× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেল্টার খুঁজছেন রাহেল সিরাজ

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৪ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার

সিলেটে ‘ঘরহীন’ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ। তার ওপরই সব ক্ষোভ সিলেট ছাত্রলীগের অন্যতম শক্তিধর তেলীহাওর গ্রুপের। মঙ্গলবার রাতে রাহেল সিরাজের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। নিজ বলয় তেলীহাওর গ্রুপের কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ কারণে শেল্টার খুঁজছেন রাহেল সিরাজ। তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চার জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিস্ফোরণোন্মুখ সিলেট।
বিশেষ করে কমিটি গঠনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বেঁকে বসেছে সিলেট আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন- তারা এই কমিটি সমঝে নিতে নারাজ। এ কারণে পদবিপ্রাপ্ত নেতাদের তাদের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছেন না। এমনকি ওই সব নেতাদের গ্রুপ লিডারদের সঙ্গেও একে অপরের যোগাযোগ বন্ধ আছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের অন্যতম শক্তিধর গ্রুপ হচ্ছে তেলীহাওর গ্রুপ। বিগত কমিটিতে এই গ্রুপেরই সদস্য হয়ে সভাপতি ছিলেন শাহরিয়ার আলম সামাদ। তিনি নিজেও বিতর্কহীন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এবারো এই গ্রুপ থেকে সভাপতি পদে শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন জাওয়াদ খান। একই সঙ্গে গ্রুপের ভেতরেও জাওয়াদ খানের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেছিলেন রাহেল সিরাজ। এরপর গ্রুপ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে জাওয়াদ খানকেই সভাপতি প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তটি মেনে নিতে পারেননি রাহেল সিরাজ। গ্রুপ নেতাদের বশে আনতে নানা চেষ্টা-তদবিরের পর নিজ থেকেই লবিং শুরু করেন কেন্দ্রে। এমনকি বিপুল অঙ্কের টাকা রাহেল সিরাজ খরচ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রুপের নেতারা। রাহেল সিরাজ নিজে থেকে সভাপতি পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলায় কপাল পুড়ে জাওয়াদ খানের। এতে গ্রুপের পূর্ণ সমর্থন পেলেও জাওয়াদ সভাপতি হতে পারেননি। আবার সভাপতি পদের প্রতিদ্বন্ধি হয়েও রাহেল সিরাজ সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই রাহেল সিরাজের বিরুদ্ধে মাঠে সরব গ্রুপ নেতারা। বাসায় হামলা, প্রকাশ্য বিক্ষোভ করেছেন। এতে করে ‘গ্রুপহীন’ হয়ে গেলেন রাহেল সিরাজ। সিলেট ছাত্রলীগে তেলীহাওরসহ প্রায় ৭টি গ্রুপ, উপগ্রুপ রয়েছে। তেলীহাওর ছাড়া এখন অন্য বলয়ের আশ্রয় চাচ্ছেন রাহেল সিরাজ। তবে ইতিমধ্যে ঘোষিত কমিটির অপর তিন ছাত্রলীগ নেতা রাহেল সিরাজের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাসায় হামলা হওয়ার পরপরই মঙ্গলবার রাতে তারা ছুটে গেছেন রাহেল সিরাজের আম্বরখানাস্থ বাসায়। এদিকে- রাহেল সিরাজ আশ্রয় চাওয়ায় তেলীহাওরের বিরোধী বলয়ের নেতারা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। তবে- অনেকেই এরই মধ্যে রাহেল সিরাজকে প্রশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। দর্শন দেউরি গ্রুপের নেতারা এখন রাহেল সিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সরাসরি তারা তাকে গ্রুপে নিতে চান না। এজন্য আরও একটি উপ গ্রুপের সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করে রাখতে চাইছেন। দর্শন দেউরি ও আর তেলীহাওর গ্রুপের নেতাদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এ কারণে তারা যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তবে এখনো ওই গ্রুপ থেকে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। আবার টিলাগড়ের রঞ্জিত বলয়ের নেতারাও রাহেল সিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কারণ রঞ্জিত বলয় সভাপতি পেয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পেলে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের পুরোটাই বলয়ের দখলে চলে যাবে। এ নিয়েও ভাবছেন গ্রুপের নেতারা। ছাত্রলীগের নেতারা জানিয়েছেন, রাহেল সিরাজ এখন শেল্টার চাচ্ছেন। গ্রুপ বিদ্রোহী হওয়ার কারণে তার রাজনীতি প্রশ্নের মুখে। এজন্য শেল্টার পেলেই কিছুদিনের মধ্যে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হবেন বলে জানিয়েছেন নেতারা।

রাহেল সিরাজের বাসায় হামলার অভিযোগ: মঙ্গলবার রাতে নগরীর আম্বরখানা বড়বাজারস্থ রাহেল সিরাজের বাসায় ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। রাহেল সিরাজের ভাই গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রুমেল সিরাজ অভিযোগ করেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরীয়ার আলম সামাদ, মহানগর শাখার সাবেক সহ-সভাপতি সুজেল তালুকদার ও যুবলীগ নেতা দুলাল আহমদের নেতৃত্বে ১০-১৫টি মোটর সাইকেলে ৩০-৩৫ জন যুবক তার বাসায় হামলা চালান। এ সময় বাইরে পেয়ে তার ওপরও হামলার চেষ্টা করা হয়। তিনি দৌড়ে বাসায় ঢুকে আত্মরক্ষা করেন। এরপর হামলাকারীরা বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান। তবে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তেলিহাওর গ্রুপের শাহরিয়ার আলম সামাদ।

টাকা লেনদেনের অভিযোগ: সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে টাকা লেনদেনের অভিযোগ করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ। প্রকাশ্যই তিনি এ অভিযোগ করেন। তার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিলেটে তোলপাড় চলছে। সামাদ বলেন, ‘আমি সর্বশেষ জেলা কমিটির সভাপতি। কমিটি গঠন নিয়ে গত চার বছরের নানা রকম চেষ্টার আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী। চার বছর পর মাত্র চারজনকে দায়িত্ব দিয়ে নতুন নেতৃত্ব কেনা হয়েছে। এতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ করার আগে সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়টি তুলে ধরবো।’

নাজমুলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ: জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়া নাজমুল ইসলাম এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের বলয় নেতা বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনার পর নাজমুলের সঙ্গে ওই অপরাধীদের বেশ কয়েকটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এমন একজনকে করা হয়েছে। আপনারা সবাই জানেন, কিছুদিন আগে এমসি কলেজে আলোচিত যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, যারা জড়িত ছিল তাদের মূলহোতা সে। তবে নাজমুল ও তার বলয়ের নেতারা সেটি অস্বীকার করেছেন। তারা জানিয়েছেন- এমসি কলেজের ধর্ষণকারীদের ব্যবস্থা নিতে তারাও রাজপথে সোচ্ছার ছিলেন।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর