× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আজ মহাঅষ্টমী

শেষের পাতা

সুদীপ অধিকারী
১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার

ষষ্ঠী তিথিতে অশ্বমেথ বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে দেবীর বোধন পূজা শেষে গতকাল ভোরে হয়েছে কলাবউ স্নান, নবপত্রিকা প্রবেশ। দর্পণে দেবীকে মহাস্নান, চক্ষুদানে দেবীর মৃণ্ময়ীতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও সপ্তমীবিহীত পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সপ্তমী তিথি। আজ মহা অষ্টমী। নতুন কাপড় পরে বাহারি সাজে মন্দিরে মন্দিরে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন ভক্তরা। এই দিনই হবে সন্ধি পূজা। অষ্টমীবিহীত পূজা শেষেই হবে ‘কুমারী পূজা’। পূরাণ মতে দেবীর ১ বছরের কুমারীকালকে  সন্ধ্যা, ২ বছরে সরস্বতী, ৩ বছরে ত্রিধামূর্তি, ৪ বছরে কালিকা, ৫ বছরে সুভগা, ৬ বছরে উমা, ৭ বছরে মালিনী, ৮ বছরে কুষ্ঠিকা, ৯ বছরে কালসন্দর্ভা, ১০ বছরে অপরাজিতা, ১১ বছরে রূদ্রাণী, ১২ বছরে ভৈরবী, ১৩ বছরে মহালপ্তী, ১৪ বছরে পীঠনায়িকা, ১৫ বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা ও ১৬ বছরের সময়কে অন্নদা বা অম্বিকা নাম দেয়া হয়েছে।
মূলত দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে মহামায়ার ষষ্টক অর্থাৎ ৬ বছরের কুমারী রূপ ‘উমা’র পূজা করা হয়। তবে এই দিন মন্দিরে ১ থেকে ১৬ বছরের যেকোনো হিন্দু কুমারী কন্যাকে মাতৃভাবে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে পূজা করা হয়। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। আগামীকাল নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ১৫ই অক্টোবর দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দোলায় চড়ে আবারো ফিরবেন কৌলাশে।
সরজমিনে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই দেবী দর্শনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটের শুরু হবে অষ্টমী পূজা। সকাল ৮টা ১৪ মিনিট থেকে ৯টা ২ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে সন্ধিপূজা। সাড়ে ৯টা থেকে ১০টায় শুরু হবে অষ্টমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি। পূজা চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। ফুলে-ফলে ভরে গেছে মন্দির চত্বর। বাহারি সজ্জায় সাজানো হয়েছে পুরো ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ। চলমান করোনা পরিস্থিতির দিকেও রাখা হয়েছে বিশেষ নজর। পুরো মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ-আনসারসহ একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে গতবারের মতো করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবারও এখানে হচ্ছে না ‘কুমারী পূজা’। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের পূজাও বেশ নজর কেড়েছে দেশবাসীর। ধরা হয় সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণ কুমারী পূজা হয় সেখানে। কিন্তু এখানেও এবার হচ্ছে না কুমারী পূজা। রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘ আয়োজিত দুর্গাপূজা মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ও স্যানিটাইজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী-পুরুষের প্রবেশের জন্য পথক দুটি লেন তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্যান্ডেলের ভেতরে বসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো মণ্ডপ চত্বর নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে।  রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালীমন্দির, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার। পূজা উপলক্ষে অলিগলি থেকে রাজপথ আলোর নানা রঙের ছটা ছাড়াচ্ছে সর্বত্র।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, দুর্গা পূজার প্রায় প্রতিদিনই মন্দিরে মন্দিরে প্রচুর জনসমাগম হয়। অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার সময় এই জনসমাগম জনসমুদ্রে রূপ নেয়। তাই চলমান করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে গতবারের ন্যায় এবারো ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশনসহ রাজধানীর কোনো মন্দিরেই কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়নি। তবে রাজধানীর বাইরে অনেক জায়গাই কুমারী পূজা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন দুর্গোৎসবের নিরাপত্তার বিষয়ে গতকাল রাজধানীর স্বামীবাগে লোকনাথ মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও বস্ত্র বিতরণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। পূজামণ্ডপগুলোতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শুধু পূজা নয়, সব ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়। ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এ নীতিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশের মানুষ। যারা দেশে ধর্মের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
একই দিনে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, দুর্গাপূজা বাংলার হাজার বছরের চলমান ও বহমান উৎসব। এর আনন্দ আমাদের সকলের। এর সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এটি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক নিদর্শন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা নির্মল গোস্বামী, সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল প্রমুখ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর