× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রপন্থার বিপদ!

মত-মতান্তর

ড. মাহফুজ পারভেজ
১১ অক্টোবর ২০২১, সোমবার

দক্ষিণ এশিয়া বলতে যে অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়, তা আসলে ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর প্রধান ও বৃহত্তম সদস্য ভারত। ঐতিহাসিকভাবেই এ অঞ্চল অভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক উত্তরাধিকারের অংশ।

ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানকালে প্রচণ্ড হানাহানি, রক্তপাত, হিংসা ও উন্মত্ততার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করেছে। এর পেছনে রয়েছে কোটি কোটি মানুষের দেশত্যাগ, বিভাজন, দাঙ্গা, রক্ত ও মৃত্যুর করুণ অভিজ্ঞতা।

দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতীয় উপমহাদেশ এক ধর্ম, এক জাতি বা এক ভাষার অঞ্চল নয়। বহুবিচিত্র মানুষের বাস এখনে। এখানে দলীয়, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক উগ্রতা ও কঠোরতার বদলে বহুত্ববাদী সমন্বয়ের কথাই বলেছেন অতীতের অগ্রণী নেতৃবৃন্দ। গণতান্ত্রিক উদারতাই এখানকার ঐক্য, সংহতি, শান্তি ও উন্নয়নের মূলমন্ত্র।

কিন্তু শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ক্রমেই বিনষ্ট হচ্ছে এ অঞ্চলে। বিশেষত, ভারতে মুসলিমরা কিছু উগ্রপন্থী হিন্দুর হাতে অত্যাচারিত হচ্ছেন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব মুসলিমকে হত্যা করছে তারা। কখনো রাস্তাঘাটে নারীদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করা হচ্ছে। একটি ঘটনায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া একজন মুসলিম শিক্ষার্থীকে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করা হয়েছে। ফেরিওয়ালাদের প্রহার করা হয়েছে। তাদেরকে হিন্দুদের গ্রামে যেতে বারণ করে দিয়েছে তারা। এসব নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাকিস্তান সংস্করণ :এক্সপ্রেস ট্রিবিউন' একটি প্রতিবেদন লিখেছে, যা 'মানবজমিন'-এ প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রে ও বিশেষ কিছু রাজ্যে উগ্রপন্থার বিস্তারের কারণে বহু নৃশংসতার নজির গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজকে স্তম্ভিত করছে। উত্তর প্রদেশে প্রায়ই ধর্ম ও জাত-পাতের নামে হত্যা-নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়। গণপিটুনি ও প্রকাশ্যে দলবদ্ধভাবে বিরোধী মত, পথ ও ধর্মের মানুষকে নির্যাতনের উগ্রতা মানবতাকে লজ্জিত করেছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে হামলা চলছে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে আগে ভারতে নাগরিকতা আইন বিরোধী আন্দোলন চলার সময় খোদ দিল্লিতে দাঙ্গা হয়েছে। বহিরাগত উগ্রপন্থীরা লাগাতার কয়েকদিন হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে মুসলিম এলাকায়। তারও আগে গুজরাট জ্বলেছে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার আগুনে। বাড়িঘর ধ্বংস করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা ও বাস্তুহীন করা হয়েছে।

উত্তর ও পশ্চিম ভারতের উগ্রপন্থার উন্মত্ততা পূর্ব ও দক্ষিণ দিকেও ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ গতিতে। আসামও উদার গণতন্ত্রীদের হাতছাড়া। সেখানে নব্য ক্ষমতাসীন বিজেপি অভিবাসী অ-অসমিয়াদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক আসামবাসী বাঙালির ভবিষ্যৎ সেখানে অন্ধকারের মুখে। তাদের বের করে দেয়া হবে আসাম থেকে। তাদের বিরুদ্ধে চলছে হত্যা ও নির্যাতন। আসামের পাশের ত্রিপুরা আর পশ্চিমবঙ্গে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে উগ্রতার রণহুঙ্কার।

সাতচল্লিশের ধর্মভিত্তিক দেশভাগের উগ্রতার রক্ত ও লাশ পেরিয়ে যে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মিত হয়েছে, তা যেন আবার বিঘ্নিত। বার বার উগ্রতা মাথাচাড়া দিচ্ছে ভারতের নানা স্থানে, যেসব তথ্য সেদেশের মিডিয়াতেই প্রকাশিত হয়। সুশীল সমাজ ও নাগরিক শ্রেণি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় উগ্রতার বিপদ ও বীভৎসতার বিরুদ্ধে।

ভারতে তেমনই একজন কবীর সুমন, গায়ক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। সাম্প্রতিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন: 'আমি রাজনীতির লোক নই। রাজনীতিতে থেকে দেখেছি ওটা আমার জায়গা নয়। তবু, আজ জীবনে প্রথম মনে হচ্ছে একটা দল খুলি। যার ভিত্তি হবে অহিংসা, ধর্মনিরপেক্ষতা আর সমাজতন্ত্র।'

শুধু ভারতে নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিকামী মানুষই উগ্রতা ও ফ্যাসিস্ট অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। ধর্মের নামে, জাতের নামে, ভাষার নামে, দলের নামে, ব্যক্তির নামে উগ্র চরমপন্থী মনোভাব গণতান্ত্রিক সুশাসনের জন্য ভয়াবহ বিপদ স্বরূপ। সাধারণ নিরীহ মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য চরম হানিকর। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা জন্য উগ্রপন্থা বিরাট প্রতিবন্ধকতার নামান্তর।

ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রপন্থার বিপদ থেকে এ অঞ্চলের মানুষ ও দেশগুলোকে বের হয়ে আসতে হবে। জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিসরে উগ্রতার বিরুদ্ধে ঐক্য ও সংহতি জানিয়ে শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার পক্ষে দাঁড়াতে হবে। হিংসা ও উগ্রতার যে অন্ধকারাচ্ছন্ন, রক্তাপ্লূত, ঘৃণ্য অতীত পেরিয়ে এসেছে মানুষ, তার পুনরাবৃত্তি হবে মানবতার জন্য আত্মহত্যার শামিল।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর