× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বর্তমানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অগ্রগতি প্রয়োজন

মত-মতান্তর

ইবনে হাসান খান
১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার

বিনোদনের পাশাপাশি চলচ্চিত্র একটি সমাজের দর্পণ স্বরুপ। একটি দেশের সংস্কৃতি, নাগরিকদের আচার, ব্যবহার, পছন্দ, রুচি, অভ্যাস জানা যায় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, চলচ্চিত্র কালের সাক্ষীও বটে। চলচ্চিত্র বিভিন্ন সময় সামাজিক, রাজনৈতিক অসঙ্গতি, শোষণ-নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছে।

যেমন- কিংবদন্তি জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে রূপকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে তৎকালীন স্বৈরশাসনের তীব্র সমালোচনা। ২০০২ সালে তারেক মাসুদ ‘মাটির ময়না’ ছবিটি নির্মাণের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সমালোচনা তুলে ধরেছেন এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকা সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে যুক্তির সঙ্গে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে দর্শকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গ্রামীণ বাংলার সহজ সরল জীবনধারার চিত্রও ওঠে আসে যা মনকে পুলকিত করে।

১৯৫৭ সালের ৩রা এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প, বাণিজ্য, ত্রাণ ও দূর্যোগ কল্যাণমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই সূত্রে ২০১২ সাল থেকে এই বিশেষ দিনটিকে সরকারিভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) এর প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। যে চেতনা নিয়ে বিএফডিসি নির্মাণ করা হয়েছে তা ঠিক কতোটা প্রত্যাশার জায়গা পূরণ করতে পেরেছে বোঝা দায়।
চলচ্চিত্র হতে পারে বিনোদনের সুষ্ঠু মাধ্যম, বহন করতে পারে জাতীয় পরিচয়, তৈরি করতে পারে মনস্তত্ব এবং জনপরিসরে পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হতে পারে।
কিন্তু চলচ্চিত্রের গল্পে দেশীয় চিন্তা, দেশীয় সংস্কৃতি, ও মৌলিকত্ব না থাকলে এ সম্ভাবনা খুবই কম। আমাদের চলচ্চিত্রের সুন্দর অতীত থাকলেও গত দুই দশক ধরে চলচ্চিত্রে ভিন্নধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পূর্বে আলোর মিছিল, হাঙ্গর নদী গ্রেনেড, ওরা ১১ জন, আগুনের পরশমণি ইত্যাদি সিনেমার মতো জীবনধর্মী সিনেমা নির্মিত হলেও বর্তমানে বাস্তবধর্মী সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা খুবই কম।

বাংলা চলচ্চিত্র আজ অনেকটাই ভিনদেশী সংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। জীবনবোধের চিত্র, নিজস্ব সংস্কৃতি, বাস্তবধর্মী প্রেক্ষাপট এসব কমই খুঁজে পাওয়া যায় সম্প্রতি নির্মিত সিনেমাগুলোতে। আজকাল নির্মিত সিনেমার অধিকাংশই বাবা, মা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে বসে উপভোগ করার মতো নয়। আধুনিকতার নামে যেন অশ্লীলতাই বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই আজকালের সিনেমাগুলোর অধিকাংশই ব্যবসায়িক সফলতা পাচ্ছে না কিংবা দর্শকপ্রিয় হচ্ছে না।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই দুর্গতি কাটাতে প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে দেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের ২৬টি চলচ্চিত্র এ পর্যন্ত ৮৫টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। এছাড়া ইমপ্রেস প্রযোজিত এ পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত শতাধিক সিনেমার মধ্যে বেশ কিছু সিনেমা বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে প্রশংসিত হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবি (১৯৯৪ থেকে ২০১৪) ১৫৫টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়াও দেশের উল্লেখযোগ্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পায় ইমপ্রেসের ৬০টি ছবি।

এমনকি এই করোনাকালেও তৃতীয়বারের মতো কলকাতায় হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব (৫-৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১) উৎসবে দেখানো হয় বাংলাদেশের ৩২টি ছবি। এর মধ্যে সাতটিই ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবি ‘জালালের গল্প’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’, ‘ফাগুন হাওয়ায়’, ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’ ও ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’। এভাবে প্রতিনিয়ত বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের প্রশাসক ‘প্রযোজক সমিতি’ এর বিরাট ভূমিকা রাখতে হবে। চলচ্চিত্র শিল্পকে বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যেতে দু’একটা বা টুকটাক ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেই হবে না, বছরজুড়ে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। সিনেমার গল্পে মৌলিকত্ব আনতে হবে। সেই গল্পের মাধ্যমে নিজের দেশ, নিজের মাটি, নিজের মানুষকে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে। তবেই মানুষ প্রাণভরে সিনেমা উপভোগ করতে পারবে এবং ঢাকাই চলচ্চিত্র এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির পথে।

লেখক: পরিচালক (সেলস এন্ড মার্কেটিং)
চ্যানেল আই
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর