অধিবাসীদের অধিকাংশই স্থানীয় রীতিনীতি এবং জীবনধারায় নিজেদেরকে মানিয়ে নিয়ে বিভিন্ন পেশা ও ক্রিয়াকলাপে নিয়োজিত থেকে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করছেন। তবে, দুর্ভাগ্যবশত, এদের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিতর্কিত, অশালীন এবং অপ্রীতিকর ক্রিয়াকলাপে জড়িত রয়েছেন। বিদেশে এসেও এই সকল প্রবাসী বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা ঘৃণা ও বিভাজনের সংস্কৃতিকে মনে প্রাণে ধারণ করেন।
তারা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শধারীদের সঙ্গে দৃষ্টিকটু এবং অমার্জিত অচরণসহ অহেতুক বচসা এবং কোলাহলে লিপ্ত হন। তারা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেন এবং অর্থহীন, কুরুচিপূর্ণ ও অভদ্র ভাষায় প্রতিপক্ষকে গালাগালি করেন যা অনেক সময় হাতাাহাতি এবং সংঘর্ষে রূপ নেয়।

তারা তাদের নিজস্ব দল বা রাজনৈতিক মতাদর্শের সপক্ষে এবং তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করার মানসে বিদেশী সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছেও তদবির করেন। কখনো কখনো তারা মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান।

যাই হউক, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর নিরবিচ্ছিন্ন নির্মম আক্রমণ সত্ত্বেও, মূলতঃ দুইটি প্রধান বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলের অতি উৎসাহী সমর্থকরা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেগাসিটি, নিউইয়র্কের রাস্তায় পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনা এই টালমাটাল আবহাওয়াকে আরও বেশী কদর্য করে তুলেছে যা মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের নজরে এসছে।

তবে, এই ধরনের কলহ ও সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে, নিউইয়র্কে এই জাতীয় অপ্রীতিকর ঘটনা অনেকটাই যেন ‘বার্ষিক অনুষ্ঠান’ হিসেবে সংঘটিত হচ্ছে। এই মেগাসিটিতে আনুমানিক এক লক্ষ বাংলাদেশী অভিবাসীর বাস। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশী রাষ্ট্রপ্রধান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে আসেন। এই সফরকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতিসহ নানাবিধ অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হয়। নিউইয়র্কের বাসিন্দারা অবশ্য এই বার্ষিক অঘটনটি নিয়ে তেমন খুশি নন এবং তারা প্রতিবছর এই ধরনের উপদ্রব বন্ধ করার জন্য নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ ও স্টেট ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ দায়ের করেন।

উল্লেখ্য, এ বছর দুই পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, হলি সি ও ফিলিস্তিনসহ ১৯৩টি সদস্য দেশের প্রতিনিধি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশীরাই নিউইয়র্কে বসবাসকারী একমাত্র প্রবাসী জনগোষ্ঠী যারা তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের সফর উপলক্ষ্যে র‍্যালি ও সমাবেশসহ অহেতুক বচসায় লিপ্ত হন। অন্যান্য দেশ থেকে আসা অভিবাসী জনগোষ্ঠী একই সময়ে একই ধরণের অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে নিউ ইয়র্ক পৃথিবীর সবচেয়ে বিশৃঙ্খল শহরে পরিণত হয়ে যেত!

নিউইয়র্ক ছাড়াও বিশ্বের অনেক শহরেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভিন্নমতাদর্শী বাংলাদেশী অধিবাসীদের মধ্যে বিবাদ বিসম্বাদের ঘটনা বিরল নয়। লন্ডন এই জাতীয় অঘটনের আরেকটি হটস্পট যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশী অধিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে মাঝে মধ্যেই সহিংস সংঘর্ষ হয়। বাংলাদেশের একজন অন্যতম সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করায় তার সমর্থক এবং প্রতিপক্ষ প্রায়শই পরস্পরবিরোধী প্রচারণা ও সমাবেশের আয়োজন করে থাকে। এই ধরনের সমস্যাটি অবশ্য নতুন কিছু নয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল এরশাদ সরকারী সফরে যুক্তরাজ্য যান। লন্ডনে পৌঁছানোর পর হিথ্রো বিমানবন্দরে অপেক্ষমান সরকারবিরোধী দলের সমর্থকরা তার পিছু নেয় এবং বিমানবন্দর থেকে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট পর্যন্ত রাস্তায় এরশাদকে বহনকারী গাড়িকে অনুসরণ করে। তারা কালো পতাকা বহন করছিল এবং পুরো রুট জুড়ে তারা ইংরেজী বাংলা মিলিয়ে অকথ্য ভাষায় শ্লোগান দিচ্ছিলো। তারা জু’মার নামাজের সময় ব্রিক লেন মসজিদেও তাকে অনুসরণ করে। বাংলাদেশী রাষ্ট্রপতির সুরক্ষার জন্য ডগ স্কোয়াডসহ ব্রিটিশ পুলিশকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে, এবং এক পর্যায়ে, মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করতে হয়েছিল। সেই সময়ে, লন্ডনের অনেক অংশে বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান ফখরুদ্দীন আহমদসহ অন্যান্য বাংলাদেশী বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তির বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করে এই দুটি শহরে বিক্ষোভ ও পাল্টা বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য অনেক শহরেও অনুরূপ পরিস্থিতির কথা কম বেশী শোনা যায়। এ প্রসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে প্রতিনিয়তই ঘটছে কিছু না কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। বেশ কয়েক বছর আগে টোকিওতে বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের আসন বণ্টন নিয়ে মারামারিতে এক স্থানীয় বাংলাদেশী অভিবাসী নেতার মৃত্যু হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ভিত্তিক বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়েও কোন্দল রয়েছে বিশ্বের প্রায় সব কয়টি বড় শহরে।

প্রশ্ন থেকে যায়, প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেন এমন সব বিতর্কিত, অযৌক্তিক, হাস্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডে অংশ নেন, যখন অন্য কোন দেশের অভিবাসীরা সচরাচর এই ধরনের ক্রিয়াকলাপে জড়িত হন না। যদিও আমার কাছে এই প্রশ্নের কোন সোজাসাপ্টা উত্তর নেই, তবুও এ বিষয়ে আমার কিছু আনুমাননির্ভর ধারণা তুলে ধরছি:

প্রথমত, বাংলাদেশের জনগণের একটি বিশাল অংশ স্ব স্ব রাজনৈতিক আদর্শ ও দলকে অন্ধভাবে সমর্থন করেন। তাদের এই সমর্থন এতটাই প্রবল এবং একপেশে যে, তাদের দল এবং এর নেতারা যে যাই করুক না কেন তা তারা বিনা প্রশ্নে, বিনা বক্যব্যায়ে মেনে নেন। তাদের নেতারা যদি কোন ভুল সিদ্ধান্তও নেন, এমন কি তারা যদি আইনের শাসনও লঙ্ঘন করেন তখনও এই সব অন্ধ সমর্থক তাদেরকে অকুণ্ঠ সমর্থন করা থেকে বিরত হন না। নেতাদের মধ্যে অনেকেই সুবিধামাফিক তাদের দলীয় আনুগত্য পরিবর্তন করলেও এই সমর্থকরা একই দলের প্রতি সদা নিবেদিত থাকেন। এই সমর্থকরাই যখন স্থায়ীভাবে দেশ ত্যাগ করেন, তখনও তারা তাদের নিজ দল এবং দলীয় নেতাদের প্রতি সমভাবে অনুগত থাকেন। তারা বিভাজন সৃষ্টিকারী এবং উশৃঙ্খল বাংলাদেশী রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেও তাদের সঙ্গে বয়ে নিয়ে যান, যা তাদের আচরণে ইচ্ছাকৃত বা অসাবধানতাবশত বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ পেয়ে থাকে। তারা তাদের ভৌগলিক ঠিকানা পরিবর্তন করেন ঠিকই, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক হীনমন্যতাপ্রসূত মন মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয় না।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা নিজেদের মেধাহীনতা, দুর্নীতিমনস্কতা, জনবিচ্ছিন্নতা এবং ক্ষমতালিপ্সার কারণে নানাবিধ হীনমন্যতায় ভুগেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এই ধরনের দুর্বলতাগ্রস্থ নেতাদের একটি দীর্ঘ তালিকা খুব সহজেই তৈরি করা সম্ভব। এই নেতারা প্রায়ই তাদের অন্ধ সমর্থক গোষ্ঠীর দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতে পছন্দ করেন। যদিও এই সমর্থকরা মিথ্যা জনপ্রিয়তার ফাঁদে নেতাদের আটকে রাখেন, তবুও এইসব নেতা এই ধরনের সমর্থনে আশ্বস্তি এবং গর্ব অনুভব করেন। তারা তাদের অনুগামীদের কাছ থেকে দল ও নেতা সম্পর্কে প্রশংসা এবং স্তুতিময় গৌরবগাঁথা শুনতে পছন্দ করেন। সময়ে সময়ে তারা তাদের কর্মী ও সমর্থকদেরকে অহেতুক বিরোধী শিবিরের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। নেতারা তাদের বিদেশ সফরের সময়ও স্থানীয় সমর্থকদের কাছ থেকে একই ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ প্রত্যাশা করেন।

যদি সংশ্লিষ্ট সফরকারী নেতা সরকার প্রধান হন, তাহলে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী কূটনীতিকরাও এই ধরনের সমাবেশ বা বিক্ষোভকে উৎসাহিত করেন এবং সফররত নেতার কাছ থেকে আশীর্বাদ কিংবা পদোন্নতি প্রাপ্তির আশায় মূল্যবান সময় ও সরকারী অর্থ ব্যয় করেন। অধিকাংশ সময় দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এই সকল কার্যক্রম সংগঠিত করার জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও প্রদান করা হয়।

তৃতীয়ত, আরেকটি সমর্থক গোষ্ঠী এই জাতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন যারা তদীয় নেতা বা দল থেকে অতীতে কোন ধরণের সুবিধা ভোগ করেছেন কিংবা এখনো করছেন। ভবিষ্যতে কিছু সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশায়ও কেউ কেউ এইসব কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সুসময়ের বন্ধু - অর্থাৎ যতদিন সংশ্লিষ্ট নেতা ক্ষমতায় থাকবেন, ততদিনই এই সব সুবিধাবাদী ব্যক্তি ঐ নেতার সকল ভালো মন্দ সমর্থন করে যাবেন। বিনিময়ে, এই সমর্থকদের অনেকেই সরকারী ঠিকাদারি, অনুদান কিংবা তাদের নিজেদের জন্য অথবা বাংলাদেশে ফেলে আসা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য চাকুরি কিংবা অন্য কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশা করেন। এই সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রিয় নেতার সাথে সেলফি তুলতে পারাটিও অনেকের জন্য বিশাল এক অর্জন!

চতুর্থত, নিউইয়র্ক এবং লন্ডন সহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে তথাকথিত 'বেগম পাড়া’র অধিবাসীদের অনেকেই এইসব বিতর্কিত কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা সরকারের ‘গুড বুক’ এ থাকতে চান যাতে করে তাঁদেরকে দুর্নীতি কিংবা কালো টাকার জন্য সরকার থেকে হেনস্থা না করা হয়। প্রয়োজনে তারা তাদের সমর্থন প্রদর্শন করার জন্য কর্মসূচির উদ্যোক্তাদেরকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেন এবং নিজেরা বিভিন্ন র‍্যালি এবং সমাবেশে যোগদান করেন।

সবশেষে, একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে, যদি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হয়, তাহলে এই পরস্পর বিরোধিতা কিংবা কলহের কি পরসমাপ্তি ঘটবে? এর সাদামাটা জবাব হবে, 'না'। অতীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও সরকারপন্থী ও সরকার বিরোধী দলের সমর্থকদের মধ্যে একই ধরণের অস্থিরতা ও আচরণ বিদ্যমান ছিল এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাপ্রবাহ ভবিষ্যতেও একই নিয়মে এবং একই তালে চলমান থাকবে। তবে, এই ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি পরিবর্তনই আবার স্পষ্ট হবে - তা হলো, প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থানগত রদবদল। অর্থাৎ, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখনকার সরকারপন্থী সমর্থকরা সরকারবিরোধী অবস্থান নেবেন এবং সরকারবিরোধীরা তাঁদের অবস্থান পাল্টে সরকারী দলের সমর্থন করবেন। এই সময় অধিকাংশ বেগম পাড়াবাসীসহ সুবিধাবাদীদের অনেকেই শিবির পরিবর্তন করবেন। এভাবেই, বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যে একটি হতাশাব্যাঞ্জক রাজনৈতিক দুষ্ট চক্র লাগাতার অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা যায়!

অনেকেই প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই বেঢপ এবং বেয়াড়া আচরণকে মানসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিত থেকেও ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের বেশ বড় একটি অংশ খুব সহজেই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন যারা নির্বিকারভাবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি উপেক্ষা করেন, দেশপ্রেম ও আত্মসম্মানকে অবজ্ঞা করেন এবং আত্মস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সহিংসতা এবং বিভাজনকে উস্কে দিতে শঙ্কাবোধ করেন না। এই সকল বৈশিষ্ট্যের কথা বিবেচনা করেই হয়তোবা রবীন্দ্রনাথ এক সময় আক্ষেপ করে বলেছিলেন, 'সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি’।

লেখকঃ ড. শরীফ আস্‌-সাবের, সুশাসন বিশেষজ্ঞ ও প্রেসিডেন্ট, গভারনেন্স, এডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর