× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ / ঠিকানা হারাচ্ছে দাকোপবাসী

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার

খুলনার উপকূলীয় দাকোপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১নং পোল্ডারের উপকূলীয় এলাকা ছোট হয়ে আসছে। গত এক বছরে উক্ত পোল্ডারের প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাউবোর বেড়িবাঁধসহ ৫শ’ বিঘা ফসলি কৃষি জমি, দুই শতাধিক কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, অর্ধশত দোকান পাটসহ নানা স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এদিকে গত ৭ই অক্টোবর পশুর নদী গর্ভে বিলীন হওয়া পানখালী ইউনিয়ন ও চালনা পৌরসভার সীমানা খলিশা স্লুইস গেটের উত্তর পাশে প্রায় একশ’ মিটার ওয়াপদা বেড়িবাঁধ গত চারদিনে দুই দফায়ও বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি। নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে তা বার বার ভেঙে যাচ্ছে। নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় এ পোল্ডারের ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক লোক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ৪টি গ্রামের ২শ’ পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংলগ্ন এলাকার অনেক পরিবার তাদের বসতঘর বাড়ি রক্ষার্থে তা ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
সরজমিন উপজেলা সদর পাউবোর ৩১নং পোল্ডারের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগসহ একের পর এক নদী ভাঙনের কারণে উপকূলীয়বাসী প্রায় তাদের ঠিকানা হারিয়ে হচ্ছে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। প্রায় ষাটের দশকে নির্মিত ওয়াপদা বেড়িবাঁধগুলোর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙন শুরু হলেও পাউবো তা তাৎক্ষণিক সংস্কার না করায় এ সকল বাঁধগুলো এখন অধিক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
এ সকল বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার ও বিকল্প বাঁধ নির্মিত না হলে যে কোনো মুহূর্তে আইলার থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
নদী ভাঙনে খলিশা, পানখালী, পানখালী মধ্যপাড়া,পানখালী পূর্বপাড়া গ্রামের প্রায় ২ হাজার বিঘা আমন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ভুক্তভোগী বিশ্বজিত রায়, মুকুল রায়, জ্যোতিশংকর রায়, অনুরুদ্ধ রায়, স্বপন রায়সহ অনেকে জানান, নদী ভাঙনের কারণে আমার আমান ধানের জমি তলিয়ে যাওয়া আমরা সম্পূর্ণভাবে হতাশ হয়ে পড়েছি। তারা বলেন এখন ধানের বোগ ছেড়েছে এ ধান তলিয়ে থাকার কারণে ধানের ফসলে পচন ধরে সব নষ্ট হয়ে একাকার হয়ে যাবে। আমাদের জমির এক ফসলির ওপর আমরা ও আমাদের পরিবার নির্ভরশীল। এখন এই জমি থেকে এক ফোটাও ধান ঘরে তুলতে পারবো না।
একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে গত ৪/৫ মাস পূর্বে পশুর নদী গর্ভে বসতঘরবাড়ি বিলীন হওয়া ভুক্তভোগী অনাদি রায়, বিপুল রায়, সঞ্জিত রায়, প্রদীপ রায়, সমীর রায়, তাপস রায় ও প্রভাষ চন্দ্র রায় বলেন দিনমজুর, নদীতে মাছ শিকার ও কৃষি কাজ করে আমাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। পশুর নদী গর্ভে আমাদের পৈতৃক ভিটে মাটি বসতঘর বাড়ি সহায় সম্বল হারিয়ে এখন আমরা সর্বস্বান্ত। বসত ঘরবাড়ি বাড়ি সহায় সম্বল হারিয়ে এখন বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছি।
বর্তমানে উপজেলার ৩১নং পোল্ডারের পানখালী ফেরিঘাট এলাকা, মৌখালী, কামিনি বাসিয়া, পশ্চিম ঝালবুনিয়া, কাঁকড়াবুনিয়া, বটবুনিয়া, খোনা, খলিসা, চালনা মেরিন প্রোক্টসের দক্ষিণ পাশে, আন্দার মানিক এলাকায় মূল ওয়াপদা বেড়িবাঁধের প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে এ সকল নদী ভাঙন এলাকার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ আতঙ্কের মধ্যে নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছেন।
চালনা পৌর মেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস, নবনির্বাচিত পানখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ সাব্বির আহম্মেদ এবং তিলডাঙ্গা নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন গাজী বলেন, নদীর পানি স্বাভাবিক অপেক্ষা ৪/৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পোল্ডারের ১৫ থেকে ২০টি স্থানের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত ৭ই অক্টোবর পশুর নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে পানখালী ও পৌরসভার সীমানার খলিশা স্লুইস গেটের উত্তর পাশের বেড়িবাঁধটি নদী গর্ভে বিলীন হলে সেখানে ক্লোজার হয়ে যাওয়ার কারণে গত চারদিনে দুই দফায়ও বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি। এ নদী ভাঙনের পাশ দিয়ে বিকল্প বাঁধ নির্মিত না হলে আবারও আইলার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, নদী ভাঙনে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার কারণে প্রাথমিক ভাবে এলাকায় ১২০ হেক্টর জমির আমন ফসল তলিয়ে গেছে। তবে কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা এখনো পর্যন্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৗশলী মো. আশরাফ হোসেন বলেন, খলিশা স্লুইস গেটের উত্তর পাশে নদী গর্ভে বিলীন হওয়া একশ’ মিটার বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ৫ হাজার জিও ব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল আনা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু বিশ্বাস বলেন, খলিশা গ্রামের স্লুইস গেটের উত্তর পাশে ভেঙে যাওয়া বাঁধ ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছি। ওই বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগতসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম বলেন, খলিশা নদী ভাঙন এলাকা আমি গত শনিবার সরজমিন পরিদর্শন করেছি। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনবান্ধব, তাই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল বেড়িবাঁধ টেকসই ও যুগোপযোগী করে নির্মাণ করে উপকূলীয়বাসীদের রক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, কোথাও কোথাও বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে কৃষকের জমি অধিগ্রহণ পূর্বক তাকে ন্যায্যমূল্য দেয়া হবে। আমি আশা করছি খলিশা ভেঙে যাওয়া বাঁধটি আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে বিকল্প বাঁধ দেয়া সম্ভব হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর