× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অলৌকিক

দেশ বিদেশ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার

আনুমানিক দেড় বছর বয়সী শিশুটির বাম হাতের মাংস থেঁতলে গেছে। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এতকিছুর পরও শিশুটি খুব বেশি কান্নাকাটি করেনি। তবে বার বার সে পানি খাচ্ছিল। রেলপথের দুুটি লাইনের মাঝ থেকে মাথা তুলে মা মা ডেকে দাঁড়ানোর সময় হাত ও মাথার ক্ষতস্থানে কাপড় পেঁচিয়ে কোলে তুলে নেন গৃহবধূ হাজেরা খাতুন। গতকাল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর রেল স্টেশনের উত্তরপাশে কাঁটাপুল সংলগ্ন এলাকায় ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুর মা নিহত হন। শিশুটিকে কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশুকে উদ্ধারের ঘটনা এমনভাবেই ব্যাখ্যা করেন গৃহবধূ হাজেরা খাতুন।

নিহত ওই নারীর নাম নাদিরা আর আহত তার শিশু কন্যার জাকিয়া তানহা। নাদিরা আক্তার নেত্রকোনা জেলার সদর থানার বরুনা গ্রামের চান্তু মিয়ার মেয়ে। তার স্বামীর জুয়েল রানার বাড়ি একই জেলার দুর্গাপুর থানার বরবাট্রা গ্রামে। নাদিরার  স্বজনরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  
প্রত্যক্ষদর্শী ও গৃহবধূ হাজেরা খাতুন নাছিমা খাতুন জানায়, ময়মনসিংহগামী বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রীপুর স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলের দিকে যাওয়ার সময় চলন্ত ট্রেনটি বিরতিহীনভাবে হর্ণ দিচ্ছিল। এ সময়ে এলাকার বিভিন্ন ঘরের ছেলে-মেয়েরা মক্তবে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। কারও সন্তান রেলের ওপর চলে গেল কিনা তা দেখার জন্য রেলপথের আশপাশের বাড়ির নারীরা ঘর থেকে বের হয়ে উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছিল। ততক্ষণে ট্রেনটি ঘটনাস্থল অতিক্রম করেছে। পরক্ষণেই দেখা যায় রেলপথের ঠিক মাঝ থেকে রক্তাক্ত এক শিশু মাথা তুলে মা মা বলে ডাকছে। সে ওঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারছিল না। শিশুটির মায়ের বিচ্ছিন্ন মরদেহ শিশুর খুব কাছেই পড়েছিল।
হাজেরা খাতুন বলেন, চলন্ত ট্রেনের নিচে বেঁচে থাকাটা তার কাছে বিস্ময়ের। দৌঁড়ে কাছে গিয়ে দেখতে পান শিশুটির বাম হাতের বাহু থেকে কুনুই পর্যন্ত কিছু মাংস থেতলে পড়ে গেছে। মাথায় রক্তাক্ত জখম হয়েছে। শিশুর মায়ের ওড়না টেনে ক্ষতস্থানসমূহ পেঁচিয়ে ধরে কোলে তোলে নেন। বাসা থেকে এক ফিডার ভর্তি দুধ নিয়ে খাওয়াতে খাওয়াতে সোজা চলে যান শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে নিয়ে যান ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
উদ্ধারকাজে যুক্ত থাকা আবু হানিফা এবং গৃহবধূ হাজেরা খাতুনের স্বামী শ্রীপুর খাদ্য গুদামের শ্রমিক। তিনি বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালে নেয়ার সময় তার ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার চেয়ে বউকে দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পাঠান। এ সময় শ্রীপুর বাজারের সহৃদয়বান অনেকেই চিকিৎসার জন্য কিছু কিছু আর্থিক সহায়তা দেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকগণ কিছুটা চিকিৎসা দিয়ে শিশুটির ক্ষতস্থানে মাংস লাগানোর পরামর্শ দিয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে তারা গাজীপুর অতিক্রম করেন।আবু হানিফা জানান, তার একটিমাত্র ছেলে কামরুল হাসান (৭) রয়েছে। এ শিশুটিকেও তার স্ত্রী ও তিনি সন্তান স্নেহে লালন-পালন করতে চান। যদি বৈধ অভিভাবক এসে নিয়ে যেতে চান সে ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। তবে সৃষ্টির সেবা করতে একজন শিশুমানবের পাশে মানুষ হিসেবে দাঁড়ানোর কর্তব্যটুকু করতে পারার সন্তুষ্টি থাকবে আমৃত্যু। শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হারুনুর রশিদ জানান, সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে আনুমানিক দেড় বছর বয়সী শিশু কন্যাকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয় এক নারী। এতে ঘটনাস্থলেই নারীর শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে মারা যায়। স্থানীয়রা শিশু কন্যাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর